আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জমিয়তের টানাপোড়েন চলছে?
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর, ২০২৫, ০৩:৪০ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

বিশেষ প্রতিনিধি

নির্বাচনি ডামাডোলের মধ্যে এই মুহূর্তে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে একমাত্র জমিয়তে উলামায়ে ইসলামই প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে বিএনপির সঙ্গে রয়েছে। অন্যান্য ইসলামি দলগুলো যখন স্বতন্ত্র মোর্চা বা নির্বাচনি সমঝোতার প্রক্রিয়া জোরেশোরে চালাচ্ছে তখনও জমিয়ত নিজ অবস্থানে অনড়। এই অবস্থায় আগামী নির্বাচনে অন্যান্য মিত্রের পাশাপাশি জমিয়তকে কিছু আসনে বিএনপি ছাড় দেবে বলে আলোচনা শোনা যাচ্ছে। তবে সবশেষ খবর হলো, আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জমিয়তের টানাপোড়েন চলছে। দলটি যত আসন দাবি করছে বিএনপি তত আসন দিতে সম্মত নয়।

জমিয়ত ইতোমধ্যে দেশের বেশির ভাগ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হলে নির্দিষ্ট আসনেই দলটির প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, বাকিগুলোতে বিএনপিকে সাপোর্ট দেবে-এমন আলোচনাই এতদিন শোনা যাচ্ছিল। তবে সম্প্রতি জমিয়তের প্রার্থীদের বক্তব্য এবং দলের শীর্ষ নেতাদের কারও কারও বক্তব্যে বিএনপির সঙ্গে টানাপোড়েনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

গত ৪ নভেম্বর জমিয়তের প্রার্থীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রার্থীরা এককভাবে নির্বাচনের পক্ষে মত দেন। এককভাবে নির্বাচন করলে জমিয়তের কাজ সারাদেশে আরও বেগবান হবে বলে মনে করেন তারা। তবে দলের শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে এককভাবে নাকি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করা হবে সে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়নি। সম্ভাব্য প্রার্থীদের এলাকায় প্রচার-প্রচারণা জোরদার করার তাগিদ দেওয়া হয়।

তবে গত ৯ নভেম্বর দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নির্বাচন উপকমিটির আহ্বায়ক মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী এক বিবৃতিতে জানান, কাঙ্ক্ষিত আসনগুলোতে কারও সাথে সমঝোতা না হলে এককভাবেই নির্বাচন করবে জমিয়ত। তিনি বলেন, জোট হলেও আছি, না হলেও আছি। তাই জমিয়ত এককভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা নির্বাচনি সমঝোতার জন্য যে তালিকা প্রস্তুত করেছি, লড়াই করে জিতে আসার জন্যই করেছি। যদি সেই কাঙ্ক্ষিত আসনগুলোতে কারো সাথে সমঝোতা না হয়, তাহলে এককভাবেই লড়ব ইনশাআল্লাহ।

এ সময় তিনি জোটের বিষয়টিও স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে কারও সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জোটে নই। হ্যাঁ! দেশ-জাতির কল্যাণে প্রদত্ত আমাদের কোনো বক্তব্য কারো বক্তব্যের সাথে মিলে যেতে পারে ভিন্ন কথা। এ নিয়ে কোনো কোনো ভাইয়েরা এটাকেই নানাভাবে ট্রল করে, করুক। যার তার আমলের জবাবদিহিতা তাকেই করতে হবে।

দেশের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সক্রিয় সবচেয়ে বড় দল বিএনপি ইতোমধ্যে ২৩৭ আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। ৬৩টি আসন ফাঁকা রেখেছে দলটি। এসব আসনে মিত্রদের ছাড় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। ছাড় পাওয়ার তালিকায় জমিয়তও রয়েছে। দলটির শক্তিশালী ও আলোচিত প্রার্থী রয়েছেন, এমন বেশ কয়েকটি আসনে বিএনপি প্রার্থী দেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, জমিয়তের জন্যই আসনগুলো ফাঁকা রেখেছে। এর মধ্যে সিলেট-৫ আসনে দলের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, নীলফামারী-১ আসনে দলের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, সুনামগঞ্জ-২ আসনে ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদকে ছাড় দিতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। সিলেট-৪ আসনে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলীকে ছাড় দেওয়ার কথা আলোচনায় থাকলেও বিএনপি পরবর্তী সময়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হককে প্রার্থী করেছে।

সূত্রে জানা গেছে, জমিয়ত বিএনপির কাছে অন্তত ১২টি আসন দাবি করেছে। তবে বিএনপি এই পরিমাণ আসন ছাড়তে নারাজ। দলটি সর্বোচ্চ পাঁচটি আসন ছাড়তে সম্মত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা চলছে। শেষ পর্যন্ত দুই দলের মধ্যে একটা বোঝাপড়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

এদিকে কাঙ্ক্ষিত আসন না পেলে এককভাবে নির্বাচন করবেন বলে সাফ জানিয়েছেন জমিয়তের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিএনপির সঙ্গে তাদের আলোচনা এখনো চলমান। শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত আসন না পেলে জোট হবে না। জমিয়ত এককভাবে ভোটে অংশ নেবে।

এদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামি ও সমমনা আটটি দলের মোর্চা রাজনীতিতে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে শুরু থেকেই এই মোর্চার সঙ্গে নেই জমিয়ত। জামায়াতের সঙ্গে দলটির আদর্শিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। এজন্য জামায়াতের সঙ্গে কোনো মোর্চা বা নির্বাচনি সমঝোতায় যেতে রাজি নয় জমিয়ত। শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে তাদের বোঝাপড়া হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। না হলে দলটি এককভাবেই নির্বাচন করবে। তবে আট দলের সঙ্গে মোর্চায় যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন জমিয়ত নেতারা।

এলএইস/