হারাম সম্পর্ক, অন্ধকারের গোলকধাঁধা থেকে হালাল ভালোবাসার আলো 
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:০৯ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

||জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান|| 
 
মানুষের জীবন আলো আর অন্ধকারের এক অদ্ভুত মিশ্রণ। এমনই এক জীবনযাপন করেন সেই তরুণী, যার সকাল শুরু হয় কুরআনের তাজা নিঃশ্বাসে এবং শেষ হয় সালাতের শান্ত পরম্পরায়। পর্দার শালীনতায় তিনি নিজেকে সুরক্ষিত রাখেন, সুন্নাহকে অনুসরণের প্রশান্তিতে তিনি জীবন সাজান। তাঁর ইমানি দৃঢ়তায় যেন কোনো দাগ নেই—যেন রৌদ্রস্নাত পথ ধরে হেঁটে যাওয়া এক নির্মল আত্মা। কিন্তু আলোর ফাঁকে ফাঁকেই কখনো কখনো অন্ধকার শেকড় গজিয়ে তোলে। তাঁর জীবনেও ছিল এমন এক নীরব ছায়া—একটি হারাম সম্পর্ক, যা তাঁর ইবাদতের নরম ফুলগুলোর মতোই জীবনে গোপনে ফুটে উঠেছিল, কিন্তু প্রতিটি পাপের দংশনে সেগুলোকে ম্লানও করছিল। 
 
হারাম প্রেম কখনোই কেবল প্রেম নয়, এটি নিষিদ্ধ আকর্ষণের কোমল বিষ। শুরুতে মায়াবী, শেষে ধ্বংসাত্মক। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি মমতার রঙে রাঙিয়ে বলেছেন “ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না।” কারণ এই পথের মাটি নরম হলেও, দাঁড়িয়ে থাকা যায় না, এই পথের আলো উজ্জ্বল হলেও, শেষ প্রান্তে নেমে আসে অন্ধকার। আজকের যুবসমাজে এ নিষিদ্ধ আকর্ষণ যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তা যেন আবেগ ও অস্থিরতার যুগে পাপের নতুন প্যাকেজিং। আবেগের দোলাচল, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, একাকিত্বের চাপ—সব মিলিয়ে হারাম সম্পর্ককে আধুনিকতার নাম দিয়ে গ্রহণ করা হচ্ছে খুব সহজেই। কিন্তু সহজ পথ কখনোই নিরাপদ নয়। হারাম প্রেমের পরিণতি সাধারণত অনিশ্চয়তা, অবিশ্বাস আর বিচ্ছেদের দহন। সম্পর্কটিই টেকে না, আর যদি টেকে, তাও পাপের দাগ আমলনামায় অমোচনীয় হয়ে থাকে। তাওবা ছাড়া কোনো কবিরা গুনাহ মাফ হয় না, এ সত্য যত কঠিন, ততই মুক্তিদায়ী। 
 
মানুষ ভুল ধারণার জালে আটকে যায় দ্রুত। কেউ বলে, বিয়ের উদ্দেশ্যে সম্পর্ক করলে তা হারাম হয় না। যদি উদ্দেশ্য দিয়েই গুনাহ হালাল হতো, তবে কুরবানির পশু কেনার উদ্দেশ্যে চুরি-ডাকাতিও হালাল হয়ে যেত। আবার কেউ বিশ্বাস করে, বিয়ে করলে আগের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। কিন্তু জীবন তো মৃত্যুর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা অনিশ্চিত এক যাত্রা,  সেখানে ভবিষ্যতের বিয়ে পর্যন্ত পৌঁছানোর নিশ্চয়তা কোথায়? সত্য হলো—তাওবা ছাড়া কোনো বড় পাপ ধুয়ে যায় না। 
 
হারাম সম্পর্ক মানুষের হৃদয়কে কুরে কুরে খায়—দেয় ভয়, অসস্থি আর অপরাধবোধ। আর হালাল সম্পর্ক? সে হলো শান্তির বন্দর, যেখানে দায়িত্ব, সম্মান, স্নেহ আর বরকত মিলেমিশে এক নিরাপদ জগৎ গড়ে তোলে। হালাল ভালোবাসা মানুষের আত্মাকে কোমল করে, আর হারাম সম্পর্ক কঠিন ও ক্ষতবিক্ষত করে। কেউ যখন হালাল সুখের দরজা ছেড়ে হারাম পথের রং–চঙে ছুটে যায়, তখন খুব অল্প বয়সেই জীবনের গভীর ক্ষত তৈরি হয়ে যায়। 
 
মানুষ ভুল করলে আল্লাহ দরজা বন্ধ করে দেন না। সত্যিকার তওবাই হলো সেই চাবি, যা আবার আলোয় ফিরে আসার পথ খুলে দেয়। তাই যে-ই এই নিষিদ্ধ আকর্ষণের জালে জড়িয়ে থাকুক না কেন—ফিরে আসার সুযোগ আছে, ক্ষমার প্রবেশপথ খোলা আছে, আর আল্লাহর রহমতের সাগর সীমাহীন। 
 
হারাম সম্পর্ক কখনো স্থায়ী শান্তি দেয় না; তা দেয় ক্ষণস্থায়ী উত্তেজনা আর দীর্ঘস্থায়ী দহন। কিন্তু হালাল সম্পর্ক দেয় মর্যাদা, স্থায়িত্ব, প্রশান্তি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি। তাই জীবনের সঠিক মোড় নেওয়ার সময় এখনই। আল্লাহর সীমা অতিক্রম করে কেউ কোনোদিন সম্মানিত হয়নি—সম্মান সবসময় হালালে, আলো সবসময় হালালে। 
 
তাই আসুন, হারামকে ত্যাগ করি, হালালকে আলিঙ্গন করি, হৃদয় জ্বলে উঠুক পবিত্র ভালোবাসার অপার আলোয়। 
 
লেখক: কলামিস্ট, শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো,মিশর
 
এলএইস/