মুফতি আমিনী রহ.-এর চলে যাওয়ার ১৩ বছর
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:৪০ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

দেশের ইসলামি রাজনীতির সিংহপুরুষ হিসেবে পরিচিত মুফতী ফজলুল হক আমিনী রহ.-এর চলে যাওয়ার দিন আজ। ১৩ বছর আগে এই দিনে (১২ ডিসেম্বর ২০১২) তিনি পরপারের উদ্দেশে পাড়ি জমান। এত বছর পরও দেশের ইসলামি অঙ্গন তাঁর ঐতিহাসিক নেতৃত্বের শূন্যতা অনুভব করে।

মুফতী আমিনীর জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। নিজ গ্রাম আমিনপুর থেকেই তাঁর আমিনী হয়ে ওঠা। তবে আমিনপুরী না হয়ে আমিনী হওয়ার পেছনে একটা গল্প আছে। মুজাহিদে আজম মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. তাঁকে প্রথমে ‘ফজলু’ পরে ‘আমিনী’ নামে ডাকা শুরু করেন। একসময় তা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।

দেশসেরা চার প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইউনূসিয়া, মোস্তফাগঞ্জ, বড়কাটারা ও লালবাগে তৎকালীন বাংলার শ্রেষ্ঠ সব উলামায়ে কেরামের সোহবত পেয়েছেন। বিশেষ করে বাংলার প্রধান দুই নক্ষত্র হজরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী ও হাফেজ্জী হুজুরের সোহবতে তিনি আলোকিত হয়েছেন।

১৯৭০ সালে হাফেজ্জী হুজুর রহ. প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা-ই নূরীয়ায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু হয়। একই বছর তিনি হাফেজ্জী হুজুরের কন্যার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৫ সালে তিনি লালবাগ মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে এই মাদরাসার সহকারী মুফতি, প্রধান মুফতি, ভাইস প্রিন্সিপাল ইত্যাদি দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৮৭ সালে হাফেজ্জী হুজুরের ইন্তেকালের পর মাদরাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্ব গ্রহণ করেছন এবং ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত এই মহান দায়িত্ব পালন করেন।

হজরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর হাত ধরে তিনি রাজনীতির ময়দানে আগমন করেন। তাঁর রাজনীতি ও আন্দোলনকে তিনটি ধাপে ভাগ করা যায়। প্রথম ধাপ ১৯৮১ থেকে ৮৭ সালে হযরত হাফেজ্জীর ইন্তেকাল পর্যন্ত। এ সময়টায় তিনি তার পাওয়ারফুল কণ্ঠ ও স্বভাবসুলভ মেধায় দ্যুতি ছড়ালেও তিনি মূলত শিক্ষানবিশ ছিলেন। প্রচলিত রাজনীতির ধরন, চেনা-অচেনা ওলিগলি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে ওঠা-বসার মধ্য দিয়ে শিখেছেন। সমৃদ্ধ করেছেন অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার।

আর দ্বিতীয় ধাপে ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন, কমিটি ও সংগঠন প্রতিষ্ঠা এবং মানুষকে ইসলামী আন্দোলন ও ইসলামী রাজনীতির সাথে পরিচয় করাতে করাতে তিনি একজন যোগ্য ও অনন্য নেতায় পরিণত হয়েছেন। বাবরী মসজিদ অভিমুখে লংমার্চ, তসলিমাবিরোধী আন্দোলনের মতো ঐতিহাসিক ও পাবলিক কাছে টানতে পারার মতো আন্দোলনগুলো পুরো উপমহাদেশের ইতিহাসেই বিরল। অন্যদিকে উলামা কমিটি, জমিয়তুল আনসার, সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ, ইসলামী মোর্চার মতো বিভিন্ন কমিটি ও শক্তিশালী সংগঠন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তার অচিন্তনীয় সাংগঠনিক দক্ষতার প্রকাশ ঘটেছে এবং তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দেশসেরা সংগঠক হিসেবে ।

তৃতীয় ধাপে ১৯৯৭ সালে চারদলীয় জোট গঠনের মধ্য দিয়ে একজন জাতীয় নেতা হিসেবে তার পথচলা শুরু। এরপর কেবল এগিয়ে গিয়েছেন। নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হয়েছেন। ফতোয়াবিরোধী ঐতিহাসিক আন্দোলন এবং সর্বশেষ নারীনীতি ও শিক্ষানীতির প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতা হিসেবে নিজেকে পাহাড়সম উচ্চতায় উন্নীত করেছেন ।

শেষ জীবনে তিনি আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার হন। তাঁকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখে সরকার। সেই অবস্থাতেই তিনি ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর পরপারের উদ্দেশে পাড়ি জমান।

এনএইচ/