
|
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে প্রতিপক্ষ ভাবলে বিপদ
প্রকাশ:
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৫:১৮ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
মুফতি এনায়েতুল্লাহ মধ্য পৌষে এসে একটু একটু নির্বাচনি উত্তাপ টের পাওয়া যাচ্ছে। আসলে নির্বাচন হবে অথচ সেখানে তাপ-উত্তাপ থাকবে না! তা কী করে হয়? তবে এবারের নির্বাচন নিয়ে মানুষ একটু ভিন্ন কিছু আশা করে। প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই থাকবে সেই ভিন্নতার ছাপ। আফসোস, তার কোনোটাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নির্বাচনের মাঠে একদল আরেকদলের প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রতিপক্ষ নয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে প্রতিপক্ষ ভাবলে বিপদ। প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবাই শ্রেয়। প্রতিপক্ষ ভাবলে হামলা-মামলা-রক্তারক্তি বেড়ে যায়। রাজনৈতিক সৌজন্য, শিষ্টাচার এগুলো হারিয়ে যায়। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বাংলাদেশের মানুষের আশায় বুক বেঁধেছে; এবার একটা ভালো নির্বাচন হবে। মোটাদাগে ভালো মানে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ-অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন। সেখানে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা রয়েছে। তারা সর্ব্বোচ্চমাত্রার সহনশীলতা দেখাবেন। নেতাকর্মীরা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্মান দিয়ে কথা বলবেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এগুলো দিবাস্বপ্ন। ভোট প্রার্থনা মানে মিছিল-মিটিং নয়। সমর্থকদের নিয়ে সভা-সমাবেশ নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় হামলা নয়। নতুন কিছু ভাবতে হবে রাজনৈতিক দলগুলো এবং প্রার্থীকে। সেটা সবসময় একেবারে জনমোহিনী হতে হবে তাও নয়। রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতির প্রতি সৎ থাকলে নির্বাচন নিয়ে সংশয় থাকে না। জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম হয় না। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে নৈতিকতার ভয়াবহ অবক্ষয়। যে রাজনীতি একসময় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করত, আজ সেই রাজনীতি জাতিকে বিভক্ত করছে দলীয় স্বার্থ ও ব্যক্তি স্বার্থের কারণে। রাজনৈতিক দল ও জোটে প্রতিযোগিতা নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেটা যেন কোনো অবস্থাতেই উদোম ঝগড়া, গালাগালিতে পরিণত নয় হয়। মিথ্যার প্রকট ও কদর্য প্রদর্শনী না হয়। নির্বাচনে পক্ষ-বিপক্ষ নতুন কিছু নয়। কিন্তু পক্ষে-বিপক্ষে কাজ করতে যেয়ে ঝগড়াঝাঁটির মাত্রা যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, এটাই একান্ত চাওয়া। কিন্তু না, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরোধ, পানিপথের যুদ্ধের মতো দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে। নেতাদের বক্তব্য রাজনৈতিক যতটা নয়, তার চেয়ে বেশি ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক। রাজনৈতিক দলগুলোর বাগযুদ্ধ কলহ প্রকট ও কদর্য রূপ নিয়েছে। নেতা-কর্মীদের খিস্তিখেউড়, পেশি প্রদর্শন অসহনীয়। এসবের কুপ্রভাব পড়ছে সমাজের সব প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও বাদ যাচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, নির্বাচন শেষে সবাই নিজ নিজ দলে ও এলাকায় থাকবেন। এসব প্রতিষ্ঠানও আপন অবস্থায় বহাল থাকবে- ইনশাআল্লাহ। কিন্তু সম্পর্ক নষ্ট করে, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে শত্রুতা সৃষ্টি করে, প্রতিষ্ঠানকে কলুষিত করে- আপনি টিকতে পারবেন না। লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক আরএইচ/ |