
|
আট দলের বোঝাপড়া শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকবে তো?
প্রকাশ:
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০১:১৬ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
বিশেষ প্রতিনিধি দুটিই ইসলামি দল। অথচ দল দুটির মধ্যে বিরোধ ছিল তুঙ্গে। প্রকাশ্যে এক দলের নেতারা আরেক দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেন। তাদের সেই বক্তব্যের ভিডিওগুলো এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়ায়। বিরোধীরা সেগুলো প্রচার করে। এতে তারা বিব্রত হন। তবে অতীতের সব বিরোধ ভুলে দল দুটি এখন খুবই কাছাকাছি। একসঙ্গে আন্দোলন করছে, সামনে নির্বাচনও একসঙ্গে করার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের সঙ্গী হয়েছে আরও ছয়টি দল। বলছিলাম এই মুহূর্তের রাজনীতিতে আলোচনায় থাকা আট দলের প্রধান দুটি দল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের কথা। কাগজেপত্রে আটটি দল হলেও আলোচনায় এই দল দুটি। তাদের মধ্যে বোঝাপড়ার ওপরই নির্ভর করছে বিএনপির বিপরীতে গড়ে ওঠা এই রাজনৈতিক মোর্চার ভবিষ্যৎ। ইসলামি ও সমমনা আটটি দল একত্রিত হলেও তারা এটাকে জোট বলতে নারাজ। তারা এটাকে নির্বাচনি সমঝোতা বা মোর্চা হিসেবে অভিহিত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। যদিও গণমাধ্যম এটাকে জামায়াত জোট হিসেবেই অভিহিত করছে। পাঁচটি দাবিতে একত্রিত হওয়া আটটি দল মাস-দুয়েক ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছে। তাদের দাবির একটা বড় অংশ ইতোমধ্যে পূরণ হয়ে গেলেও তারা এখনই মাঠ ছাড়ছে না। বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করছে দলগুলো। এর মাধ্যমে মূলত তারা ভোটের আগে নিজেদের শক্তির জানান দিচ্ছে। একদিকে আন্দোলনের মাঠে সরব থাকলেও নির্বাচনে আসন সমঝোতায়ও কাজ করছেন দলগুলোর নেতারা। দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে ১৬ সদস্যের একটি লিয়াজোঁ কমিটি করা হয়েছে। আসন সমঝোতার আলোচনা তারা অনেক দূর এগিয়েও নিয়েছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তফসিলের আগেই আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হতে পারে। এদিকে অতীতের বিরোধ ভুলে কাছাকাছি আসা দলগুলোর বোঝাপড়া শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকবে কি না সেটা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এই সমঝোতা শেষ পর্যন্ত নাও টিকতে পারে। বিশেষ করে আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে ছাড়ের মানসিকতা না থাকলে ঐক্যে ফাটল দেখা দিতে পারে। দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়ায় চিড় ধরতে পারে বলে আভাস এখনই মিলতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে যে কয়েকটি সমাবেশ হয়েছে সেখানে সূক্ষ্ম কিছু বিষয় নিয়ে দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধের আভাস পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব বিষয়ে লেখালেখিও হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের কোনো কোনো কর্মী অভিযোগ করছেন, যে কয়টি সমাবেশে দলের আমির ও পীর সাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমকে সভাপতি করা হয়েছে, সেখানে প্রধান অতিথি করা হয় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানকে। প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি আগে বক্তব্য দেওয়ার পরপরই জামায়াত কর্মীরা উঠে চলে যান। এতে সভায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পীর সাহেব চরমোনাই যখন সভাপতির বক্তব্য দিতে উঠেন তখন সভা থাকে এলোমেলো। ঢাকা ও খুলনার সমাবেশে এটা চোখে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মী। শুধু এটাই নয়, আরও কিছু বিষয়েও আপত্তি পাওয়া গেছে। খুলনা ও বরিশালের সমাবেশে ‘হাতপাখা-দাঁড়িপাল্লা’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এটা নিয়ে মনক্ষুণ্ন হচ্ছেন অন্য দলগুলোর নেতাকর্মীরা। তাদের বক্তব্য হলো- আট দলের মধ্যে সমঝোতা। কিন্তু প্রতীকের স্লোগান উঠছে দুই দলের। তাহলে বাকি ছয়টি দল কী? তারা এই ঐক্যে কেন আছে? একটি ইসলামি দলের একজন জেলা পর্যায়ের নেতা নাম প্রকাশ না করে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন এক সময় পরস্পরের বিরুদ্ধে লেগে থাকত। এখন তারা এতোটাই প্রিয় হয়ে গেছে- একসঙ্গে দুই দলের প্রতীকের স্লোগান দেয়। তাহলে আমরা এই জোটে কেন আছি? আমাদের কি প্রতীক নেই? এটা ঐক্য নষ্ট করবে।’ কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলেও দলগুলোর বোঝাপড়ায় চিড় ধরার আভাস পাওয়া গেছে। এমনকি সমাবেশে কারা বক্তব্য দেবেন, কাদের নাম আগে যাবে এটা নিয়েও বিরোধ দানা বাঁধছে। তবে তারা সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে হলেও শেষ পর্যন্ত একবাক্সে ইসলামপন্থীদের ভোট একত্রিত করতে চান বলে জানিয়েছেন। খেলাফত মজলিসের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করে ক্ষোভের সঙ্গে বলছিলেন, জোট বা সমঝোতা করতে হলে সবাইকে সম্মান করতে হবে। সম্মিলিত সমাবেশে বিশেষ দলের বিশেষ কোনো নেতাকে হাইলাইট করতে গেলেই ঝামেলার সৃষ্টি হবে। ঐক্য ধরে রাখতে সমতার কোনো বিকল্প নেই। এ সময় ওই নেতা বলছিলেন, আমাদের দলের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের। তাঁর নির্বাচনি এলাকা হবিগঞ্জ-৪। এখান থেকে তিনি বারবার নির্বাচন করেছেন। এবারও তিনি ওই আসনের প্রার্থী। আমরা যেহেতু আট দলে আছি, সেখানে জামায়াত হঠাৎ করে প্রার্থী বদলে একজন সাংবাদিককে দিয়েছে। এর একটা ভুল বার্তা যায় নেতাকর্মীদের কাছে। আমরা চাই কারও কারণে যেন ঐক্যে ফাটল না ধরে। এলএইস/ |