সরকারের বিচার এবং সংস্কার গতিতে আমরা সন্তুষ্ট নই: নাহিদ
প্রকাশ: ২৪ মে, ২০২৫, ০৩:৫৪ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কার বিষয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের গতিতে সন্তুষ্ট নয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে সরকারকে দলটি সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে।

শনিবার (২৪ মে) রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম।

সরকারের কাজে সন্তুষ্ট কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বিচার এবং সংস্কার বিষয়ে যে গতিতে কার্যক্রম চলছে, আমরা (এনসিপি) তাতে সন্তুষ্ট নই। সেই সমালোচনা সরকারের প্রতি আমাদের রয়েছে। একইসঙ্গে সেই সহযোগিতাও রয়েছে। আমরা আমাদের দাবিগুলো নিয়ে রাজপথে থাকছি, সরকারকে চাপ প্রয়োগও করছি৷ কিন্তু এটা অবশ্যই দেশ ও জনগণের স্বার্থে। সরকারকে কোনো ধরনের বাধাগ্রস্ত তো আমরা করছি না। আমরা চাই, কোনো পক্ষই সরকারের কাজে বাধা হয়ে না দাঁড়াক৷ সরকারের সমালোচনা ও সহযোগিতা করুক এবং সরকারও তার কাজের গতি বৃদ্ধি করুক, জনগণের সামনে আরো স্পষ্ট করুক তার কাজের গতিধারা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বারবার অনৈক্য ও বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়েছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও বাংলাদেশবিরোধী নানা ধরনের শক্তি। বাংলাদেশ যাতে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে না পারে, এ কারণে বাংলাদেশকে কখনোই ঐক্যবদ্ধ হতে দেওয়া হয়নি। ৫ আগস্টের পরেও সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ায় নানা ধরনের অপপ্রচার চলছে, আওয়ামী লীগ নানা ধরনের অপপ্রচার করছে। ফলে বাংলাদেশের এই অনৈক্যের পিছে মূলত রয়েছে আওয়ামী লীগ। কারণ আওয়ামী লীগ চায় না এই ঐক্য থাকুক। ফলে বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত রাখতে হলে আমাদের সেই ঐক্যের জায়গাটা সব সময় ধরে রাখতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি নিজের জায়গা থেকে সব সময় দায়িত্বশীল ভূমিকা ও আচরণ পালন করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। 

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আমরা একটি নতুন সংবিধান চাই, সেটার জন্য গণপরিষদ নির্বাচন চাই, আমরা মৌলিক সংস্কারের জন্য জুলাই সনদ চাই, আমরা বিচার চাই। কিন্তু বিএনপি সব সময় নির্বাচনের কথা বলে গেছে। একটি জাতীয় নির্বাচনই গণঅভ্যুত্থানের পরে আমাদের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা নয়। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা আমাদের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা, কিন্তু একমাত্র নয়। রাজনৈতিক মতামত, ভিন্নমত, আদর্শ থাকতেই পারে, কিন্তু দেশ ও জনগণের স্বার্থে আমাদের ঐক্যের জায়গায় যেতে হবে। সেজন্য আমরা যে কোনো সময়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল- আদালত, এনবিআর, যমুনার সামনে। ড. ইউনূস সেই প্রেক্ষিতে মনে করছেন, যদি ওনাকে জিম্মি করা হয়, চাপ প্রয়োগ করে দাবি আদায় করা হয়, সেটি সম্ভব না, উনি এটাতে সম্মত নন। গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তীতে দেশের কিছু মৌলিক পরিবর্তনের জন্য উনি দায়িত্ব নিয়েছেন বলে মনে করেন। এটাই জনগণের প্রত্যাশা। সেই মৌলিক কাজগুলো বিচার, সংস্কার- এই বিষয়গুলো যদি উনি করতে না পারেন তাহলে আসলে ওনার থেকে কি লাভ? উনি যে প্রতিশ্রুতির জায়গা থেকে এসেছিলেন, সেটি উনি রক্ষা করতে পারছেন না। 

