যে সকল কারণে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন নিষিদ্ধ
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৬:৪৩ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

মুফতি জুবায়ের বিন আব্দুল কুদ্দুছ

আর কয়েক ঘন্টা পর এই বছরটি শেষ হয়ে নতুন একটি বছরের আগমন ঘটবে। পুরতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করার জন্য সমগ্রবিশ্বে থার্টিফার্স্ট নাইট নামে এক ধরনের উৎসবের আয়োজন হয়ে থাকে। বর্তমানে এই উৎসব আমাদের দেশেও খুব জমকালো ভাবে পালিত হচ্ছে। যুবক-যুবতী, তরুন-তরুণী এমনকি মুরুব্বী শ্রেণীর লোকেরাও এতে অংশ গ্রহণ করে থাকে। এই উৎসবে আমাদের লাভ-লোকসান এবং শরিয়তের দৃষ্টিতে এর কাজ-কর্মগুলোকে বিশ্লেষন করে দেখা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। তাই আসুন! এ বিষয়ে আমরা কোরআন সুন্নাহ থেকে সংক্ষেপে আলোচনা করি।

এক. থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন জানুস দেবতার পুজা সাদৃশ্য। হজরত ঈসা (আ.)এর জন্মের ৭০০-৮০০ বছর পূর্বে রুমান মোশরিকরা দুই মুখ বিশিষ্ট একটি দেবতার পুজা করত। তারা এ দেবতাকে সকল কল্যাণের উৎস মনে করত। ৩১ শে ডিসেম্বর রাত ১২ টার পূর্বক্ষনে তার পেছনের মুখের কাছে এসে বিগত বছরের সুখ-শান্তির জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করত। আর রাত ১২ টার সাথে সাথে সমনের মুখের দিকে এসে নতুন বছরের সুখ শান্তি ও সফলতা কামনা করত। এ থেকেই সুচনা হয়েছে থার্টিফার্স্ট নাইট নামের এ উৎসব। এটা উদযাপন যেন জানুস দেবতার পুজা। এটা জানার পরও যিনি তা উদযাপনে অংশ নিবেন, তিনি শিরকের গুনাহে লিপ্ত হবেন। অথচ শিরক সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا

অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করেন না; আর তার থেকে ছোট যাবতীয় গোনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেবেন, আর যে কেউ আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক করে সে ভীষণভাবে পথ ভ্রষ্ট হয়। (সুরা নিসা ১১৬)

দুই. এটি পারিবারিক নিয়ন্ত্রণহীন একটি উল্লাস। যার কারণে নিয়ন্ত্রন চলে যায় শয়তানের হাতে। ফলে যুবক-যুবতীরা যা ইচ্ছা তাই করে। সৃষ্টিহয় নানা ধরণের বিশৃংখলা।

তিন. এতে মদ ও মাদকের প্রবল ছড়াছড়ি হয়। অসংখ তরুণ-তরুণীরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। অথচ মদ (মাদক) সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা

 ইরশাদ করেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

অর্থ: হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সুরা মায়েদা ৯০)

চার. এতে নারী-পুরুষ ও তরুণ-তরুণীদের অবাধ মিলামেশা হয়ে থাকে। যার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় অবৈধ সম্পর্ক, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতার মত অশ্লীল পরিবেশ। আর অশ্লীলতাকে হারাম করে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ

অর্থ: বলুন, নিশ্চয় আমার রব হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা। (সূরা আল আরাফ, আয়াত নং ৩৩)

পাঁচ. এতে বহু নারীর ইজ্জত-সম্ভ্রম বিনষ্ট হয়। আনন্দ-ফুর্তি করতে গিয়ে অনেকেই যৌনাচরণ ও যিনা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। এগুলোকে হারাম করে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,

وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا

অর্থ: তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। (সুরা বনি ইসরাইল ৩২)

ছয়. এতে আতশবাজী করে রুগী, শিশু এবং বৃদ্ধ মানুষ সহ সকলকে কষ্ট দেয়া হয়। অথচ বিনা কারণে কাউকে কষ্ট দেয়া কবিরা গুনাহ। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَالَّذِينَ يُؤْذُوْنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتُنَا وَإِثْمًا مُبِينًا(الأحزاب ٥٨)

অর্থ: আর যারা বিনা কারণে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, নিশ্চয় তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করলো। (সুরা আহজাব ৫৮)

সাত. এতে ব্যপক অর্থ অপচয় করা হয়। অপচয় এবং অপব্যয় করা কবীরা গুনাহ। যেমন, পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,

إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ

অর্থ: নিশ্চয় যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত নং ২৭)

আট. এতে নাচ-গান সহ বহু গুনাহের সমহার ঘটে। অথচ এগুলো ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যেমন আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهُوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيْلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَ هَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ 

অর্থ: মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞ লোকদের আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করার জন্য অসার কথাবার্তা (গান-বাদ্য) ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ওদেরই জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। (সুরা লোকমান ৬)

নয়.এতে বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্যতা পাওয়া যায়। তাদের সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করতে আমাদেরকে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে-

قال النبى صلى الله عليه وسلم مَنْ تَشَبَةَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ 

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে। (আবু দাউদ ৪০৩১)

দশ. এতে বিধর্মীদের পাল্লা ভারী হয়। বাহ্যিক ভাবে তাদের সমর্থক ও সাপোর্টার বৃদ্ধি পায়। এ ব্যপারে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে,

قال النبى صلى الله عليه وسلم مَنْ كَثَرَ سَوَادَ قَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

যারা কোন সম্প্রদায়ের পাল্লা ভারী করে তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। (ফাতহুল বারি,খন্ড ১৩ পৃষ্ঠা ৪৪)

এগার.যারা এ কাজে সন্তুষ্ট তারাও এর অংশিদার। কেননা উক্ত হাদিস শরিফের শেষে বর্ণিত হয়েছে,

 وَمَنْ رَضِيَ عَمَل قَوْمٍ كَانَ شَرِيكَ مَنْ عَمِلَ بِهِ

এবং যারা কোন সম্প্রদায়ের কাজের উপর সন্তুষ্ট তারাও তাদের অন্তর্ভুক্ত। (ফাতহুল বারি,খন্ড ১৩ পৃষ্ঠা ৪৪)

সুতরাং যদি আপনি একজন ইমনাদার অভিভাবক হিসাবে তাদেরকে কিছুই না বলেন, তাহলে আপনিও তাদের সাথে শরীক আছেন একথাগুলো তো আমার আপনার নয়। বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। তাই আসুন! আমরা বিধর্মীদের সাদৃশ্যতা বর্জনসহ সকল অন্যায় ও পাপাচার থেকে বিরত থাকি। নিজের সন্তান, প্রতিবেশি ও অধিনস্তদেরকে বুঝানোর মাধ্যমে বিরত রাখতে চেষ্টা করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন, আমিন।

আরএইচ/