
|
বাংলাদেশে পাটভিত্তিক উৎপাদনে বড় বিনিয়োগে আগ্রহী চীন
প্রকাশ:
২৮ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:৩৩ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
বাংলাদেশে সবুজ প্রযুক্তি, পাট, টেক্সটাইল ও ওষুধ শিল্পে বড় ধরনের বিনিয়োগে আগ্রহী চীনা বিনিয়োগকারীরা। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষিত উৎপাদন খাতকেন্দ্রিক রূপান্তর পরিকল্পনার সঙ্গে এই আগ্রহের সামঞ্জস্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক্সপোর্ট–ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়নার উপ-সভাপতি ইয়াং দংনিং। গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন চীনের রাষ্ট্রীয় থিঙ্ক–ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির প্রেসিডেন্ট ড. মা জুন। ইয়াং দংনিং বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে চীন বড় অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করলেও এখন তাদের বিনিয়োগকারীরা ক্রমশ উৎপাদন খাতে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এর মধ্যে রয়েছে ছাদ–সোলার প্রযুক্তি এবং বাংলাদেশের ‘সোনালি আঁশ’ পাট—যা দিয়ে জ্বালানি, বায়ো–সার ও প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও জানান, এসব উৎপাদনমুখী বিনিয়োগে সহায়তা দিতে আগ্রহী এক্সিম ব্যাংক ও চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। ড. মা জুন বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্প চীনা বিনিয়োগকারীদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। তারা বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে চান। তার ভাষায়, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো এক মিলিয়ন টন পর্যন্ত পাট ব্যবহার করে সবুজ জ্বালানি, সার ও প্লাস্টিকের টেকসই বিকল্প তৈরি করতে প্রস্তুত। প্রধান উপদেষ্টা চীনের এই আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের উৎপাদন খাতকে রূপান্তর করতে সহায়তা করতে পারে—যা থেকে উন্নত দেশসহ চীনে রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি হবে। ‘আমরা এসব খাতে পূর্ণ গতিতে এগোতে পারি,’ বলেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্বাস্থ্যসেবা খাতেও চীনের ব্যাপক বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌরশক্তি উৎপাদক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে সোলার প্যানেল ও রুফটপ সোলার সিস্টেমে চীনের বিনিয়োগ বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া তিনি চীনা শিল্পকারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের আহ্বান জানান এবং বন্ধ রাষ্ট্র–মালিকানাধীন পাটকলগুলোকে যৌথ উদ্যোগে ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। ইয়াং দংনিং জানান, চীনা কোম্পানিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও ই–কমার্স খাতেও বিনিয়োগ সম্ভাবনা খুঁজছে। প্রধান উপদেষ্টা চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে কারখানা স্থাপনের আমন্ত্রণ জানান—যেখানে দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর এবং মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বাজারের নিকটাকর্ষণ রয়েছে। ‘এ অংশের সমুদ্র–অ্যাকসেস বিশাল। এখানে কারখানা স্থাপন করে উন্নত দেশসহ চীনেও রপ্তানি করা সম্ভব,’ বলেন তিনি। তিনি চীনা অবকাঠামো কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশ–দক্ষিণ চীন রেল সংযোগ স্থাপনেরও আহ্বান জানান, যাতে পুনর্বাসিত শিল্পকারখানার পণ্য পরিবহন ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সহজ হয়। বৈঠকের শুরুতে হংকংয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এলএইস/ |