বিচ্ছিন্ন জাতি লড়তে জানে না 
প্রকাশ: ২০ জুন, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

|| মাসউদুল কাদির ||

৩৬ জুলাইয়ে সফল একটি বিপ্লবের পর বিচ্ছিন্ন এখন জাতি। ভিনদেশের সঙ্গে যুদ্ধ লাগলে আমরা আবার একত্র হব! এমন চিন্তা কীভাবে করতে পারি? যাদের রক্ত রেশে কেবলই দুর্নীতির বিষবাষ্প। স্বাধীনতার ৫০টি বছর পার করে প্রিয় রাজনীতিবিদগণ কেউ বেগমপাড়া ঘরে তুলেছে, আবার কেউ সুইচ ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়িয়েছে। 

সেদিন একটি ভিডিও দেখলাম, জাপানের একজন শিশু একটি সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিল। সাইকেলটির টান করতে গিয়ে একটি গাড়ির গ্লাসে লেগে যায়। গ্লাসটি ফেটে যায়। অনেকক্ষণ সে দাঁড়িয়ে ছিল মূল মালিকের প্রত্যাশায়। কখন গাড়ির মালিক আসবেন, নিজের ভুলের কথা, অপরাধের কথা তার কাছে তুলে ধরবেন। দুঃখজনক হলেও অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরেও গাড়ির মালিক আসছিলেন না। পরে লোকটি আশপাশ থেকে একটি কাগজ এবং কলম সংগ্রহ করলেন। নিজের ভুলের কথা এবং মুঠোফোন নম্বর দিয়ে গাড়ির গ্লাসে লাগিয়ে দিলেন। 

গল্পটা এরপরে কী হয়েছিল আর বলার দরকার নেই। জাতি হিসেবে আমরা বাঙালি, বাংলাদেশি। এখানকার মুসলমান আর হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মের কারোর ভেতরেই সাধারণত এমন মানবিকতা দেখা যায় না। আমরা বাংলাদেশি দেখি, কারো যদি এমন ক্ষতি আমরা করে ফেলি, যত দ্রুত পারা যায় আমরা সেখান থেকে সরে যাই। আপনি ভাববেন বা ভাবছেন,  আমরা মুসলমানরা তাহলে ভালো কিছু করি? না। অহরহ মুসলিম গাড়ি চালকগণ কাউকে চাপা দিয়ে দ্রুত সরে যায়। একটা মুরগি চাপা দিয়েও তারা পালিয়ে যায়। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, পেছনে বসে থাকা প্যাসেঞ্জারও বলেন, তাড়াতাড়ি যাও তাড়াতাড়ি যাও। 

মানে, অপরাধের সঙ্গে সবাই সমান। বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। যেহেতু, আমরা বাঙালি মানসিকতায় একই ধরনের, তাই ড্রাইভার আর পেসেঞ্জার এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। চিন্তায়  ও আদর্শগত দিক থেকে সবাই আমরা একই ধরনের। একই চিন্তা লালন করে। 

আলোচনাটা শুরু করেছিলাম যুদ্ধ নিয়ে। কুরআন বলছে, তোমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করো। আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেই। রাষ্ট্রীয়ভাবে যেমন নেই, ব্যক্তিগত উদ্যোগেও নেই। বিস্ময়কর হলো, এ জাতীয় বয়ান বক্তৃতাও নেই। অস্ত্রশস্ত্রে, যোগ্য সেনা কর্মী তৈরিতে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। বাংলাদেশের নাগরিক যদি যোগ্যতার মানদণ্ডে উন্নীত হয়, সমগ্র বিশ্বের জন্যই তাকে লাগবে। কারণ আমাদের সন্তানরা, বিশ্বের আনাচে-কানাচে এমন সস্তায় নিজেদের সময় ব্যয় করছে, কাজ করছে- এমনটা আর কোথাও নেই। আর কোনো দেশের নাগরিক এত সস্তায় বিক্রি হয় না। অবশ্য যোগ্য কর্মী বিদেশে পাঠানোর জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ভালো কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ট্রেনিংপ্রাপ্ত, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোগ্য নাগরিক বিদেশে পাঠানোর  উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। 

বাংলাদেশ চাইলে উন্নত দেশের সঙ্গে চুক্তি করে তাদের পুলিশে সেনা সদস্য হিসেবে চাকরি করানোর উদ্যোগ নিতে পারে। 
আমরা বাংলাদেশের মানুষ অল্পতেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। ভাই থেকে ভাই, বোন থেকে বোন- বিচ্ছিন্নতা আমাদেরকে পিছিয়ে দেয়। পবিত্র ইসলামের চর্চা থেকেও আমরা অনেক দূর সরে যাই। 

তাহলে বলুন, আমরা অন্য দেশের সঙ্গে লড়াইয়ে কীভাবে একত্র হব? কেবল আবেগ দিয়ে হয় না। দুধ দিয়ে রাজার পুকুর টইটুম্বুর চাইলে বাস্তবতাও লাগে।

লেখক: আলেম সাংবাদিক, কবি ও কথাসাহিত্যিক

এসএকে/