থার্টিফার্স্ট নাইট: আসুন সুস্থ সংস্কৃতির বিপ্লব ঘটাই
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৯:৫৮ সকাল
নিউজ ডেস্ক

আল আমীন বিন সাবের আলী

মানুষের ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনে মন-মগজ ও দেহের ভিন্নমুখী কর্মধারার মাধ্যমে মানবসত্তার বিভিন্ন বৃত্তি-প্রবৃত্তি ও গুণাবলীর বহিঃপ্রকাশিত রূপ সমষ্টির নাম সংস্কৃতি। স্থান কাল ও পাত্রভেদে সংস্কৃতির রূপ অভিন্ন থাকে না। সমতল ও নদী মাতৃক উদার আকাশ ও মুক্ত বাতাসে বেড়ে ওঠা মানুষের সংস্কৃতির সাথে পর্বতময় অনুর্বর মরু-মালভূমির মানুষের সংস্কৃতির ব্যবধান আকাশ-পাতাল পার্থক্য হওয়াই স্বাভাবিক।

সংস্কৃতি মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর যেকোনো সমাজ ব্যবস্থার ভালো-মন্দ দিকগুলো যাচাই-বাছাই করা যায় তাদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিশ্লেষণের মাধ্যমে। সেজন্যই পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ সংস্কৃতিকে সমাজের দর্পণ বলে অভিহিত করেছেন। এমনকি বলা হয়ে থাকে যে, যে জাতির সংস্কৃতি যতো বেশি পরিচ্ছন্ন ও সমৃদ্ধ, সে জাতি ততো বেশি উন্নত ও উৎকৃষ্ট।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সময়ের আবর্তনে ও কালের পরিক্রমায় কোনো জাতিই তাদের সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারে না। কারণ মানুষের কাজে-কর্মে তাদের চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। চাই সে কাজ পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা অর্থনৈতিক যে ধরনেরই হোক না কেন। বিভিন্ন ধাতব পদার্থের মিশ্রণের মাঝে একটি চুম্বকখণ্ড রাখলে যেমন সেটা কেবল লৌহ পদার্থকেই আকর্ষণ করে, তেমনি বিশেষ কোনো বিশ্বাসে সম্পৃক্ত মন ও জড় পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের মধ্য থেকে নিজের সহায়ক ও পরিপোষক উপাদানগুলোই বেছে নিয়ে শিল্প সৃষ্টিতে ব্যবহার করে।

এক কথায় বলতে গেলে মানুষের কার্যক্রম তাদের চিন্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আর সময়ের চাহিদা, ভৌগোলিক পরিবেশ, ঐতিহাসিক প্রভাব ইত্যাদি বিবিধ কারণে মানুষের চিন্তা জগতে বিস্তর পরিবর্তন ঘটে বলেই তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ সকল কাজে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি রূপে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। আর পরিবর্তনটা যখন সামাজিক কাজের সাথে হয় তখন সেটাকে আমরা বলি, অসামাজিক। আর সাংস্কৃতিক কাজের সাথে হলে বলি অপসংস্কৃতি। এভাবে আমাদের দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রেও সংস্কৃতির নামে  জেঁকে বসেছে নানান অপসংস্কৃতি। "থার্টিফার্স্ট নাইট" উদযাপনও সেরকম একটি বড় অপসংস্কৃতি।

প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের শেষ মুহূর্তটিকে "থার্টিফার্স্ট নাইট" হিসাবে পালন করা হয়ে থাকে। একে অনেকেই নববর্ষ বা বর্ষবরণ সংস্কৃতির অংশ হিসেবে পালন করে থাকেন। উক্ত নববর্ষ উদযাপন পদ্ধতি একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে মেনে নেয়া যায় না। কারণ, এ নববর্ষ উদযাপন উৎসব পালন করতে গিয়ে দিনভর চলে দেশি-বিদেশি গানের কনসার্ট, জুয়ার আসরসহ নানা বিজাতীয় কৃষ্টি-কালচার। রাত নামতেই নববর্ষ উদযাপন পৌঁছে ‏যায় নষ্টামির চুড়ান্ত পর্যায়ে। মদ খেয়ে রাস্তায় মাতলামি, সারা রাতব্যাপী পটকাবাজি, ধর্ষণ ও ছিনতাই ইত্যাদি সেই রাতের কমন দৃশ্য। যেন বর্ষ বরণের নামে পুরো দেশব্যাপী বোমাবাজি, আতশবাজি, ঝারবাতি, আলোকসজ্জা, বিভিন্ন গণ জমায়েত করে ফষ্টি-নষ্টি করার নাম "থার্টি ফাস্ট নাইট"। আর এ সকল কাজের বিরূপ প্রভাবে জনজীবন আজ বিপর্যস্ত প্রায়। যার সাক্ষী প্রতিবছর সে রাতের পরবর্তী প্রকাশিত সমস্ত মিডিয়াগুলো। এরপরও আমাদের হুঁশ ফেরে না। আল্লাহর পানাহ! 

আসুন, জাতিকে এ সকল অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস থেকে বাচাঁতে সমাজে সুস্থ সংস্কৃতির বিপ্লব ঘটাই। বিগত বছরের হিসাব মিলাই। ঈমান-আমল সংক্রান্ত যেকোনো ত্রুটির ব্যাপারে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করি খোদার দরবারে। পেছনের সকল দুর্বলতা কাটিয়ে সামনের দিনগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে খাঁটি ঈমান ও ইখলাসপূর্ণ আমল-আখলাকের সহিত দিন গুজরানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই।

লেখক: মাদরাসা শিক্ষক ও কলামিস্ট

এনএইচ/