
|
কুয়েতে দুই দশকে প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশি প্রবাসীর মৃত্যু
প্রকাশ:
১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:৫৩ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
উপসাগরীয় দেশ কুয়েতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের অস্বাভাবিক মৃত্যুহার নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত ২০ বছরে দেশটিতে মোট ৪ হাজার ৯৯৮ জন বাংলাদেশি প্রবাসী মারা গেছেন। গড়ে প্রতি মাসে ২০ জনেরও বেশি বাংলাদেশির মৃত্যু বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও কর্মপরিবেশের সংকটকে স্পষ্ট করে। বর্তমানে কুয়েতে কর্মরত আছেন প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার বাংলাদেশি। দূতাবাস জানায়, করোনাভাইরাস মহামারি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেললেও প্রবাসীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ রয়ে গেছে হৃদরোগ ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। করোনার আগে প্রতি মাসে গড়ে ১৪–১৫ জনের মৃত্যু হলেও মহামারির সময়ে সংখ্যাটি উদ্বেগজনক হারে বাড়ে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক বছরেই মারা যান ৪৪০ জন প্রবাসী। এর মধ্যে হৃদরোগে ১৯০ জন এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১০৮ জনের মৃত্যু ঘটে। বাকি মৃত্যুর কারণ ছিল আত্মহত্যা, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও অন্যান্য রোগ। ওই সময়ে মাসিক গড় মৃত্যু দাঁড়ায় ৩৬ জনের বেশি। গত ২০ বছরের মোট মৃত্যুর মধ্যে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬৫৪ জন। অন্যদের মৃত্যু ঘটেছে হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, আত্মহত্যা, ক্যানসার ও কর্মক্ষেত্র-সম্পর্কিত বিভিন্ন কারণে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্যেও দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ফেরত আসা মধ্যবয়সী অনেক প্রবাসীর মৃত্যুর প্রধান কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, যাদের অধিকাংশের বয়স ছিল ২৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এই পরিস্থিতিকে ‘বেদনাদায়ক ও উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন কুয়েতের কমিউনিটি নেতা ও ব্যবসায়ী আব্দুল হাই মামুন। তিনি বলেন, “অতিরিক্ত কাজের চাপ, অনিয়মিত জীবনযাপন, পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব এবং প্রবাসজীবনের একাকীত্ব প্রবাসীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।” তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্যসচেতনতা কার্যক্রম, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মানসিক সহায়তা, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ এবং শ্রমপরিবেশ উন্নয়নে কুয়েত সরকারের সঙ্গে আলোচনার ওপর জোর দেন। বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, কোনো প্রবাসী মারা গেলে দ্রুত লাশ দেশে পাঠাতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাকে শনাক্ত করা সম্ভব না হলে মৃতদেহ পাঠানোর ব্যয়ও দূতাবাস নিজ উদ্যোগে বহন করে। প্রবাসী কমিউনিটির নেতাদের মতে, কুয়েতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিকের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে এখনই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। এনএইচ/ |