
|
অস্ত্রসহ গানম্যান পাচ্ছেন নাহিদ হাসনাতসহ ১২ ব্যক্তি
প্রকাশ:
২২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:৩৬ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
শহীদ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের পর জুলাই যোদ্ধা, সমন্বয়ক, সংসদ-সদস্য প্রার্থী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সম্মুখসারির নেতৃবৃন্দসহ ১২ জনকে গানম্যান দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই তালিকায় রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম। এছাড়া আরও কয়েকজন রাজনীতিক ও সংসদ-সদস্য প্রার্থী গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য গানম্যান চেয়েছেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন রাজনীতিককে শিগগিরই গানম্যানসহ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে বিএনপির মনোনীত সংসদ-সদস্য প্রার্থী তানভির আহমেদ রবিন, পাবনা-৩ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জাফির তুহিন, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদসহ আরও কয়েকজন। এছাড়া ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা শহীদ ওসমান হাদির পরিবারকেও বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। হাদির এক বোনকে অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান দেওয়া হবে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারা দেওয়া হবে। হাদির মতোই জীবন ঝুঁকির তালিকায় রয়েছেন এবি পার্টির ব্যারিস্টার ফুয়াদ, জুলাই যোদ্ধা ও এনসিপির সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ সম্মুখসারির অনেক যোদ্ধা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত রাজনীতিক। তাদের নিয়মিত হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে, যা সরকারের গোয়েন্দা তথ্যেও রয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, “যারা বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের একজন করে অস্ত্রধারী রক্ষী দেওয়া হয়েছে। যারা তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে আছেন, তাদের চলাফেরা ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।” পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং যাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন, তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই তালিকা বিশ্লেষণ করে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা নিরাপত্তা চাচ্ছেন, তাদের অনেকেই গানম্যানের পাশাপাশি অস্ত্রও চেয়েছেন। অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকেও গানম্যান দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে সবাইকে গানম্যান দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ চাহিদার তুলনায় জনবল সীমিত। যাদের ক্ষেত্রে ‘পটেনশিয়াল থ্রেট’ রয়েছে, তাদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, “জুলাই যোদ্ধা ও সংসদ-সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে যারা নিরাপত্তা চেয়েছেন, তাদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কেউ পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে, কেউ এসবি বা অন্য ইউনিটের মাধ্যমে আবেদন করেছেন।” তিনি আরও বলেন, “জুলাই যোদ্ধা যেমন অনেক, তেমনি নির্বাচনী প্রার্থীও অনেক। তবে সবাই ঝুঁকিতে নেই। যারা ঝুঁকিতে আছেন বলে বিবেচিত, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি, রেঞ্জ ডিআইজি ও মেট্রোপলিটন কমিশনারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” জুলাই যোদ্ধা ও প্রার্থীদের কী ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে প্রয়োজন অনুযায়ী নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। মিটিং-মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হচ্ছে। যারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন, তাদের গানম্যান দেওয়া হচ্ছে।” এনএইচ/ |