২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা হামলায় নিহতদের স্মরণে কর্মসূচি দিলো জামায়াত
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:২২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠা হামলায় নিহতদের স্মরণে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রোববার (২৬ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে সংগঠনের আমির ডা. শফিকুর রহমান এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বিবৃতিতে তিনি জানান, আগামী ২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে সারাদেশে মহানগর, জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এজন্য সংগঠনের সব পর্যায়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ২৮ অক্টোবর সারাদেশে লগি-বৈঠা নিয়ে তাণ্ডব চালায়। সেদিন ঢাকার বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামী একটি জনসভা আয়োজন করে। সকাল থেকে জনসভার মঞ্চ নির্মাণের কাজ চলছিল। হঠাৎ ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা লগি-বৈঠা, লোহার রড ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পল্টন এলাকায় হামলা চালায়।

বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, জনসভা শুরু হলে চারদিক থেকে হামলাকারীরা গুলি ছুড়ে জনতার দিকে এগিয়ে আসে। সেদিনের সমাবেশের প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন আমীরে জামায়াত ও শিল্পমন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (রহি.)। হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল জনসভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পল্টন এলাকা এক রক্তাক্ত প্রান্তরে পরিণত হয়।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ওই হামলায় ঢাকাসহ সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১৪ জন নেতাকর্মী শহীদ হন এবং সহস্রাধিক নেতাকর্মী আহত হন। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায়ও একইভাবে ১৪ দলীয় জোটের হামলায় চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। হামলাকারীরা মৃতদেহের ওপর নৃত্য করে উল্লাস প্রকাশ করেছিল, যা সে সময় বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। তিনি একে ‘পূর্বপরিকল্পিত মানবতাবিরোধী গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

জামায়াতের আমির বলেন, ২৮ অক্টোবরের এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত থাকবে। ওই দিনের পর থেকেই দেশে সন্ত্রাসী রাজনীতির সূচনা হয় এবং ধীরে ধীরে দেশকে রাজনীতিশূন্য করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার হরণ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন সরকার সেই মামলা প্রত্যাহার করে খুনিদের বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের মাধ্যমে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে এবং ২৮ অক্টোবরের ঘটনার খুনিদের বিচার দ্রুত নিশ্চিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বিবৃতির শেষে ডা. শফিকুর রহমান নিহতদের শহীদ হিসেবে কবুল করার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন এবং আহত ও পঙ্গু হয়ে যারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন, তাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এলএইসি/