ছবি তোলা, রাখা ও পোস্টারে ছবির বিধান
প্রকাশ: ১৭ জুন, ২০২৫, ০৬:১৪ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

মুফতী কাজী সিকান্দার

জীবন বৈচিত্র্যময়। অজস্র কাজের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় জীবনের চাকা। এ এক জীবনে রয়েছে মানুষের সহস্র স্বপ্ন ও আশা। ইচ্ছা ও চাহিদা। মানুষ নিজ সত্তাকে প্রকাশ করতে ভালোবাসে। নিজে অমর হয়ে থাকতে চায়। অপর দিকে একদল মানুষ রয়েছে নিজের পছন্দের মানুষকে, নিজের সমর্থিত ব্যক্তিকে সব মানুষ থেকে ঊর্ধ্বে তুলে আত্ম তৃপ্তি পেতে চায়। এ সব চাওয়া ও ভক্তিতেই যুগের কালপ্রবাহে তৈরি হয়ছে মূর্তি বা ছবি। যা পরবর্তী সময়ে শিরকে রূপান্তরিত হয়েছিল। 

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ একটি আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। তাতে সব সমস্যার রয়েছে সমাধান। বর্তমানে ছবির প্রচলন অতি বেড়ে যাচ্ছে। এ ছবি বিষয়ে ইসলাম কী বলে? বা তার ফতোয়া কী এ বিষয়ে আজকের আলোচনা।

ছবি তোলা হারাম

ইসলামের যেকোনো বিধান রচনা করার ক্ষেত্রে একটি মূল নীতি রয়েছে- প্রথমে উম্মতকে সহজে বোঝানো। তারপর তা যতবড় পাপ তার জন্য তত বেশি কঠোরতা করা এবং শাস্তির ঘোষণা করা। এ নীতিতে আমরা দেখেতে পাই ছবি বিষয়ে আল্লাহর রাসুল বলেন- হযরত আবু ত্বালহা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ঘরে কুকুর ও ছবি থাকে সে ঘরে রহমত ও বরকতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৪৯)

এতটুকু নির্দেশনাই যথেষ্ট ছিল মুসলমানরে জন্য যে, তারা কোন প্রাণীর ছবি তুলবে না বা তা প্রিন্ট দেবে না ও ঘরে রাখবে না। কিন্তু এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো কঠোর করে বলেন, এই ছবি নির্মাতাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে এবং বলা হবে, যা তুমি সৃষ্টি করেছ তার প্রাণ দাও এবং তিনি আরো বলেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৮১. মুসলিম : হাদীস ২১০৯)

হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাযি.) বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলতে শুনেছি, কিয়ামত দিবসে সবচেয়ে কঠিন আজাবের সম্মুখীন হবে ছবি অঙ্কনকারীরা। (সহিহ বুখারি: হাদীস ৫৯৫০)

রাসূল (সা.)-এর এ নির্দেশনায় ছবি তোলা এবং তা রাখা হারাম সাব্যস্ত হয়। বাহরুর রায়েক, রদ্দুল মুহতারসহ সব ফতোয়ার কিতাবে উল্লেখ রয়েছে ছবি তোলা, অঙ্কন করা ও প্রিন্ট দেয়া হারাম এ বিষয়ে সব জমহুর ওলামায়ে কেরাম একমত। সুতরাং স্থির চিত্র- ছবি তোলা এবং রাখা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য হারাম। এ কাজ থেকে সবাই বিরত থাকা অবশ্যক। তবে প্রকৃতির ছবি অর্থাৎ প্রাণহীন ছবি, দৃশ্য এগুলো তোলা ও রাখা জায়েয।

ছবি দেখলে করণীয়

বাইরে বা কোথাও ছবি দেখার সাথে সাথে তা ছিঁড়ে ফেলতে হবে, বা মিটিয়ে দিতে হবে। যদি কেউ না বুঝে ছবি তোলে সেই ছবি কোথাও লাগিয়ে রাখে বা কোথাও ছবি লটকানো হয় তখন কী করণীয় এ বিষয়ে রাসূল সা. এর সরাসরি নির্দেশনা রয়েছে। 

আবূল হাইয়্যাজ আল আসাদী (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আলী (রাযি.) বলেন, আমি কি তোমাকে এমনভাবে পাঠাব না, যে কাজে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হচ্ছে কোন (জীবের) প্রতিকৃতি বা ছবি দেখলে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে এবং কোন উঁচু কবর দেখলে তা ভেঙ্গে দিবে। (সহীহ মুসলিম : হাদীস ২১৩৩/৯৬৯)

