
|
তোমাকে খুব মনে পড়ে মা
প্রকাশ:
৩১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:১২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
||মুফতি আহসান শরীফ|| মায়ের মৃত্যু হয়েছে আজ পূর্ণ এক বছর। মৃত্যুর পর মাকে আর কখনো দেখিনি। গতকাল গভীর রজনীতে দেখলাম আমাদের বাড়ির পুকুরে মা অজু করছেন। ঠিক ঘাটে নয়, পুকুরের কিনার ধরে অন্য পাশে। ফুটফুটে সুন্দর মায়ের চেহারায় এলাহীনূর দৃশ্যমান। আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তাকিয়েই থাকলাম। বড়ো মায়া অনুভব করলাম মায়ের চেহারায়। মা আমার দিকে ফিরলেন। উপরে ওঠার জন্য হাত বাড়ালেন। আমি মহব্বত ও আনুগত্য নিয়ে মাকে টেনে তুললাম। মা নিঃশক্তি ছিলেন এমন নয়, আমি হাত বাড়িয়ে দেয়ায় মা একটু শক্তি বেশি পেলেন। সুবোধ, নেক সন্তানের পরম মমতা ও ভালোবাসায় তৃপ্ত হলেন। এরপর আমার ঘুম ভাঙ্ল। তখন রাত চারটে। বসেই মায়ের জন্য ঈসালে সওয়াব করলাম। আনন্দে মন ভরে উঠলো। মাকে দেখলাম! হ্যাঁ, সত্যি সত্যিই মাকে দেখলাম। স্বপ্নে দেখলাম, নাকি বাস্তবেই দেখলাম! মা আমার কাছে এলেন, কিন্তু কিছুই যে বললেন না! আরও কিছু সময় তো থাকতে পারতেন, কিন্তু কেনো থাকলেন না! মাকে দেখার একদিকে আনন্দ। অন্যদিকে মায়ের মমতা ও সান্নিধ্যে পরিতৃপ্ত না হওয়ার বেদনা। আচ্ছা, মা! একটু বলো না, তুমি কি অভিমান করেছো? বিছানা ছাড়া, খাট তোশক ছাড়া মাটির উপর শুইয়ে আসায় তুমি কি রাগ হয়েছো? আমাদের দেখতে না পারায় তুমি কি অনেক বেশি কষ্ট পাচ্ছো? জানো মা, তোমাকে কবরে শোয়াতে গিয়ে অনুভব করলাম, তোমাকে কোনো দিন খাট, চকি ছাড়া শুইতে দেখিনি। আজ নিজ হাতে মাটিতে শোয়াতে গিয়ে আমারও যে বড্ড কষ্ট হয়েছে। এরচেয়ে আরও বড়ো কষ্ট নিয়ে আমাকে দিনাতিপাত করতে হয়েছে। মা, তোমার মৃত্যুর আগের কিছু দিন তুমি গ্রামের বাড়ি ছিলে। তখন আর শহরে আসতে চাইতে না। নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে, মা। এই যে দূরত্ব। এ সময়ে ফোন দিয়ে শুধু জানতে চাইতাম- মা, কী খবর? কেমন আছো? ওষুধ আছে? ওষুধ খাচ্ছো তো? কোনো কিছু কি প্রয়োজন? তোমার কথা বলতে তেমন ভালো লাগতো না। শরীরে কুলাতো না। সামান্য কথা বলেই রেখে দিতে। তোমার সামান্য কথায় যে প্রশান্তি, দুনিয়ার কোনো কিছুতে তা পাইনি, মা। তোমার মৃত্যুর পর 'কেমন আছো, মা?' এতটুকু কথা বলার তীব্র যন্ত্রণা হাড়েহাড়ে অনুভব করেছি। আজও করছি। মনে হয়েছে পৃথিবীতে আপন বলতে কেবল তুমিই আছো। তোমার জায়গায় ফোন দেয়ার মতো কাউকে পাইনি। কাউকে না। আজও তোমাকে মনে পড়ে। তোমার সঙ্গে কথা বলতে মন চায়। খুব জানতে ইচ্ছে হয়, মা, তুমি কেমন আছো? তোমার কি কোনো কিছু প্রয়োজন? মোবাইলের কাছে গিয়ে আবার ফিরে আসি। না, ফোন কাকে দেবো! মা তো নেই। তোমার একটিই মেয়ে। আমাদের প্রিয় বোনটি তোমার আগেই চলে গেছে না ফেরার দেশে। বোন আমাকে কত্তো আদর করেছে। বাবার সেবা করেছে। তোমার অসুস্থতায় তারচেয়ে উত্তম কোনো সেবক ছিলো না। জীবদ্দশায় তোমার কাছ থেকেই বেশি জানতাম প্রিয় বোনটির অভাব অনটন। মা, আমি যখন ছোট্ট ছিলাম, কোনদিন তোমার কাছ থেকে আলাদা থাকিনি। প্রতিদিন আমার প্লেট ধুয়ে, পানি এনে সামনে খাবার দিয়েছো। আমার সব কাপড়সহ গোসলের লুঙ্গিটাও তুমিই ধুয়ে দিয়েছো। লুঙ্গি, গেঞ্জি, জামা, গামছা কোনোটা খুঁজে না পেলে মুহূর্তেই তুমি বের করে দিয়েছো। মনে হতো আমার ব্যবহারের সব সামগ্রী সব সময়ই তোমার চোখের সামনে। আমি কোনোরকম অসুস্থ হলেই কোনো ওষুধ বা সমাধান তুমি মুহূর্তেই দিয়ে দিচ্ছো। আমি ভাবতাম, দুনিয়ার সব মা বুঝি তোমার মতো। অনেক পরে বুঝলাম, না- সব মা তোমার মতো নয়। তুমিই ছিলে আলাদা। অনন্য। সর্বশ্রেষ্ঠ। আমার জন্য তোমার কতো প্রশংসা। আমি মাদরাসায় যেতাম। সলাত আদায় করতাম। সূরা ইয়াসিনের ৭ মুবিন মুখস্থ বলতে পারতাম। আরও কতো কী। শুধু কি তোমার প্রশংসা? তোমার মাও তো আমাকে মুনশি বলে ডাকতেন। হাফেজ বলতেন। একদিন সকাল ১১টায় হঠাৎ নানু আমাদের বাড়িতে হাজির। তুমি একটি ডিম পোঁচ করে দিয়েছো। নানু তৃপ্তি নিয়ে ডিমটিই খেলেন। লেখক: প্রিন্সিপাল, জামিয়াতুল বালাগ ঢাকা ও রওজাতুল বানাত ঢাকা এলএইস/ |