এবার পাকিস্তানের বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করল ভারত
প্রকাশ:
০১ মে, ২০২৫, ০৯:১৪ সকাল
নিউজ ডেস্ক |
![]()
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা থামছে না। সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার ভারত সরকার জানিয়েছে, পাকিস্তানি বিমান আর ঢুকতে পারবে না ভারতের আকাশসীমায়। সামরিক বিমান তো বটেই, পাকিস্তান রেজিস্টার্ড, পরিচালিত বা লিজ নেওয়া বাণিজ্যিক বিমানগুলির জন্যও ভারতের দরজা আপাতত বন্ধ। গতকাল ৩০ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত পাকিস্তানের কোনো বিমান ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করতে পারবে না। এই নির্দেশকে পাকিস্তানের পদক্ষেপের পালটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। পহেলগাম হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইতিমধ্যেই ভারতের বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। এ বার ভারতের এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ করলো। ভারতীয় সেনা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ২৯-৩০ এপ্রিল রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পোস্টগুলি জম্মু ও কাশ্মীরের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নওশেরা, সুন্দরবানি এবং আখনুর সেক্টরের বিপরীতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে বিনা প্ররোচনায় ছোট অস্ত্রের গুলিবর্ষণ শুরু করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্রুত এবং আনুপাতিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়।
এরই মধ্যে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানিয়েছেন, তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে ভারত। এর আগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেনাবাহিনীকে ‘সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা' দেওয়ার ঘোষণা দেন, যাতে তারা পহেলগাম হামলার প্রতিক্রিয়া জানানোর পদ্ধতি, লক্ষ্য ও সময় স্বাধীনভাবে নির্ধারণ করতে পারে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই অঞ্চলের স্বঘোষিত বাদী, বিচারক ও শাস্তিদাতা হিসেবে ভারত যে ধরনের ভূমিকা রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তা আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি।’ তিনি আরো জানান, পাকিস্তান নিজেই গত দুই দশক ধরে সন্ত্রাসবাদের শিকার এবং বিশ্বব্যাপী যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে আসছে। তারার আরো বলেন, পহেলগাম হামলার পর পাকিস্তান দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ভারত সংঘাত ও অযৌক্তিকতার পথ বেছে নিয়েছে, এর পরিণতি গোটা অঞ্চলের জন্য তো বটেই, এমনকি সারা বিশ্বের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তিনি সতর্ক করে বলেন, পাকিস্তান অবধারিতভাবে ভারতের যে কোনো সামরিক আগ্রাসনের জবাব দেবে । পাশাপাশি, তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও আহ্বান জানান, যেন তারা বোঝে যে এবার যদি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বাধে, তাহলে এই যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির সম্পূর্ণ দায়ভার ভারতের ওপরই বর্তাবে। নরেন্দ্র মোদির আগ্রাসন ভারতীয় শত্রুতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা এবং দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘যুদ্ধ-প্ররোচনা’র তীব্র নিন্দাও জানান ইমরান খান। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে তার পোস্ট অনুসারে, রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনার সময় কারাবন্দি পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘আমরা এই ভুয়া শাসনব্যবস্থাকে (শাহবাজ সরকার) প্রত্যাখ্যান করলেও পাকিস্তানি জাতি হিসেবে আমরা দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছি এবং মোদির যুদ্ধ-প্ররোচনা ও আঞ্চলিক শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ তার বিপজ্জনক উচ্চাকাঙ্ক্ষার তীব্র নিন্দা জানাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো, জাল ফর্ম-৪৭ ফলাফলের মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়া একটি অবৈধ সরকারের জন্য জাতি বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবুও বিদ্রুপাত্মকভাবে নরেন্দ্র মোদির আগ্রাসন ভারতীয় শত্রুতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জনগণকে এক কণ্ঠে ঐক্যবদ্ধ করেছে।’ অন্যদিকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা শান্ত করতে উদ্যোগ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করবেন। এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস। –ডন ও এনডিটিভি এনএইচ/ |