জমিয়তকে বিএনপির আসন ছাড় আটকে আছে কোথায়?
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৪:৫৪ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

বিশেষ প্রতিনিধি

এবারের নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই জামায়াতে ইসলামী বলয়ে চলে গেলেও এখনো বিএনপির সঙ্গে রয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। ইতোমধ্যে দলটি দেশের বেশির ভাগ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতার মাধ্যমেই ভোটে অংশ নিতে চায়। তবে ভোটের তফসিল ঘোষণার সময় ঘনিয়ে এলেও এ ব্যাপারে এখনো বিএনপির সঙ্গে জমিয়তের চূড়ান্ত বোঝাপড়া হয়নি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিএনপি প্রথম দফায় ২৩৬টি এবং গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় দফায় ৩৬টি আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। বাকি ২৮টি আসন এখনো ফাঁকা রয়েছে। মিত্রদের এসব আসনে ছাড় দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেসব আসনে শরিকদের ছাড় দেওয়ার আলোচনা ছিল সেগুলোতেও প্রার্থী ঘোষণা করায় শরিকদের কারও কারও মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এমনকি কেউ কেউ বিএনপিকে ‘বেঈমান’ হিসেবেও আখ্যায়িত করছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের টার্গেটকৃত কয়েকটি আসনেও প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ফলে দলটির মধ্যেও এক ধরনের ক্ষোভ কাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির কাছে জমিয়ত ১০টি আসনে ছাড় চায়। সেই আসনগুলো হলো সিলেট-৫, সিলেট-৪, সিলেট-৬, সুনামগঞ্জ-২, সুনামগঞ্জ-৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, নারায়ণগঞ্জ-৪, নীলফামারী-১, চট্টগ্রাম-৫, নড়াইল-২। 

তবে বিএনপি জমিয়তকে চারটি আসনে ছাড় দিতে চায়। এর মধ্যে দলের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুককে সিলেট-৫, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীকে নীলফামারী-১, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ এবং মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমীকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন ছাড়তে রাজি বিএনপি।

জমিয়ত এসব আসনের পাশাপাশি সিলেট-৪ আসনে অ্যাডভোকেট মাওলানা মোহাম্মদ আলীর জন্য ছাড় চেয়েছে। তবে আসনটিতে ইতোমধ্যে বিএনপি সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিএনপি-জমিয়তের মধ্যে এই আসনটি নিয়েই টানাপোড়েন চলছে। জমিয়ত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাওলানা মোহাম্মদ আলী ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন- বিএনপি থেকে ছাড় না পেলেও তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তিনি আগেও এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং একটি ভোটব্যাংক রয়েছে তার।

বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি কোথায় আটকে আছে এ ব্যাপারে জানতে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমাদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত আছে। এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি। আশা করছি শিগগির চূড়ান্ত হয়ে যাবে।

তবে সূত্র জানিয়েছে, আসন ছাড় প্রশ্নে জমিয়তের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে ঘোষিত প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখার বার্তা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে জমিয়ত এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কোনো কোনো নেতা।

আসন ছাড় প্রশ্নে বিএনপি ও জমিয়তের মধ্যে টানাপোড়েন চললেও শেষ পর্যন্ত বিষয়টি সুরাহা হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিএনপির জন্য কওমি মাদরাসার প্রতিনিধিত্বশীল দল হিসেবে জমিয়তকে পাশে রাখা জরুরি। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আদর্শগত বিরোধ থাকায় জামায়াতে ইসলামীর বলয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এজন্য বিএনপিকে নিরাপদ মনে করে দলটি। এককভাবে নির্বাচন করলে উল্লেখযোগ্য ভোট না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এলএইস/