যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে লাখ লাখ মুসলিম
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:৫৯ সকাল
নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাজ্য সরকারের হাতে থাকা চরম ও গোপন নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষমতা দেশটির লাখো মুসলিম নাগরিককে গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এই ক্ষমতার ফলে বহু মানুষের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব যেকোনো সময় কেড়ে নেওয়া হতে পারে বলে উঠে এসেছে এক গবেষণা প্রতিবেদনে। খবর মিডল ইস্ট আইয়ের।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার ও নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রানিমিড ট্রাস্ট ও রিপ্রিভ যৌথভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমান আইনি কাঠামোর আওতায় দেশটির প্রায় ৯ মিলিয়ন বা ৯০ লাখ (প্রায় ১৩ শতাংশ) মানুষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের কারণে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।

অধিকারকর্মীরা সতর্ক করে বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ক্ষমতা দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে পারিবারিক বা বংশগত সম্পর্ক রয়েছে এমন নাগরিকদের ওপর অসমভাবে প্রভাব ফেলছে।

উভয় প্রতিষ্ঠানই বলেছে, বর্তমান নাগরিকত্ব বাতিলের ব্যবস্থা মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য একটি পদ্ধতিগত হুমকিতে পরিণত হয়েছে, যা ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের সঙ্গে বৈষম্যের অভিযোগে আলোচিত উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির সঙ্গে তুলনীয়।

প্রচলিত আইনে সরকার যদি মনে করে কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য, তাহলে তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করা যেতে পারে—এমনকি তিনি ওই দেশে কখনো বসবাস না করলেও।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে—এমন ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী মুসলিম জনগোষ্ঠীর বড় অংশ এই অঞ্চলগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত। বাস্তবে যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই দক্ষিণ এশীয়, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বংশোদ্ভূত মুসলিম বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর প্রতি পাঁচজনের মধ্যে তিনজন নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিপরীতে, শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি মাত্র ২০ জনে একজন।

রিপ্রিভের কর্মকর্তা মায়া ফোয়া এবং রানিমিড ট্রাস্টের পরিচালক শাবনা বেগম নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক ও প্রায় নজরদারিহীন ক্ষমতার সমালোচনা করেছেন এবং নাগরিকত্বকে মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করার দাবি জানিয়েছেন।
রিপ্রিভের কর্মকর্তা মায়া ফোয়া মিডল ইস্ট আইকে বলেন, রাজনৈতিক সুবিধার জন্য আগের সরকার মানব পাচারের শিকার ব্রিটিশ নাগরিকদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছিল। আর বর্তমান সরকার এ চরম ও গোপন ক্ষমতা আরও বাড়িয়েছে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পরবর্তী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ৯০ লাখ মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে পারেন, তাদের জন্য এটি বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয়।

রানিমিড ট্রাস্টের পরিচালক শাবনা বেগম বলেন, নাগরিকত্ব কোনো সুযোগ নয়, এটি একটি অধিকার। অথচ একের পর এক সরকার নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে দ্বিস্তরের নীতি চালু করছে। তিনি এই ক্ষমতাকে উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির জন্য দায়ী আইনগুলোর মতোই কার্যকরী নজরদারিবিহীন বলে মন্তব্য করেন।

প্রতিবেদনে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের বহুল আলোচিত উদাহরণ হিসেবে শামিমা বেগমের ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া এই কিশোরীর নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় তাকে বাংলাদেশের নাগরিক দাবি করে, যদিও বাংলাদেশ সরকার সে দাবি অস্বীকার করেছে।
এই প্রতিবেদন এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন কনজারভেটিভ ও রিফর্ম ইউকে দলের নেতারা আরও কঠোর অভিবাসন নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি। সূত্র: মিডল ইস্ট আই

এনএইচ/