
|
মিরাসের সুষ্ঠু বণ্টন, ধর্মীয় ও সামাজিক জিম্মাদারি
প্রকাশ:
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০২:৫২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
মুফতী রবিউল ইসলাম রফিক মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ হচ্ছে মিরাস, যা মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়রা পেয়ে থাকে। আদি কাল থেকেই মৃতের সন্তানাদি ও আত্মীয়দের মাঝে সম্পত্তি বন্টনের নিয়ম চলে আসছে। সম্পদ বন্টনে অনিয়ম হলে তাদের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি হয়। তা প্রতিহিংসার চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তাই মৃত ব্যক্তির সম্পদের সুষ্ঠ বন্টন এর গুরুত্ব অপরীসিম। এতে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাই এই বিষয়ে আমাদের যতœবান হওয়া কাম্য। মিরাস এর অর্থ: মিরাস শব্দটি ميراث যা وَرَثَ থেকে গঠিত। আভিধানিক অর্থ: অংশীদার হওয়া। ইরশাদ হয়েছে, وَوَرَثَ سُلَيْمَانُ دَاوُدَ সুলায়মান দাউদের ওয়ারিশ হয়েছে। (সুরা নামল, আয়াত: ১৬) পারিভাষিক অর্থে: মিরাস হলো মৃত ব্যক্তি হতে তার জীবিত ওয়ারিশদের নিকটে মালিকানা স্থানান্তরিত হওয়া। মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদের সাথে সম্পর্কিত বিষয়াদি: মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদের সাথে বেশ কিছু কর্তব্য রয়েছে। প্রথমত মৃত্যুর সময় থেকে মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদ দ্বারা তার গোসল, কাফন-দাফন পর্যন্ত সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে হবে। সেক্ষেত্রে তার সম্পদের উপর ভিত্তি করে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে মৃতের দাফন সংশ্লিষ্ট কার্যাবলি সমাপ্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত: তার ঋণ পরিশোধ করা। মৃতের নিকট কোনো ব্যক্তির ঋণ থাকলে তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তা আদায় করে দেওয়া। তৃতীয়ত: মৃতের অছিয়ত পূর্ণ্য করা। মৃতের অছিয়ত বাস্তবায়ন করতে হবে দাফন, কাফন ও ঋণ পরিশোধের পর। চতুর্থ: পরিত্যক্ত সম্পদ ওয়ারিসদের মাঝে বন্টন করা। মিরাসের একাল-সেকাল জাহেলি যুগে আরবে মহিলাদেরকে কোনো অংশ দেওয়া হতো না। তাদের মনোভাব ছিলো, যারা যুদ্ধ করতে পারে না বা যারা শত্রুর আক্রমণ থেকে কোনোভাবে আমাদেরকে রক্ষা করতে পারে না, তাদেরকে কিভাবে আমরা সম্পদ প্রদান করতে পারি? অথচ ইসলামি শরিয়ত মিরাসে তাদের হক প্রতিষ্ঠা করেছে। এটা কারো দয়া বা কারো অনুগ্রহ নয়। বরং আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে সুনির্ধারিত অংশ। মিরাসের আয়াতসমূহ অবর্তীর্ণ হওয়ার পর আরবদের কাছে তা অত্যন্ত কঠিন মনে হলো। তারা এই হুকুমের রহিত হয়ে যাওয়া কামনা করতে থাকে। কারণ এই আদেশ ছিলো তাদের অভ্যাসের বিপরীত। তারা বলতে লাগলো, স্ত্রীকে এক -চতুর্থাংশ বা এক অষ্টমাংশ এবং মেয়েকে অর্ধেক ও ছোট শিশুর অংশও বাদ দেওয়া হয়নি। অথচ তারা ঘোড়ায় আরোহন বা যুদ্ধ করতে পারে না। