মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুকের ‘পথের কাঁটা’ চাকসু মামুন
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:০১ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

বিশেষ প্রতিনিধি

এবারের নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। দলটিকে বিএনপি চারটি আসনে ছাড় দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিলেট-৫ আসন। সীমান্তবর্তী কানাইঘাট-জকিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে খেজুর গাছ প্রতীক নিয়ে লড়বেন জমিয়তের সভাপতি ও প্রবীণ মুহাদ্দিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এই আসনে থাকবে না ধানের শীষের কোনো প্রার্থী। জমিয়তকে ছাড় দেওয়া চারটি আসনে স্থানীয় বিএনপিকে সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

তবে সিলেট-৫ আসনে মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুকের ‘পথের কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা মামুনুর রশিদ ওরফে চাকসু মামুন। কেন্দ্র থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ সত্ত্বেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সিলেট জেলা বিএনপির প্রথম সহসভাপতি মামুনুর রশিদ-চাকসু মামুন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনি প্রচার ও সভা-সমাবেশ করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্বাধীনতার পর আসনটিতে চারবার আওয়ামী লীগ, তিনবার জাতীয় পার্টি এবং দুবার স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন। এছাড়া বিএনপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী একবার করে জয়ী হয়েছেন।

সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। তার বাবা প্রয়াত আল্লামা আবদুল লতিফ চৌধুরী ‘ফুলতলী হুজুর’ হিসেবে পরিচিত।

বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে হতাশ কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীরা। তিন দশক ধরে এ আসন থেকে বিএনপির কেউ মনোনয়ন পাননি। সবশেষ ২০১৮ সালেও এই আসনটিতে মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক জোটের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা প্রার্থী হওয়ার তালিকায় থাকলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন চাকসু মামুন। অন্যদের চেয়ে তিনি বেশি প্রভাবশালী। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকায় কাজও করছেন। তার দাবি, ২০১৮ সালে তিনি মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু জোটের স্বার্থে তিনি ছাড় দেন।

চাকসু মামুন গণমাধ্যমকে জানান, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক তার পরিবারেরই সদস্য। খালাতো ভাই। বড় ভাই হিসেবে তিনি ২০১৮ সালে অনুরোধ করায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, এটাই তার শেষ নির্বাচন। এজন্য এবার আর নিজের বড় ভাইকে ছাড় দিতে নারাজ চাকসু মামুন।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) জমিয়তকে আনুষ্ঠানিকভাবে আসনটি বিএনপির পক্ষ থেকে ছাড় দেওয়ার পর চাকসু মামুন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি নির্বাচন করব, নির্বাচন থেকে সরার কোনো সুযোগ নেই। বৃহস্পতিবার মনোনয়ন ফরম কিনেছি, জমাও দেব। আমি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের জন্য কাজ করছি। এখন আর নির্বাচন না করার কোনো সুযোগ নেই।

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আসনটিতে জমিয়তের একটা ভোটব্যাংক আছে। তবে এককভাবে জেতার মতো ভোট নেই। বিএনপির ভোটও একবাক্সে না পড়লে নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়া কঠিন হবে। এছাড়া এবার আরপিও সংশোধনের কারণে জোট প্রার্থীদের ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহারের সুযোগ নেই। ফলে বিএনপির সব ভোট খেজুর গাছে আনা কঠিন হবে।

এদিকে জমিয়ত ছাড়া বাকি ইসলামি দলগুলো এবার আসন সমঝোতার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আসন ভাগাভাগি শেষ পর্যায়ে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, দুই খেলাফত মজলিসসহ অন্যান্য দলগুলো মিলিয়ে এখানে প্রার্থী একজন থাকবেন। আর এটা নিশ্চিত, কোনো আলেমই হবেন এখানকার প্রার্থী। এতে ইসলামপন্থীদের ভোট ভাগ হয়ে যাবে। সেখানে চাকসু মামুন বিএনপির ভোট টানলে মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুকের জন্য পেরে ওঠা কঠিন হতে পারে।

তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি আপাতত বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে নীরব থাকলেও ভোটের সময় ঘনিয়ে এলে তাদের সরিয়ে ফেলার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। বিশেষ করে জমিয়ত এবার আরও কয়েকটি আসন চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চারটি আসনেই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়, বিদ্রোহী কোনো প্রার্থী থাকবে না। সেটার জন্য তারা সব চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে বিএনপির হাইকমান্ডের হস্তক্ষেপে চাকসু মামুন শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন বলেও গুঞ্জন আছে।

আরএইচ/