গাজার ঐতিহাসিক প্রাসাদ ধ্বংস, ওসমানীয় আমলের বিরল প্রত্নবস্তু লুট
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:১০ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বহু শতাব্দীর ইতিহাস ধ্বংস হয়ে গেছে। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে এই আগ্রাসন শুরু হলেও, ইসরায়েলি হামলা থেকে রক্ষা পায়নি গাজার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও। এর ফলে দুই বছরের এই যুদ্ধে গাজা থেকে হারিয়ে গেছে বা লুট হয়ে গেছে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে ওসমানীয় আমল পর্যন্ত বিস্তৃত ২০ হাজারের বেশি বিরল প্রত্নবস্তু।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। সরকারি মিডিয়া অফিসের প্রধান ইসমাইল আল-থাওয়াবতে সোমবার বার্তাসংস্থাটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ফিলিস্তিনিদের পরিচয় মুছে ফেলতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় প্রত্নস্থলগুলোকে পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করেছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গাজা উপত্যকায় ‘৩১৬টির বেশি’ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ও ঐতিহাসিক ভবন পুরোপুরি কিংবা আংশিক ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ধ্বংস হওয়া এই স্থাপনাগুলোর অধিকাংশই মামলুক ও ওসমানীয় আমলের, বাকিগুলো প্রাথমিক ইসলামি যুগ ও বাইজেন্টাইন আমলের। এই ধ্বংসযজ্ঞে বাদ যায়নি মামলুক আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক প্রাসাদ কাসর আল-বাশাও। 

ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেরও পুরোনো। অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে সেন্টার ফর কালচারাল হেরিটেজ প্রিজারভেশনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ হামুদা আল-দাহদার জানান, গাজার পুরোনো শহরের আল-দারাজ এলাকায় অবস্থিত এই প্রাসাদের ৭০ শতাংশ অংশ ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

থাওয়াবতে বলেন, গাজার ঐতিহ্যের ওপর হামলা চালিয়ে এটা শুধু ধ্বংসই করা হয়নি— এটি ছিল সংগঠিত লুটপাট। আন্তর্জাতিক আইনে যা অপরাধ এবং বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর আঘাত হিসেবে বিবেচিত। তিনি জানান, প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে ওসমানীয় যুগ পর্যন্ত বিস্তৃত ২০ হাজারের বেশি প্রত্নবস্তু যুদ্ধের সময় হারিয়ে গেছে। এসব প্রত্নবস্তু স্থানীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত ছিল। 

দাহদারও নিশ্চিত করেছেন যে, ঐতিহাসিক এই স্থাপনায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার পর হাজারো বিরল প্রত্নবস্তু উধাও হয়ে গেছে। তিনি বলেন, প্রতিটি প্রত্নবস্তুই ছিল ইতিহাসের অংশ... এসব লুটপাট জাতীয় পরিচয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে। এটি মানবজাতির সমষ্টিগত ঐতিহ্যের ওপর এক গুরুতর অপরাধ। 

উল্লেখ্য, ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে গাজা দখল করে এবং ১৯৯৪ সালে সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সর্বশেষ যুদ্ধেও প্রাসাদটি আবার ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাটের শিকার হয়। একই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি

NH/