এখানে তামসিল প্রতিকৃতি বা মূর্তির কথা রয়েছে, তমসীল আরেক অর্থ ছবি সে হিসেবে মূর্তির হুকুমই ছবির হুকুম। তবে অন্য রেওয়াতে ‘তাসওয়ীর’ অর্থাৎ ছবির কথা রয়েছে। অর্থাৎ যখন ছবি দেখবে তা সাথে সাথে ছিড়ে ফেলবে।

’হযরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাবূক যুদ্ধের) সফর থেকে ফিরে আসলেন। আমি আমার কক্ষে পাতলা কাপড়ের পর্দা টাঙিয়েছিলাম। তাতে ছিল প্রাণীর) অনেকগুলো ছবি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এটা দেখলেন, তখন তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন- কিয়ামতের দিন সে সব লোকের সব থেকে শক্ত আযাব হবে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির (প্রাণীর) সদৃশ তৈরী করবে। ’হযরত আয়িশা (রা.) বলেন- এরপর আমরা ওটা দিয়ে একটি বা দু’টি বসার আসন তৈরী করি। (বুখারী : হাদীস ৫৯৫৪)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী ’হযরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একটি বালিশ বা গদি কিনে এনেছিলাম, যার মধ্যে ছবি ছিল। যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ছবিটি দেখলেন, তিনি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে গেলেন; ভেতরে প্রবেশ করলেন না। আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁর চোখে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় ব্যাপার। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর কাছে তওবা করছি এবং তাঁর রাসূলের কাছে ফিরে আসছি। আমি কী অন্যায় করেছি? তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বালিশ কিসের জন্য? আমি বললাম, এটা আপনার জন্য খরিদ করে এনেছি, যাতে আপনি বসতে পারেন এবং হেলান দিতে পারেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই ছবি নির্মাতাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি প্রদান করা হবে এবং বলা হবে, যা তুমি সৃষ্টি করেছ তার প্রাণ দাও এবং তিনি আরও বলেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (বুখারী : হাদীস ৫১৮১)

এ জাতীয় হাদিসের ব্যাপকতাকে সামনে রেখে ইমাম নববী, ইবনে হাজার আসকালানি, বদরুদ্দিন আইনি ও মোল্লা আলি আলকারি প্রমুখ হাদিসবেত্তারা বলেছেন, প্রাণীর যে কোনো ধরনের ছবি বানানো ও তার ব্যবাহর নাজায়েয ও হারাম; চাই তার সম্মান করা হোক বা না হোক। হ্যাঁ, ছবির সম্মান করা তো আরও ভয়াবহ পাপের কাজ, এটা এক ধরনের শিরকতুল্য গোনাহ। সুতরাং হাদীস অনুযায়ী ছবি ছিড়ে ফেলতে হবে বা মিটিয়ে দিতে হবে। 

মাথাহীন ছবি

প্রিন্টকৃত ছবির আকৃতি অর্থাৎ চেহরা বুঝা না গেলে, চোখ, নাক, কান ইত্যাদি স্পষ্ট না হলে অথবা ছবির মাথা মুছে দিলে তা আর ছবির হুকুমের মধ্যে থাকবে না। যেমন বর্ণিত হয়েছে- ‘আপনি মূর্তির মাথা কেটে দিতে বলেন, ফলে উহা গাছের আকৃতি হয়ে যাবে।’ (আবু দাউদ)

ইবনুল কুদামা রহ. বলেন- যদি ছবির মাথা কেটে নেয়া হয় তাহলে আর পছন্দনীয় হওয়ার বিষয়টি থাকবে না। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মাথাই হল, ছবি। যদি মাথা কেটে নেয়া হয় তাহলে আর ছবি থাকলো না। এমন কথা ইকরিমা রহ. থেকেও বর্ণিত হয়েছে। (আল মুগনি খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ১১১)

সুতরাং এতে ষ্পষ্ট হয়- যদি কোন ছবির মাথা ঢেকে দেয়া হয় বা কেটে ফেলা হয় তবে তা আর ছবির মূল আকৃতি হিসেবে অবশিষ্ট থাকে না। তখন তা এ হুকুমের আওতায় পড়বে না। কোথাও ছবি থাকলে তার মাথা কালি দিয়ে আমরা মুছে দিতে পারি।

বাধ্যগত ছবির করণীয়

সাধারণত ছবি প্রিন্ট করা হারাম। এখন প্রশ্ন আসবে পাসপোর্ট বা আইডি কার্ড তৈরি করতে অবশ্যই ছবি তুলতে হয় এবং সেই ছবি প্রিন্ট করতে হয় এক্ষেত্রে বিধান কী? এর উত্তরে প্রথমত রাষ্ট্রের উচিত ছবি ছাড়া ফিঙ্গারের মাধ্যমে শনাক্ত করার ব্যবস্থা করা। এটি করা সম্ভব।

