থার্টি ফার্স্ট নাইট আনন্দের আড়ালে যে ক্ষতি
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:০৪ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

আল্লাহর দেওয়া জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। যে সম্পদ যত বেশি মূল্যবান, তার ব্যবহার-প্রক্রিয়াও তত বেশি সুপরিকল্পিত হওয়া প্রয়োজন। সময় বহমান স্রোতের মতো, যাকে কখনো বেঁধে রাখা যায় না। তাই জীবনের এই মূল্যবান সময়গুলো অবহেলায় নষ্ট করা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা হলো, মানুষের জীবন ও সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির পথেই ব্যয় হওয়া উচিত। পরিতাপের বিষয় হলো, আমরা আমাদের এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের সময়গুলোকে এমন সব আচার-অনুষ্ঠান ও বিজাতীয় উৎসবে খরচ করছি, যার ভিতর না আছে দুনিয়ার কল্যাণ, না আছে পরকালের মুক্তি। তেমনই একটি অনর্থক ও শরিয়তবিবর্জিত উৎসবের নাম ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’।
থার্টি ফার্স্ট নাইটের গোড়ার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর সঙ্গে পৌত্তলিকতা ও কুসংস্কারের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে।

প্রাচীন পারস্যের সম্রাট জামশিদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এবং পরবর্তী সময়ে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে নববর্ষের প্রচলন করেন। মূলত এটি ইংরেজি নববর্ষ নয়, খ্রিস্টীয় বা গ্রেগরিয়ান নববর্ষ, যা পোপ গ্রেগরির নামানুসারে প্রবর্তিত। প্রাচীনকালে পারস্যের প্রকৃতি পূজারিরা বিশ্বাস করত, বছরের প্রথম দিন আনন্দ-ফুর্তিতে কাটালে সারা বছর ভালো থাকা যাবে। সেই কুসংস্কার আজও আধুনিক সমাজের তথাকথিত বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের মধ্যে গেঁথে আছে।

অথচ বছরের প্রথম দিন উল্লাস করলে সারা বছর ভালো যাবে-এর চেয়ে অযৌক্তিক ও হাস্যকর বিশ্বাস আর কী হতে পারে!
ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো উৎসব পালন করতে হলে কোরআন-সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কেরামের আমলের প্রামাণ্যতা প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা যায়, নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর সপক্ষে ইসলামে কোনো দলিল নেই। রসুলুল্লাহ (সা.) স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সঙ্গে সাদৃশ্য রাখবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে’ (সুনানে আবু দাউদ)। কোনো জাগতিক কাজ তখনই বৈধ হয় যখন তা শরিয়তের বিধান লঙ্ঘন করে না এবং সৃষ্টির হক নষ্ট করে না। কিন্তু থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্‌যাপনে এই দুটি শর্তই চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়।

এটি একদিকে যেমন বিজাতীয় সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ, অন্যদিকে এর মাধ্যমে নাগরিক শান্তি ও মানুষের অধিকার ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন করা হয়।
এই উৎসবের সামাজিক ও নৈতিক ক্ষতির দিকগুলো অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রথমত এতে বিপুল অর্থের অপচয় হয়। যে রাতে আতশবাজি, ফানুস ও ডিজে পার্টির নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়, সেই হাড়কাঁপানো শীতের রাতেই দেশের লাখো গরিব মানুষ এক টুকরো গরম কাপড়ের অভাবে কষ্ট পায়। অপচয়কারীকে পবিত্র কোরআনে শয়তানের ভাই হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত বিকট শব্দে আতশবাজি ও সাউন্ডবক্স ব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্যের বিপর্যয় ঘটে। শহরের ফ্ল্যাটে থাকা বৃদ্ধ, শিশু ও অসুস্থ রোগীরা এই শব্দদূষণে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়ে। এমনকি পটকার শব্দে শিশুর মৃত্যু কিংবা ফানুসের আগুনে দগ্ধ হওয়ার মতো মর্মান্তিক ঘটনাও প্রতিবছর আমাদের দেখতে হয়।

তদুপরি এই বিজাতীয় সংস্কৃতি আমাদের তরুণ প্রজন্মকে এক ভোগবাদী ও নৈতিকতাহীন পথে ঠেলে দিচ্ছে। মাদক, গানবাজনা এবং নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার মাধ্যমে অশ্লীলতার বিস্তার ঘটছে, যা ইসলামের সুমহান দর্শনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। ইসলাম আমাদের ত্যাগের উৎসব শিখিয়েছে, যেখানে ভোগের চেয়ে অপরের কল্যাণ ও গরিবের হক বেশি গুরুত্ব পায়। অথচ থার্টি ফার্স্ট নাইটের মতো উৎসবে আত্মকেন্দ্রিক ভোগবাদ ছাড়া আর কিছুই নেই। আমাদের নিজস্ব সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য থাকতে কেন আমরা অন্যের দেউলিয়া সংস্কৃতির দ্বারস্থ হচ্ছি, সেটি আজ এক বড় প্রশ্ন।

প্রকৃতপক্ষে নতুন বছর আসা মানেই নতুনের আগমন নয়, বরং জীবন থেকে একটি বছরের পাতা ঝরে যাওয়া। জীবনের বরফ প্রতিনিয়ত গলে যাচ্ছে। আমরা কি একবারও ভাবি, কবরের দিকে আমাদের পা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল! একজন ফাঁসির আসামির কাছে যেমন প্রতিটি সূর্যোদয় মৃত্যুর নিকটবর্তী হওয়ার সংকেত, আমাদের জীবনও ঠিক তেমনি ফুরিয়ে আসছে। তাই থার্টি ফার্স্ট নাইটের রাতে নেশা ও উন্মাদনায় মত্ত না হয়ে বিগত জীবনের গুনাহের জন্য তওবা করা এবং আগামীর জন্য নেক পরিকল্পনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সন্তান, পরিবার ও সমাজকে এই ভ্রান্ত সংস্কৃতি থেকে রক্ষা করা আমাদের ইমানি ও নাগরিক দায়িত্ব। আল্লাহতায়ালা আমাদের বিজাতীয় সংস্কৃতি পরিহার করে ইসলামি জীবনাদর্শ গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন।

এনএইচ/