
|
চোখে আলো নেই, তবু কোরআনের নূর ছড়িয়ে দিচ্ছেন হাফেজ মিরাজ ইসলাম
প্রকাশ:
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:১৬ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
অসুস্থ হয়ে হারিয়েছেন চোখের আলো। কিন্তু মনের আলো আর ইচ্ছাশক্তির জোরে কোরআনে হাফেজ হয়েছেন মিরাজ ইসলাম। শ্রবণশক্তির মাধ্যমে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেছেন। এরপর থেকে ১৫ ধরে কোমলমতি শিশুদের নিজেই কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন। হাফেজ মিরাজুল ইসলামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের দেবত্র গ্রামে। তার বাবা আবুল হোসেন ছিলেন একজন কৃষক। চার ভাইবোনের মধ্যে মিরাজুল তৃতীয়। দুই সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে কোনমতে চলছে সংসার। ১৯৯০ সালে জন্মগ্রহণ করা মিরাজুলের ১৪ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বর হয়। পরে ঢাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু করেন। সাত-আট মাস ধরে জ্বর থাকার পর একদিন ডান চোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেন। তারপর বাঁ চোখেরও দৃষ্টিও চলে যায়। তখন থেকেই পুরোপুরি দৃষ্টি হারান তিনি। তবু তার বাবা চাইতেন মিরাজুল যেন কোরআনে হাফেজ হন। হাফেজ মিরাজুল ইসলাম জানান, ছোটবেলায় কোরআন শেখার জন্য বেকুল হয়ে থাকতাম। এখন বাচ্চাদের কোরআন তিলাওয়াত শেখাতে পারছি, এটা আমার কাছে ভাগ্য। আমাদের মাদরাসায় শিক্ষক আছেন তিন জন। মাদরাসায় এখন ৪০ থেকে ৪৫ জনের মতো ছাত্র আছে। এর মধ্যে তিনজন এতিম ও হাফেজ রয়েছে। ছোটবেলায় কোথাও কোরআন তিলাওয়াত শুনলে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করে বলতেন তাকে যেন একদিন আল্লাহ কোরআনে হাফেজ বানান। প্রবল ইচ্ছাশক্তির কারণে ২০০৮ সালে যশোর দারুল সালাম কমপ্লেক্সে তিন বছর পড়ে ৩০ পারা কোরআন মুখস্থ করেন। সেখানে ২০১১ সালে তিনি হাফেজ খেতাব পান। ২০১৭ সালে চালিতাবুনিয়া ছলেহীয়া হামিদিয়া দীনিয়া ও হাফিজি মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। নাম মাত্র বেতনে চাকরি করেন। সেই বেতনও ঠিক মতন পান না। তিনি শত শত ছাত্রকে কোরআন শিখিয়েছেন। তার হাতে ছয়জন ছাত্র হাফেজ হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিক্ষকতার পাশাপাশি তার জীবনযাপনে এই মাদ্রাসার ছাত্ররাই তার চলার পথের সাথি। টয়লেটে যাওয়া, গোসল করা, খাওয়াদাওয়া এমনকি কোথাও বেড়াতে যাওয়ার ক্ষেত্রেও ছাত্ররাই তাকে সাহায্য করে থাকে। শিক্ষকের পড়া কেমন লাগছে জানতে চাইলে মাদরাসার ছাত্র আবদুল্লাহ বলেন, আমি এই মাদরাসার ছাত্র। স্যার চোখে না দেখলেও শিক্ষক হিসেবে অত্যন্ত ভালো একজন শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা তাকে ‘অন্ধ হুজুর’ হিসেবে চেনে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শফিকুল আলম বলেন, তার এমন কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা সরকারি দিক থেকে যেকোনো সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। তাকে আমরা ভাতার আওতায় এনেছি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম জানান, তার বিষয়ে জানতে পেরে খোঁজখবর নিয়েছি। উপজেলা পরিষদ থেকে যতটুকু সম্ভব তাকে সহযোগিতা করি। ভবিষ্যতে সহযোগিতা আসলে অবশ্যই আমরা দেবো। চোখে দেখেন না মিরাজুল, ১৫ বছর ধরে কোরআনের আলো ছড়াচ্ছেন। আরএইচ/ |