সম্পত্তি নিয়ে ভাই-বোনের দ্বন্দ্ব: ২৩ ঘণ্টা পর বাবার লাশ দাফন
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:০৫ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

সম্পত্তির ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে দ্ব›দ্ব চলছিল চার বোন ও এক ভাইয়ের। সম্পত্তির এ কারণে একমাত্র ছেলের কাছে আশ্রয় না পেয়ে বৃদ্ধ বাবা ছিলেন মেয়ের বাড়িতে। বাবার মৃত্যুর পর লাশ বাড়িতে দাফনের জন্য আনা হলে গ্রহণ করেনি ছেলে। ২৩ ঘণ্টা পর থানা-পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে অবশেষে মরদেহ দাফন হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের পশ্চিম সরলিয়া গ্রামে। এদিকে সম্পত্তির কারণে নিজের বাবার মরদেহ আটকে রাখা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার পশ্চিম সরলিয়া গ্রামের বাসিন্দা তসলিম উদ্দীন (৭০)। একমাত্র ছেলে ভরণপোষণ না দেওয়ায় মহিষমারী গ্রামে মেয়ে বিউটি আক্তারের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন তিনি। বিউটি আক্তার তাঁর দেখাশোনা ও চিকিৎসার ভার নেন।

বার্ধক্যজনিত কারণে রবিবার সন্ধ্যায় মারা যান তসলিম উদ্দীন। আত্মীয়স্বজনদের জানিয়ে রাতেই দাফন করার জন্য মরদেহ আনা হয় পশ্চিম সরলিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে। কিন্তু ছেলে মহসিন আলী বাবার মরদেহ বাড়িতে ঢোকাতে দেননি। পরে চাচার বাড়িতে রাখা হয় রাতভর।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মেয়েদের নামে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার কারণে মহসিন আলীর বাবার মৃত্যু স্বাভাবিক হয়নি অভিযোগ তুলে রবিবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর মরদেহ দাফন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুরোধে মরদেহ নেওয়া হয় ছেলের বাড়িতে।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মহসিন আলীর বাড়ির বারান্দায় খাটিয়ার ওপর বাবা তসলিম উদ্দীনের মরদেহ রয়েছে। একটি ফ্যানের বাতাস গায়ে দেওয়া হচ্ছে। পাশে দুটি চেয়ার পড়ে আছে ফাঁকা। মরদেহের পাশে কোনো আত্মীয়স্বজনকে দেখা যায়নি। বাড়িতে কথা বলতে চেষ্টা করলেও কেউ মুখ খোলেননি। কথা বলতে চাননি মরদেহ পড়ে থাকা নিয়ে।

পরে বালিয়াডাঙ্গী থানায় গিয়ে দেখা হয় ছেলে মহসিন আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাবা বোনের বাড়িতে মারা যাওয়ায় সন্দেহ হয়েছিল। এ কারণে থানায় অভিযোগ করেছি। সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ আগের। এখানে সম্পত্তির কোনো বিষয় নয়। এখন আমরা সবাই আপস হয়ে গেছি।’

এ বিষয়ে মৃতের মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তাঁরা কেউ রাজি হননি। জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য হবিবুর রহমান বলেন, মৃত্যুর পরপরই জমি ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে ছেলে মহসিন আলী লাশ আটকে রাখেন। পরে দুপক্ষকে নিয়ে বসে মীমাংসা করা হয়। সোমবার দুপুরের পর কবরস্থানে কবর খোঁড়ার অনুমতি দেন মহসিন আলী। এরপর বিকেল ৪টায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল হুদা বলেন, এটি সম্পূর্ণ পারিবারিক সমস্যা। রবিবার রাতে মহসিন আলী একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। সোমবার কোনো অভিযোগ না থাকায় ও মৃত্যুর বিষয়ে সন্দেহ দূর হওয়ায় ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়ার পর দাফন সম্পন্ন হয়।

আরএইচ/