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু সমাজে পিতার পক্ষ থেকে নারীর কোনো মিরাস পায় না। বরং বিয়ের সময় যতটুকু দিয়ে নারীকে বিদায় করা হয়, তা-ই নারীর শেষ প্রাপ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। অথচ ইসলামের বিধান ভিন্ন। ইসলাম নারীকে মিরাস প্রদান করে তার প্রতি যুলুম ও বাড়াবাড়ির পথকে রুদ্ধ করেছে। তাকে সম্পদের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে। তাকে মর্যাদা দিয়েছে। যা অন্য কোনো ধর্ম দিতে পারেনি। পবিত্র কুরআনে মিরাসের বিধান: মহান আল্লাহ তা’আলা কুরআন মাজীদে সূরা নিসার ১১-১২ ও ১৭৬ নং আয়াতে মিরাস বন্টনের নিয়ম-নিতী বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, یُوصِیكُمُ ٱللَّهُ فِیۤ أَوۡلَـٰدِكُمۡۖ لِلذَّكَرِ مِثۡلُ حَظِّ ٱلۡأُنثَیَیۡنِۚ فَإِن كُنَّ نِسَاۤءࣰ فَوۡقَ ٱثۡنَتَیۡنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِن كَانَتۡ وَ احِدَةࣰ فَلَهَا ٱلنِّصۡفُۚ وَلِأَبَوَیۡهِ لِكُلِّ وَ احِدࣲ مِّنۡهُمَا ٱلسُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ لَهُۥ وَلَد، فَإِن لَّمۡ یَكُن لَّهُۥ وَلَد، وَوَرِثَهُۥۤ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ ٱلثُّلُثُۚ فَإِن كَانَ لَهُۥۤ إِخۡوَةࣱ فَلِأُمِّهِ ٱلسُّدُسُۚ مِنۢ بَعۡدِ وَصِیَّةࣲ یُوصِی بِهَاۤ أَوۡ دَیۡنٍ. ‘‘আল্লাহ তোমাদের সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, পুরুষের অংশ দুই নারীর সমান’’। যদি কেবল দুই-ততোধিক নারী থাকে, তবে মৃত ব্যক্তি যা কিছু রেখে গেছে, তারা তার দুই তৃতীয়াংশ পাবে। যদি কেবল একজন নারী থাকে, তবে সে পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। মৃত ব্যক্তির পিতা-মাতার মধ্য হতে প্রত্যেকের প্রাপ্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক ষষ্ঠাংশ, যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে। আর যদি তার কোনো সন্তান না থাকে এবং তার পিতা-মাতাই তার ওয়ারিশ হয়, তবে তার মায়ের প্রাপ্য এক তৃতীয়াংশ। অবশ্য তার যদি কয়েক ভাই থাকে, তবে তার মায়ের জন্যে এক ষষ্ঠাংশ। আর এ বন্টন করা হবে মৃত ব্যক্তি যেই অছিয়ত করে গেছে তা কার্যকর করার কিংবা (তার যদি কোনো) দেনা (থাকে, তা) পরিশোধ করার পর’’। আরো ইরশাদ হয়েছে, ﴿ وَلَكُمۡ نِصۡفُ مَا تَرَكَ أَزۡوَ اجُكُمۡ إِن لَّمۡ یَكُن لَّهُنَّ وَلَدࣱۚ فَإِن كَانَ لَهُنَّ وَلَدࣱ فَلَكُمُ ٱلرُّبُعُ مِمَّا تَرَكۡنَۚ مِنۢ بَعۡدِ وَصِیَّةࣲ یُوصِینَ بِهَاۤ أَوۡ دَیۡنࣲۚ وَلَهُنَّ ٱلرُّبُعُ مِمَّا تَرَكۡتُمۡ إِن لَّمۡ یَكُن لَّكُمۡ وَلَدࣱۚ فَإِن كَانَ لَكُمۡ وَلَدࣱ فَلَهُنَّ ٱلثُّمُنُ مِمَّا تَرَكۡتُمۚ مِّنۢ بَعۡدِ وَصِیَّةࣲ تُوصُونَ بِهَاۤ أَوۡ دَیۡنࣲۗ وَإِن كَانَ رَجُلࣱ یُورَثُ كَلَـٰلَةً أَوِ ٱمۡرَأَةࣱ وَلَهُۥ َخٌ أَوۡ أُخۡتࣱ فَلِكُلِّ وَ حِدࣲ مِّنۡهُمَا ٱلسُّدُسُۚ فَإِن كَانُوۤا۟ أَكۡثَرَ مِن ذَ لِكَ فَهُمۡ شُرَكَاۤءُ فِی ٱلثُّلُثِۚ مِنۢ بَعۡدِ وَصِیَّةࣲ یُوصَىٰ بِهَاۤ أَوۡ دَیۡنٍ غَیۡرَ مُضَاۤرࣲّۚ وَصِیَّةࣰ مِّنَ ٱللَّهِ وَٱللَّهُ عَلِیمٌ حَلِیمࣱ﴾ [النساء ١٢] তোমাদের স্ত্রীগণ যা কিছু রেখে যায়, তার অর্ধাংশ তোমাদের যদি তাদের কোনো সন্তান জীবিত না থাকে। যদি তাদের কোনো সন্তান থাকে, তবে তারা যে অসিয়ত করে যায় তা কার্যকর করার এবং যে দেনা রেখে যায় তা পরিশোধ করার পর, তোমরা তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক চতুর্থাংশ পাবে। আর তোমরা যা কিছু ছেড়ে যাও, তার এক চতুর্থাংশ স্ত্রীরা পাবে, যদি তোমাদের কোনো জীবিত সন্তান না থাকে। যদি তোমাদের কোনো সন্তান থাকে, তবে তোমরা যে অসিয়ত করে যাও তা কার্যকর করার এবং এবং তোমাদের দেনা পরিশোধ করার পর তারা তোমাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির এক এক অষ্টমাংশ পাবে। যার মিরাস বন্টন করা হচ্ছে, সেই পুরুষ বা নারী যদি এমন হয় যে, না তার পিতা-মাতা জিবীত আছে, না সন্তান-সন্ততি, আর তার এক ভাই বা এক বোন জিবীত থাকে তবে তাদের প্রত্যেক্যের প্রাপ্য এক ষষ্ঠাংশ। তারা যদি আরো বেশি সংখ্যক থাকে, তবে তারা সকলে এক তৃতীয়াংশের মধ্যে অংশীদার হবে, (কিন্তু তা) যে অসিয়ত করা হয়েছে তা কার্যকর করার বা দেনা পরিশোধ করার পর যদি (অসিয়ত বা দেনার স্বীকারোক্তি দ্বারা) সে কারো ক্ষতি না করে থাকে। ’’ হাদিসে মিরাসের বিধান: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সা’দ বিন ওয়াক্কাসকে লক্ষ্য করে বলেন, فَالثُّلُثُ، والثُّلُثُ كَثِيْر، إنكَ إنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرُ مِنْ أنْ تَدَعَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُوْنَ النَاسَ فِيْ أَيْدِيْهِمْ. ‘‘এক তৃতীয়াংশ। আর এক তৃতীয়াংশই অধিক। ওয়ারিসকে সম্পদশালী হিসেবে রেখে যাওয়া, তাদেরকে মানুষের নিকট মুখাপেক্ষি অবস্থায় রেখে যাওয়া অপেক্ষা উত্তম। আরো ইরশাদ হয়েছে, لاَ يَرِثُ الْمُسْلِمُ الكَافِرَ وَلَا الْكَافِرُ المُسْلِمَ ‘‘মুসলমান কাফেরের এবং কাফের মুসলমানের ওয়ারিস হবে না’’। প্রথম হাদীসে একজন ব্যক্তির অছিয়ত হতে কতটুকু কার্যকর হবে তা বর্ণিত হয়েছে। আর দ্বিতীয় হাদীস দ্বারা মুসলিম-অমুসলিম এবং অমুসলিম-মুসলিমের ওয়ারিছ হবে না তা ফুটে উঠেছে। পুরুষের অংশ মহিলার দ্বিগুণ কেন? অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, পুরুষের অংশ মহিলার দ্বিগুণ কেন নির্ধারণ করা হলো? এটা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন এর পক্ষ থেকে বিধান। ইসলামী শরীয়াহ বেশ কিছু যুঙ্গিসংগত কারণে নারী-পুরুষের মাঝে পার্থক্য করেছে। নি¤েœ কিছু উল্লেখ করা হলো, ১. মহিলার প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার ছেলে, পিতা, ভাই বা অন্যান্য আত্মীয়দের উপর ন্যস্ত। ২. পুরুষ তার স্ত্রীকে মোহর প্রদান করে এবং সন্তানদের ও স্ত্রীর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এর ব্যবস্থা করে। ৩. মহিলা নিজে কারো ব্যয়ভার বহনে বাধ্য নয়। অথচ পুরুষ পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও দাবীদারদের ভরণ পোষণে আদিষ্ট। এছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে। মিরাসের সুষ্ঠু বণ্টন না করার পরিণতি পূর্বের আলোচনা দ্বারা আমরা জানতে পারলাম যে, মিরাস বন্টনের নিয়ম-নিতী আল্লাহ তা’আলা বর্ননা করেছেন। যে