
|  তুরস্কের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে রাজি পাকিস্তান-আফগানিস্তান  
										প্রকাশ:
										৩১ অক্টোবর, ২০২৫,  ০৯:১৭ সকাল
					 নিউজ ডেস্ক | 
| _original_1761880611.jpg)  
 দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দুই দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তান অবশেষে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে সম্মত হয়েছে। তুরস্কে অনুষ্ঠিত পাঁচ দিনের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় দুই দেশ। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সরকারি বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমেই অবনতি হতে থাকে। সীমান্তে সশস্ত্র সংঘর্ষ, সন্ত্রাসী হামলা, এবং একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের কারণে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এই উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে গত ২৫ অক্টোবর থেকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধিরা শান্তি বৈঠকে বসেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল সীমান্তে সংঘাত বন্ধ ও যুদ্ধবিরতির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে জানায়, “পাকিস্তান ও আফগানিস্তান উভয়ই যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে এবং সীমান্তে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে সম্মত হয়েছে।” বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আগামী ৬ নভেম্বর ইস্তাম্বুলে যুদ্ধবিরতি সম্পর্কিত বিভিন্ন শর্ত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে আবারও বৈঠকে বসবেন দুই দেশের প্রতিনিধি দল। এর মধ্যে যেন কোনো সংঘাত বা উসকানিমূলক পদক্ষেপ না ঘটে, সে বিষয়ে দুই সরকার সতর্ক থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত, যা ‘ডুরান্ড লাইন’ নামে পরিচিত। তালেবান সরকার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে এই সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েছে। পাকিস্তান অভিযোগ করছে, আফগান তালেবান সরকার তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) নামের সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। টিটিপি পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ায় সক্রিয় এবং বহু বছর ধরেই দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। ৯ অক্টোবর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে টিটিপির অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। সেই হামলায় টিটিপির শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ ও ক্বারি সাইফুল্লাহ মেহসুদসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নিহত হন। এর পর আফগানিস্তান অভিযোগ তোলে যে পাকিস্তান তাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত হেনেছে। প্রতিক্রিয়ায় ১১ অক্টোবর আফগান সেনাবাহিনী সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাচৌকিতে হামলা চালায়, যার জবাবে পাল্টা অভিযান শুরু করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীও। দুই সপ্তাহের এই সংঘাতে প্রাণ হারায় অন্তত ২০০ আফগান সেনা ও ২৩ জন পাকিস্তানি সেনা। অবশেষে ১৫ অক্টোবর দুই দেশ যৌথভাবে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। যদিও পরিস্থিতি তখনও অস্থির ছিল, তবে পরবর্তী কূটনৈতিক উদ্যোগে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়। ১৮ অক্টোবর দোহায় দুই দেশের প্রতিনিধি দলের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে মধ্যস্থতার প্রস্তাবে বৈঠক স্থানান্তরিত হয় তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। সেখানে ২৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া আলোচনায় কাতার ও তুরস্ক মধ্যস্থতার ভূমিকা নেয়। ২৮ অক্টোবর আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দিলেও, কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় তা পুনরায় শুরু হয় ২৯ অক্টোবর। অবশেষে ৩০ অক্টোবর উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখার বিষয়ে চূড়ান্তভাবে একমত হয়। নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ৬ নভেম্বরের ইস্তাম্বুল বৈঠকে সীমান্তে যৌথ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, এবং টিটিপি-সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের মতো বিষয়ে আলোচনা হবে। তুরস্ক জানিয়েছে, তারা চাইছে এই আলোচনাকে “স্থায়ী শান্তির রূপরেখা” তৈরির দিকে নিয়ে যেতে। তথ্যসূত্র : জিও নিউজ এনএইচ/ |