দেশে যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে, রাজনৈতিক দলগুলো ও বিভিন্ন পক্ষ যদি তাদের কার্যক্রম এভাবে চলমান রাখে, তাহলে ওনার পক্ষে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। যদি নির্বাচনের জন্য এভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হতে যাচ্ছে এটাও তিনি সন্দেহ পোষণ করেছেন। ফলে এর দায়ভার উনি নিতে চান না। আমাদের জায়গা থেকে আমি বলেছি, ওনাকে দায়িত্বে থাকতে হবে। কারণ জনগণের কাছে ওনার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ফলে উনি রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধান করুক। সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে বলুক। জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে এই বার্তা দিয়েছি, যাতে সবাই দেশের এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং এটি ইতিবাচক সিদ্ধান্তের দিকে যায়।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক-এগারোর বন্দোবস্ত বলতে বুঝায় সেনা সমর্থিত ও বিদেশি শক্তির প্রভাবে দেশে জনগণ ও গণতন্ত্র বিরোধী একটি সরকার। আমরা ৫ আগস্ট থেকে বারবার এটি স্পষ্ট করেছি, গণঅভ্যুত্থানের সমর্থনে জনগণের পক্ষের সরকার হতে হবে, যারা গণতন্ত্র ও সংস্কার নিশ্চিত করবে। সেনাবাহিনীর প্রতিও আমাদের শ্রদ্ধা আছে। সেনাবাহিনী দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া তার কাজ নয়। তার কাজ দেশের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ক্রাইসিস মোমেন্টে তারা এখন রাস্তায় আছে, আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা গণপরিষদ ও আইনসভার নির্বাচনটি চাই। যেটা আমাদের নতুন সংবিধান এবং ট্রানজেশন নিশ্চিত করবে৷ যেহেতু এখন মেয়র বিষয় নিয়ে আদালতের বিভিন্ন ধরনের রায় আসছে এবং সেটা নিয়ে আন্দোলন ও এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরব হচ্ছে, ফলে আমরা মনে করি অতিদ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব। সেটার জন্য নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত। আর প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বর থেকে জুনের যে টাইমফ্রেম দেওয়া হয়েছে আমরা তো সেটা সমর্থন করেছি৷ আমরা বলছি, তার আগে জুলাই ঘোষণাপত্র, বিচার, সংস্কার নিশ্চিত করে আমরা জাতীয় নির্বাচনের দিকে যেতে পারি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন যে পরিস্থিতি তাতে সবার আগে প্রয়োজন একটি স্থিতিশীলতা। সরকারের এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে একটি স্থিতিশীল জায়গায় যাওয়া এবং সব রাজনৈতিক দলের সরকারের প্রতি সেই সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব ব্যক্ত করা।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বিচার এবং সংস্কার বিষয়ে যে গতিতে কার্যক্রম চলছে, আমরা (এনসিপি) তাতে সন্তুষ্ট নই। সেই সমালোচনা সরকারের প্রতি আমাদের রয়েছে। একইসঙ্গে সেই সহযোগিতাও রয়েছে। আমরা আমাদের দাবিগুলো নিয়ে রাজপথে থাকছি, সরকারকে চাপ প্রয়োগও করছি৷ কিন্তু এটা অবশ্যই দেশ ও জনগণের স্বার্থে। সরকারকে কোনো ধরনের বাধাগ্রস্ত তো আমরা করছি না। আমরা চাই, কোনো পক্ষই সরকারের কাজে বাধা হয়ে না দাঁড়াক৷ সরকারের সমালোচনা ও সহযোগিতা করুক এবং সরকারও তার কাজের গতি বৃদ্ধি করুক, জনগণের সামনে আরো স্পষ্ট করুক তার কাজের গতিধারা।

মানবিক করিডর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, মানবিক করিডরের বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তারপরে যেন সরকার সিদ্ধান্তে আসে। জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, মানবিক করিডরের বিষয় জনগণের পক্ষে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের ধোঁয়াশা যেন না থাকে। করিডর ইস্যুতে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা দুই ধরনের বক্তব্য শুনেছি। যেটা স্পষ্টই একটা ধোঁয়াশার জায়গা তৈরি করেছে। পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হয়েছে যে, করিডর নয় সেখানে ত্রাণ আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আমরা সেখানেও বলেছি, ত্রাণ আদান-প্রদানের ব্যাপার হলেও সেই ত্রাণ আদান-প্রদানটি কার হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকবে। সেটা কীভাবে পরিচালিত হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, মানচিত্রে কোনো ধরনের হুমকি সেখানে তৈরি হবে কিনা। প্রত্যেকটি বিষয় পরিষ্কার করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তারপরে সরকার যেন সিদ্ধান্ত নেয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ।

এমএইচ/