এই নিতী বাস্তবায়ন করবে তার জন্যে রয়েছে জান্নাত। আর যে টালবাহানা করবে বা কৌশল অবল¤œন করে এই বন্টনে কম-বেশি করবে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। ইরশাদ হয়েছে, ﴿تِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۚ وَمَن یُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ یُدۡخِلۡهُ جَنَّـٰتࣲ تَجۡرِی مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَـٰرُ خَـٰلِدِینَ فِیهَاۚ وَذَ لِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِیمُ، وَمَن یَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَیَتَعَدَّ حُدُودَهُۥ یُدۡخِلۡهُ نَارًا خَـٰلِدࣰا فِیهَا وَلَهُۥ عَذَابࣱ مُّهِینࣱ ﴾ [النساء ١٣] ‘‘এসব আল্লাহর (স্থীরকৃত) সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তাকে তিনি এমন উদ্যানসমূহে দাখেল করবেন যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হবে। তারা সর্বদা তাতে থাকবে। আর এটা মহা সাফল্য। আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানি করবে এবং তার সীমাসমূহ লঙ্ঘন করবে, তিনি তাকে আগুনে ফেলবেন, যাতে যে চিরকাল থাকবে এবং তার জন্য রয়েছে অপমানকর শাস্তি। ’’ (সুরা নিসা, আয়াত ১৩-১৪) ইসলামে প্রদত্ত মিরাসের মাধ্যমে বক্তির হক সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। মহান আল্লাহ মানব জাতীর ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্যই এ বিধান আমাদেরকে দিয়েছেন। ব্যক্তির হক নষ্টের জন্যে ব্যক্তির কাছ থেকেই ক্ষমা নিতে হবে। আর যদি কারো হক নষ্ট করে মৃত্যুবরণ করে তাহলে কেয়ামতের দিন নিজের নেক দিয়ে তার পাপকে গ্রহণ করতে হবে । ইরশাদ হয়েছে, ﴿وَلَا تَأۡكُلُوۤا۟ أَمۡوَ الَكُم بَیۡنَكُم بِٱلۡبَـٰطِلِ وَتُدۡلُوا۟ بِهَاۤ إِلَى ٱلۡحُكَّامِ لِتَأۡكُلُوا۟ فَرِیقࣰا مِّنۡ أَمۡوَ الِ ٱلنَّاسِ بِٱلۡإِثۡمِ وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ﴾ [البقرة ١٨٨] ‘‘তোমরা পরস্পরে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করিও না এবং বিচারকের কাছে এই উদ্দেশ্য মামলা রুজু করো না যে, মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনে শুনে পাপের পথে গ্রাস করবে। ’’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৮) আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, عَنْ أبي هريرة؛ أن رسول الله ﷺ قال أتدرون ما المفلس؟ قالوا: المفلس فينا من لا درهم له ولا متاع. فقال ্রإن المفلس من أمتي، يأتي يوم القيامة بصلاة وصيام وزكاة، ويأتي قد شتم هذا، وقذف هذا، وأكل مال هذا، وسفك دم هذا، وضرب هذا. فيعطى هذا من حسناته وهذا من حسناته. فإن فنيت حسناته، قبل أن يقضى ما عليه، أخذ من خطاياهم فطرحت عليه. ثم طرح في النار. ‘‘তোমরা কি জানো, নিংস্ব কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মাঝে নিংস্ব ঐ ব্যক্তি, যার কোনো অর্থ ও সামগ্রী নেই। