দুই সপ্তাহে দুই রাজকীয় ঘটনা
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৮:০৯ সকাল
নিউজ ডেস্ক

মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী
এক সপ্তাহ আগে পরে দুইটি রাজকীয় অনুষ্ঠান হয়ে গেল। একজনের বিদায়, আর একজনের প্রত্যাগমণ। দুই অনুষ্ঠানেই সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা ছিল। তবে ভিন্ন দায়বদ্ধতা থেকে। 

এক সপ্তাহ আগে শহীদ উসমান হাদির রাজকীয় বিদায়। তবে এখানে লোক সমাগমে কোনো আয়োজন ছিল না, পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে দিন তারিখ ঠিক করে গাড়ি ঘোড়া রিজার্ভ করে ঢাকার বাহির লোক আসার সময় ছিল না, বলতে গেলে মূলত ঢাকার জনগণই এখানে এসেছিলেন। তাঁর বিদায়ে কেঁদেছিল দেশবাসী,  যাঁরা কি না তাঁর আত্নীয় বা স্বজন ছিল না তাঁরাও। দেশের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসাই মূলত এখানে কাজ করেছে। সরকার জাতীয় দায়িত্ববোধ থেকেই তাঁর প্রতি অনেক সম্মান প্রদর্শন করেছে। এটাকেই বলে  ‘এমন জীবন করহে গঠন, মরিতে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন।’

অপরটি ছিল, জিয়াপুত্র তারেক রহমানের সতেরো বছর দুঃখজনক নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। এটা ছিল বরণ করে নেওয়ার ঘটনা। উষ্ণ রাজকীয় গণসংবর্ধনা। স্বাভাবিকভাবেই দেশের বৃহত্তম দল বিএনপি পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে সারাদেশ থেকে লোক সমাগমের ব্যবস্থা করেছে। দেশের নির্যাতিত জনগণের অবিসংবাদিত নেতা, গুম-খুনের শিকার পরিবারগুলোর প্রতিক্ষিত নেতা, যিনি নেজেও নির্যাতনের শিকার, তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। এ যেন কোন বিপ্লবী নেতা,যে কি-না বিদেশে থেকে একটা আদর্শিক বিপ্লব ঘটিয়েছে। আর আজ তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। এখানেও সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা ছিল কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রটোকল নয় বরং আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়বদ্ধতা থেকে। 

আর মাত্র ৪৭ দিন পরই দেশে জাতীয় নির্বাচন। একটি পক্ষ নির্বাচন পিছানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছে, তা যে উদ্দেশ্য থেকেই হোক। জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা না পেয়ে, তাদের ইস্যু জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাঁরাও নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। ঐ পক্ষের প্রধান গতকাল স্বীয় মনোনয়ন পত্র উত্তোলন করেছেন। এর মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যপারে বাহ্যিক কোন প্রতিবন্ধকতা নেই বলেই বিশ্বাস করা যায়। আল্লাহই ভাল জানেন। এমনই হওয়া উচিত। বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে ভিন্ন মতামত থাকবে, তবে শেষ পর্যন্ত জনগণের চাওয়াকেই প্রাধান্য দিতে হবে, সন্মান দেখাতে হবে। 
এবার রয়ে গেল, আসন্ন নির্বাচনে কে জিতবে, কে সরকার গঠন করবে, কে প্রধানমন্ত্রী হয়ে জাতির কর্ণধার হবে। আশা করা হচ্ছে জনাব তারেক রহমানই আগামীর সরকারপ্রধান হচ্ছেন। তবে যিনিই হোননা কেন, তাঁর দায়িত্ব অপরিসীম। গোটা জাতি পনেরো বছরের অন্ধকার যুগ থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। বরং অতীতের যেকোনো সময় থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করছে। তারেক রহমান বাবামায়ের শাসন কাছে থেকে দেখেছেন। পরবর্তী শাসকদের পরিণতি স্বচক্ষে দেখেছেন। দেখেছেন বিশ্ব শাসকদের হাল অবস্থা। বিশ্ব রাজনীতির প্রাণ কেন্দ্র লন্ডনে দীর্ঘদিন অবস্থান করেছেন। তিনি এখন পরিণত বয়সে পৌঁছেছেন। যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। আশাকরি তিনি বিরানব্বই পার্সেন্ট মুসলিম জনগণের প্রতিনিধি হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবেন। প্রতিহিংসার রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে জাতির জন্য নুতন দিগন্ত উন্মোচন করবেন। গতকালের প্রদত্ত তাঁর ভাষণও প্রশংসা কুড়িয়েছ।  সব কিছু আল্লাহরই হাতে।

লেখক: সিনিয়র সহসভাপতি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ

এনএইচ/