খতমে বুখারি ও শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান নিয়ে পাকিস্তান বেফাকের কঠোর সতর্কবার্তা
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৩:৫৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

মাদরাসার বার্ষিক শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান ও খতমে বুখারি মজলিসগুলোতে জেঁকে বসা বিভিন্ন কুসংস্কার, অপচয় এবং শরিয়তপরিপন্থী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পাকিস্তানের কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তান’।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের শীর্ষ আলেম ও বেফাকের সভাপতি আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি স্বাক্ষরিত এক জরুরি নোটিশে মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে ১০টি সুনির্দিষ্ট অনিয়ম পরিহার করে অনুষ্ঠানগুলোকে সাদামাটা ও আধ্যাত্মিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বেফাকুল মাদারিসের বিজ্ঞপ্তিতে বর্তমান সময়ে প্রচলিত ১০টি কুপ্রথার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়—গত কয়েক বছর ধরে মাদরাসাগুলোর এই বার্ষিক অনুষ্ঠানগুলো বিভিন্ন অনিয়ম ও কুসংস্কারের শিকার হয়ে পড়েছে। সেই অনিয়মগুলোর তালিকা বেশ দীর্ঘ, যার মধ্য থেকে কয়েকটি নিচে তুলে ধরা হলো:

১. অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা দাবি করা হয়। অথচ আমাদের মাদরাসার অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র পরিবারের। তাদের জন্য এই বোঝা বহন করা অসম্ভব। তারা বা তাদের অভিভাবকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই টাকা দেন না। বিদ্যমান সম্পদের বাইরে গিয়ে এসব অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত খরচ করা কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়।

২. সংগৃহীত এসব টাকা দিয়ে মুহতামিম, শিক্ষিকা বা শিক্ষকদের জন্য দামি পোশাক তৈরি করা হয়। এমনকি কোথাও কোথাও মুহতামিম সাহেবার জন্য স্বর্ণের অলংকার কিনে উপহার দেওয়া হয়। মাদরাসার ভিত্তি হওয়া উচিত ইখলাস ও দুনিয়াবিমুখতার ওপর। ছাত্র-ছাত্রীদের টাকা থেকে এ ধরনের উপহার গ্রহণ করা মোটেও উচিত নয়।

৩. ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একই রঙের দামি পোশাক, বোরকা, পাগড়ি বা চাদর কেনা হয়।

৪. মেহমানদের জন্য বড় বড় ডেক রান্না করা হয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ ভোজের আয়োজন করা হয়।

৫. ছাত্রীরা লাউড স্পিকারে গজল বা নাশিদ পড়ে, যার আওয়াজ দূর-দুরন্ত পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

৬. ছবি তোলা এবং ভিডিও করা হয়। এমনকি এসব এখন মহিলা মাদরাসাগুলোতে হচ্ছে, যার অবৈধতার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এছাড়া এসব কাজ লোকদেখানো ও রিয়া শামিল, যা মাদরাসার মূল চেতনার পরিপন্থী।

৭. গাড়ি সাজিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মিছিল বা শোভাযাত্রার মাধ্যমে আনা-নেওয়া করা হয়।

৮. কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের থেকে সংগৃহীত এই টাকা দিয়ে ওমরাহ পালন করেন।

৯. কোথাও কোথাও মুহতামিম বা ক্বারি সাহেবের জন্য মোটরসাইকেল কেনা হয়।

১০. পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুকরণে অত্যন্ত দামি কেক কেটে উদ্‌যাপন করা হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, বর্তমান সময়ে এসব অনুষ্ঠান যেভাবে আয়োজন করা হচ্ছে, তাতে ‘খতমে বুখারি’ শিরোনাম ব্যবহার করাও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। এর পরিবর্তে ‘দস্তারবন্দি’ বা ‘চাদরপোশি’ শিরোনাম দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বোর্ডের মতে, মাদরাসার মূল চেতনা হলো ইখলাস, তাওয়াক্কুল ও লৌকিকতামুক্ত জীবন। কিন্তু বর্তমান প্রথাগুলো মাদরাসার এই আধ্যাত্মিক পরিবেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে।

বোর্ডের সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি ও মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ হানিফ জালান্ধরী স্পষ্ট জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে যদি কোনো মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনুষ্ঠানের নামে জবরদস্তিমূলক টাকা সংগ্রহের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে সেই মাদরাসার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মাদরাসাগুলোকে তাদের প্রকৃত তামাদ্দুন ও আধ্যাত্মিক চেতনার ওপর টিকিয়ে রাখতে এসব বিজাতীয় সংস্কৃতি ও লৌকিকতা পরিহার করা জরুরি। অনুষ্ঠানের জাঁকজমক কমিয়ে সাদাসিধে আয়োজন করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত ও সাহায্য আসবে বলে আলেমগণ আশা প্রকাশ করেন।

আরএইচ/