যদি এমন না করা হয় তখন রাষ্ট্রীয় কাজের জন্য এটি অপারগ ও বাধ্যগত হয়ে যায়। মানুষ যেখানে বাধ্য হয়ে পড়ে তখন যেকোন বিধান তার ক্ষেত্রে শীতিলতা অবলম্বন করা হয়। মৃত প্রাণী খাওয়া হারাম, যখন তার কাছে এ মৃত প্রাণীর গোস্ত ছাড়া আর কিছুই না থাকে তখন তা খাওয়া ততটুকু বৈধ হয় যতটুকু খেলে তার প্রাণ বাঁচবে।

ঠিক ছবির ক্ষেত্রেও ততটুকু তার জন্য তোলা জায়েজ হবে যতটুকু সে আটকা পড়েছে। সরকারী কাজে ছবি দেয়া বাধ্যগত বিধায় কেবল এক্ষেত্রে ছবি তোলা বৈধ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন- তবে যে নিরুপায় হয়ে, ইচ্ছাকৃত অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন ব্যতীত, (প্রয়োজন মুতাবেক গ্রহণ করবে) তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা নাহল : আয়াত ১১৫)

এখানে আরেকটি বিষয় তা হলো তাকওয়া।  তাকওয়া জায়েযের উর্ধে। কোন ব্যক্তি যদি ছবি না তোলে এবং সরকারী কাজের সুবিধা গ্রহণ করতে না চায় কেবল ছবির কারণে, তবে তা ধর্মান্ধতা নয় বরং এটিই তাকওয়া। এটি প্রশংসনীয় কাজ।

এক্ষত্রে মহিলার নিজের চেহারা ততটুকু খুলতে পারবে যতটুকু একটি ছবি তোলার প্রয়োজন পড়ে। উত্তম হলো মহিলাদের ছবি মহিলা দ্বারা উঠানো। (সূরা নাহল : আয়াত ১১৫, কাওয়ায়েদুল ফিকহ, কায়দা নং-১৭০, ফাতহুল-মুলহিম ৪/১৬৪, বুখারীর হাসিয়া : ১/৪০৩, ফাতাওয়ায়ে সিরাজিয়া ৭৩)

ডিজিটাল বা অনলাইনে ছবি

ছবি তোলা ইসলামী শরীয়ত কেবল প্রয়োজনে অর্থাৎ বাধ্যগত নিরুপায় অবস্থায় জায়েয বলে। এর বাইরে ছবি তোলা জায়েয নেই। চাই তা ডিজিটাল হোক না প্রিন্ট হোক। তবে ডিজিটাল ছবির বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের আরেকটি গবেষণা পাওয়া যায়। তাদের মত ডিজিটাল বা অনলাইনের ছবি মূলত প্রিন্ট হয়ে আসার আগ পর্যন্ত কোনো অস্তিত্ব নেই। তা আয়নার সামনে দাঁড়ালে যেমন ছবি দেখা যায়, আবার অদৃশ্য হয়ে যায় তেমিন ডিজিটাল বা অনলাইন ওপেন করলে তা দেখা যায় আবার তা সবসময় চোখের সামনে থাকে না। অথবা পানির ওপর কারো ছবি ভেসে উঠার মতো হলো ডিজিটাল ছবি। সুতরাং ডিজিটালের ছবি নিষেধাঙ্গার আওতায় পড়বে না। মূলকথা হলো- ডিজিটাল ছবিকে যদিও স্থির ছবি ধরা হয় না তবুও এমন ছবি তোলা থেকেও বিরত থাকা তাকওয়া, আওলা বা উত্তম এতে সবাই একমত। 

পোস্টারে ছবি

বর্তমানে প্রচারের উদ্দেশ্যে, পরিচিতির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পোস্টারে প্রিন্টকরা ছবি দিতে দেখা যাচ্ছে। এখানে কেউ কেউ দলীল পেশ করতে চান, প্রয়োজন। আর প্রয়োজন হলো- পরিচিতি বা প্রচার। সহিহ বুখারি-এর ৫৯৫০ ও ৫১৮১ হাদীস, সহীহ মুসলিম-এর ২১০৯ হাদীসসহ আরো অসংখ্য হাদীস দ্বারা আমাদরে কাছে স্পষ্ট হয় যে- ছবি তোলা বা রাখা সর্বাবস্থায় হারাম। কিন্তু নিরুপায় অবস্থায় কেবল জায়েজ। নিরুপায় অবস্থায় ছবি তোলা জায়েয এ মাসয়ালা কেবল ছবির ক্ষেত্রে নয়; বরং ইসলামের সব বিধানের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। মৃত প্রাণী সর্বাবস্থায় হারাম। মদ সর্বাবস্থায় হারাম তবে নিরুপায় অবস্থায় জায়েয। ঠিক তেমনি ছবিও সর্বাবস্থায় হারাম নিরুপায় অবস্থায় জায়েয। এখন কেবল প্রচার ও পরিচিতির উদ্দেশ্যে ছবি পোস্টারে দেওয়া কতটুকু প্রয়োজন বা নিরুপায় তা নির্ণয় করা প্রয়োজন। 

