বারবার বিশ্ব দরবারে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন হাফেজ ত্বকী
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:০৫ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

বিশ্ব দরবারে বারবার বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকী। কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ করে তিনি বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা তুলে ধরেছেন বিশ্ব পরিমণ্ডলে। কোটি মানুষকে মুগ্ধ করা বিশ্বজয়ী এই হাফেজ পরাজয় বরণ করলে ডেঙ্গু জ্বরের কাছে। বেশ কয়েক দিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকার পর মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তিনি পাড়ি জমিয়েছেন পরপারের উদ্দেশে। তাঁর স্মরণে গোটা জাতি আজ শোকাহত।

২০০০ সালে কুমিল্লার মুরাদনগরের ডালপা গ্রামের এক মাদরাসা শিক্ষক পরিবারে জন্ম নেন ত্বকী। শৈশবেই পবিত্র কোরআনের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা তাঁকে নিয়ে যায় হিফজের পথে। অল্প বয়সেই তিনি সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ করেন মারকাযুত তাহফিজ থেকে, যে প্রতিষ্ঠান পরবর্তীতে হয়ে ওঠে তাঁর বিশ্বজয়ের ভিত্তি।

২০১৯ সাল। জর্ডানের আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ৬২টি দেশ। সেখানে এক তরুণ বালক বাংলাদেশের পতাকা হাতে মঞ্চে উঠে সবার বিস্ময় ভরা চোখের সামনে প্রথম স্থান অর্জন করে। সেই বালকই ছিল হাফেজ ত্বকী। এর আগে কুয়েত ও বাহরাইনের আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায়ও বিজয়ী হন তিনি।

২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে কুয়েতে অনুষ্ঠিত কুয়েত আন্তর্জাতিক কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা ২য় স্থান অর্জন করেছেন। ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাহরাইনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জন করেছেন। এছাড়াও তিনি ২০১৭ সালে হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে ৩০পারা গ্রুপে ১ম স্থান দখল করেন তিনি।

প্রতিবারই তাঁর তেলাওয়াতের তাজবিদ, কণ্ঠের মাধুর্য ও হৃদয়স্পর্শী ধ্বনি শ্রোতাদের অভিভূত করেছে।

ত্বকীর শিক্ষক হাফেজ কারী শায়খ নেছার আহমদ আন-নাছিরী স্মরণ করে বলেন, ‘ত্বকী শুধু একজন প্রতিযোগী ছিল না, সে ছিল এক জীবন্ত কোরআন। আল্লাহর বাণীকে সে হৃদয়ে ধারণ করেছিল, কণ্ঠে নয় শুধু; চরিত্রেও।’ তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি, ত্বকী আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক কান্নাকাটি করত। সারারাত কোরআন তেলাওয়াত করত, মসজিদে নামাজ আদায় করতে রাত কাটাত। মূলত, কোরআনের প্রতি তার অঘাধ ভালোবাসা ও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা তাকে প্রথম হতে সাহায্য করেছে বলে আমি মনে করি।’

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ত্বকী দেশের অভ্যন্তরেও অসংখ্য কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। এনটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘কুরআনের আলো’-তেও তিনি ছিলেন চ্যাম্পিয়ন। প্রতিটি মঞ্চেই তাঁর উপস্থিতি ছিল অনুপ্রেরণার উৎস, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের হাফেজদের জন্য।

সাফল্যের এমন শিখরে থেকেও ত্বকী ছিলেন বিনয়ী ও নীরবচিন্তক।  মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি মাদরাসায় কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করছিলেন। ইচ্ছে ছিল কোরআনের শিক্ষা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া এবং ভবিষ্যতে আলেম হিসেবে দাওয়াতি কাজ করা। কিন্তু ডেঙ্গুর ছোবলে থেমে গেল সেই স্বপ্নের যাত্রা।

এলএইস/