
|
৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে হাদি হত্যার পরিকল্পনা: তদন্তকারী সংস্থা
প্রকাশ:
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৮:৪৫ রাত
নিউজ ডেস্ক |
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। তদন্তে জানা গেছে, ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে পরিকল্পনা করে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়। তদন্তকারীদের ধারণা, এই হত্যার পেছনে দেশ-বিদেশের কয়েকটি প্রভাবশালী মহলের সমন্বিত পরিকল্পনা কাজ করেছে। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া সীমান্তে বৈঠক তদন্ত সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের মূল সন্দেহভাজন শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ গত ২১ জুলাই সিঙ্গাপুরে গিয়ে কয়েকজন পলাতক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। পাঁচ দিন পর ২৬ জুলাই দেশে ফেরার আগেই হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে। সিঙ্গাপুরে ফয়সাল নিজেকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা পরিচয়ে প্রবেশ করেন এবং মালয়েশিয়া সীমান্তে গিয়ে বৈঠক করেন বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “ফয়সালের ভ্রমণ তথ্য পাওয়া গেছে এবং তদন্ত সেই অনুযায়ী এগোচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত এখনই বলা যাচ্ছে না।” হত্যার আগের প্রস্তুতি ও আর্থিক লেনদেন তদন্তে উঠে এসেছে, দেশে ফেরার পর স্ত্রী সাহেদা পারভীনকে ফয়সাল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে সামনে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যখন দেশে থাকা কঠিন হবে। পরিবারের জন্য একটি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩০ লাখ টাকা রাখা আছে বলেও তিনি স্ত্রীকে জানান। একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে ফয়সালের প্রেমিকা মারিয়া আক্তারের জিজ্ঞাসাবাদেও। হত্যার আগের রাতে সাভারের মধুমতি মডেল টাউনে ফয়সাল, মোটরসাইকেল চালক আলমগীর ও মারিয়া সময় কাটান। সেদিন রাতে ফয়সাল মারিয়াকে বলেন, “আগামীকাল এমন কিছু হবে, যা দেশ কাঁপিয়ে দেবে।” তবে মারিয়া ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথ হত্যার পর ফয়সাল ও আলমগীরকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মিরপুরের সাবেক কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পী। তাঁর ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলামও সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। পুলিশ দুজনকে শনাক্ত করেছে। দালাল ফিলিপ স্নাল হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে হত্যার রাতেই তাঁদের ভারতে প্রবেশের ব্যবস্থা করেন। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ডিবি ও র্যাব মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। হাদি হত্যার প্রেক্ষাপট গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মাথায় গুলি করে হাদিকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয় এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। পরে তাঁর মরদেহ দেশে এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে দাফন করা হয়। গতকাল শুক্রবার জুমার পর শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ করে ইনকিলাব মঞ্চ। সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, “শাহবাগকে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’ ঘোষণা করা হলো; বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।” আরএইচ/ |