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার উম্মতের নিংস্ব ঐ ব্যক্তি যে সালাত, সিয়াম ও যাকাতের নেকি নিয়ে কেয়ামতের দিন উঠবে। অথচ সে কাউকে গালী দিয়েছে, কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করেছে, কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। তখন তার নেকি হতে তাদেরকে পরিশোধ করা হবে। প্রাপ্য পরিশোধের আগে তার নেকি শেষ হয়ে গেলে তাদের পাপ নিয়ে তাদের উপর চাপানো হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ’’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৯৭) মিরাস বণ্টন, ধর্মীয় ও সামাজিক জিম্মাদারি ♣ সম্পদের মায়া আমাদের সবার আছে। কারো কম, কারো বেশি। এটি স্বভাবজাত বিষয়। ইসলাম এটাকে অস্বীকার করেনি। কে কি পরিমাণ সম্পদের হকদার তা কুরআনের পাতায় বর্ণিত হয়েছে। যা আমরা জানতে পারলাম। তাই আমাদের সকলের কর্তব্য হলো, কুরআনের ঐশী নির্দেশকে মেনে নেওয়া। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং আবশ্যকীয় বিধান। তাহলে আমরা সমাজকে ইসলামী সমাজে রুপান্তর করতে পারবো। ♣আমাদের প্রত্যেককে সবার অবস্থান থেকে সচেষ্ট হতে হবে। কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত নিয়মকে সমাজে, দেশে বাস্তবায়ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমরা উলামায়ে কেরাম যারা আছি, সর্বপ্রথম নিজের পরিবারের বন্টনকে ঠিক রেখে বয়ানে, লেখনিতে সমাজের মানুষকে এ বিষয়ে উদ্ধুত্ব করতে হবে। হাদীসে এসেছে, أَلا كُلُّكُمْ رَأعِ وَكلكم مسؤول عن رعيته ‘‘তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল। তোমাদেরকে তোমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” ( সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২০০) অতএব ঐক্যবদ্ধভাবে সমাজে একটা প্লাটফর্ম বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। আমাদের শায়েখের পরামর্শক্রমে প্রত্যেকের এলাকায়/গ্রামে একটি ‘‘মিরাস বাস্তবায়ন কমিটি‘ বা এ জাতীয় কোনো নামে সংঘটন করা যেতে পারে। যেমন নবী আলাইহিস সালাম ‘‘হিলফুল ফযুল’’ সংঘটন করেছিলেন। যেখানে সমাজের নেতৃস্থানীয়, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা থাকবেন। এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান, প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও থাকবেন। যার নেতৃত্ব দিবেন হক্কানী উলামায়ে কেরামগণ। সেখান থেকে তদারকি করা হবে, সমাজে মিরাস বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না?? বাস্তবায়িত না হলে, এর রুপরেখা কি হতে পারে। এর পাশাপাশি কুরআনের মিরাস সংক্রান্ত আইনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়িত করার জন্যে চেষ্টা করতে হবে। ‘‘নারী পুরুষের সমান অধিকার’’ নাস্তিক্যবাদী স্লোগান থেকে বের হয়ে কুরআনের স্লোগান সমাজে বাস্তবায়িত করতে হবে। তাহলে আমাদের সমাজ সুন্দর হবে। শোনা যাবে না মিরাস থেকে মাহরুম মা-বোনদের নীরবে-নিভৃতে কান্নার আওয়াজ। আর ভাইয়েরাও বোনদের হকের ক্ষেত্রে যতœবান হবেন। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে কুরআর ও হাদীসের নিয়ম মেনে সমাজকে সুন্দর করার তাওফীক দান করুন, আমিন। লেখক: মুহাদ্দিস, মারকাযুল কুরআন মাদরাসা আদিতমারী, লালমনিরহাট আরএইচ/ |