
|
রিকশাচালকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে আস-সুন্নাহর কর্মশালা শুরু
প্রকাশ:
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:২৭ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
সমাজের প্রান্তিক কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শ্রমজীবী গোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে একটি ব্যতিক্রমী কর্মশালার আয়োজন করেছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। ‘রিকশাচালকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মশালা’ শীর্ষক এই আয়োজনে প্রাথমিকভাবে ৫০০ রিকশাচালককে নিয়ে অর্ধদিনব্যাপী বিশেষ প্রশিক্ষণ ও গাইডলাইন প্রদান করা হয়। ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট ইসলামি আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই কর্মশালার বিস্তারিত ও অংশগ্রহণকারীদের আবেগঘন প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন। কর্মশালার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, ছাত্রসহ সকল পেশার মানুষ নিয়েই কাজ করতে চাই। কিন্তু কর্মশালার উদ্বোধন আমরা রিকশাচালকদের দিয়ে করলাম কারণ, সমাজে তাদের অবদান অনেক, কিন্তু পাওনা স্বীকৃতি ও সুযোগ খুবই কম। তারা অনেকাংশেই অবহেলিত।’ আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে রিকশাচালকদের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। ধর্মীয় ও নৈতিক দিক: ‘আত্মপরিচয় ও প্রয়োজনীয় দীনি জ্ঞান’ এবং ‘ইসলামে শ্রমের মর্যাদা ও হালাল রুজির গুরুত্ব’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন মিরপুর মসজিদুল জুমা কমপ্লেক্সের খতীব আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। শায়খ আহমাদুল্লাহ নিজে ‘সুন্দর আচরণ, জীবনযাপনের গাইডলাইন ও স্ত্রী-সন্তানের প্রতি করণীয়’ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। পেশাগত নিরাপত্তা ও আইন: ‘ট্রাফিক আইন, রাস্তার নিরাপত্তা ও সড়ক দুর্ঘটনা রোধ’ বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গুলশান) মো. জিয়াউর রহমান এবং বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাবিবুর রহমান। স্বাস্থ্য সুরক্ষা: রিকশাচালকদের পেশাগত কারণে সৃষ্ট শারীরিক চাপ, হৃদরোগ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং এসব থেকে প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল আলম সুমন। আর্থিক সক্ষমতা: ‘স্বল্প আয়ে সংসার পরিচালনা, সঞ্চয় ও ঋণমুক্ত হওয়ার কৌশল’ নিয়ে বাস্তবসম্মত ও কার্যকরী পরামর্শ দেন প্রকৌশলী সাব্বির আহম্মেদ। কর্মশালা শেষে সকল অংশগ্রহণকারী রিকশাচালক ও আয়োজকদের নিয়ে জামাতের সাথে জুমার নামাজ আদায় করা হয়। শায়খ আহমাদুল্লাহ এই অভিজ্ঞতাকে ‘স্মরণীয়’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘প্রায় পঁচিশ বছর যাবৎ জুমা পড়ালেও রিকশাচালক ভাইদের নিয়ে প্রথমবারের মতো জুমা পড়ানো- এটা এক অনন্য অনুভূতি।’ কর্মশালায় রামপুরা থেকে আসা এক রিকশাচালক তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘রাস্তায় মানুষ অনেক সময় আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। কিন্তু আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন আজ আমাদের ডেকে এনে যে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে, তা আমি জীবনেও ভুলব না। এখানকার কথাগুলো আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। মনে হচ্ছে আমরাও সমাজের সম্মানিত মানুষ।’ আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফাউন্ডেশনের ঘোষণায় ১,২০০ এর বেশি রিকশাচালক নিবন্ধন করলেও আসন সীমিত থাকায় প্রথম ধাপে ৫০০ জনকে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। অবশিষ্টদের জন্য দ্রুত আরও কর্মশালার আয়োজনের ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের এক মাস বিশেষ তত্ত্বাবধানে রাখা হবে এবং প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে সেরাদের মধ্য থেকে একজনকে ওমরা ও অন্যদেরকে বিশেষ উপহার প্রদান করা হবে। এই কর্মশালা শুধুই প্রশিক্ষণ নয়, বরং সমাজের একটি অবহেলিত শ্রেণিকে মর্যাদা ও জ্ঞানসামর্থ্য দানের একটি সামগ্রিক প্রচেষ্টা বলে মনে করছেন সামাজিক বিশ্লেষকরা। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের এমন উদ্যোগ অন্যান্য সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে অনুপ্রাণিত করতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা। আরএইচ/ |