ইসলাম সব প্রয়োজনে হারামকে হালাল করার অনুমতি দেন না। নিরুপায় প্রয়োজনকেই কেবল গ্রহণ করে। অন্য কোন উপায় না থাকলে তখন শরীয়ত  হারাম বস্তুকে জায়েয বলেন। মানুষের জন্য টাকা প্রয়োজন, এ প্রয়োজন বিধায় তাই সে সুদ খেতে পারবে না। বরং তাকে তার বিপরীত উপায় রয়েছে ব্যবসা করা, বা অন্য কোন হালাল পন্থা অবলম্বন করা। হ্যাঁ, যদি কারো কাছে কেবল সুদরে টাকাই রয়েছে অন্য কোন উপায় নেই তখন এ সুদের টাকা তার ব্যবহার করা বৈধ হবে। এখন পোস্টারে ছবি দেয়া কি এমন প্রয়োজন যা নিরুপায়ের পর্যায়? তালাশ করলে দেখতে পাওয়া যায় তা নিরুপায়ের পর্যায় নেই।

পোস্টারে ছবি না দিলে সরকারি কোনো কাজে বাধাগ্রস্ত হবে এমন বিষয় নেই। সুতরাং তা নিরুপায় নয়। 

দ্বিতীয়ত পরিচিতি- নিজের নামের পরিচিতি এবং যদি ভোটপার্থী হয়- তবে মার্কার পরিচিতি ও দলের পরিচিতি ইত্যাদির দ্বারা ব্যক্তি পরিচিতি হওয়া সম্ভব এবং হচ্ছেও। এখানে পরিচিত হওয়ার উপায় বা পথ ও পন্থা বিভিন্ন দেখতে পাচ্ছি। 

সুতরাং ছবি পোস্টারে প্রিন্ট করে দেয়ার মত নিরুপায় প্রয়োজন এখানে নেই। এ হিসেবে পোস্টারে চাই তা ভোটের প্রয়োজনে হোক বা ওয়াজ মাহফিলে বক্তার পরিচিতির জন্য হোক ছবি দেওয়া জায়েয নেই।

দ্বিতীয়ত এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ করার বিষয়- তা হলো এ ভোটের পদ্ধতি সুন্নাহ সম্মত কি না এখানে রয়েছে আলেমদের ভেতর মতভেদ। এ পদ্ধিতিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা আছে কি না? ইতিপূর্বে তার কোন নজির আমাদের সামনে আছে কি না? গণতন্ত্রের অনেক বিষয় ইসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত। সুতরাং এমন বিষয়কে উপলক্ষ করে একটি হারাম বিধানে শরীয়তের শীতিলতা খোঁজা ঠিক হবে কি না? ভাবার বিষয়। 

আমরা এ হাদীসের দিকে তাকালে তা আরো স্পষ্ট হয়- আবূল হাইয়্যাজ আল আসাদী (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আলী (রাযি.) বলেন, আমি কি তোমাকে এমনভাবে পাঠাব না, যে কাজে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হচ্ছে কোন (জীবের) প্রতিকৃতি (মূর্তি) বা ছবি দেখলে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে এবং কোন উঁচু কবর দেখলে তা ভেঙ্গে দিবে। (সহীহ মুসলিম : হাদীস ২১৩৩/৯৬৯)

এখন যদি কেউ বলেন- রাস্তার মোড়ে মোড়ে মূর্তি তৈরি করা হোক পরিচিতির জন্য তখন কি ওলামায়ে কেরাম তার বৈধতার হুকুম দেবে? নাকি ভেঙ্গে দেয়ার হুকুম দেবে। উঁচা কবর রাখার হুকুম দেবেন ওলামায়ে কেরাম নাকি ভেঙ্গে দেয়ার হুকুম দেবেন? যদি মূর্তি ভেঙ্গে দেয়ার হুকুম আসে, যদি উঁচা কবর সমান করার হুকম দেয়া হয় তবে রাস্তার ধারে, হাঁটে বাজারে যেখানে ছবি কৃত পোস্টার লাগানো রয়েছে এর কী হুকুম দেবেন ওলামায়ে কেরাম? সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের উচিত পোস্টারে ছবি দেয়া থেকে বিরত থাকা এবং যাবতীয় ছবি তোলা থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফীক দান করুন।

লেখক: প্রধান মুফতী, ইসলাহ ফতোয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, মারকাযুল ইসলাহ ঢাকা

এমএইচ/