ভারতে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ বলায় মুসলিমদের ওপর বুলডোজার অভিযান
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:১৩ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

ভারতের বিজেপি-শাসিত কয়েকটি রাজ্যে মুসলিমদের ওপর সম্প্রতি গ্রেফতার, অভিযান এবং বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভাঙার ঘটনা ঘটে। এর মূল কারণ পোস্টার, টি-শার্ট বা সোশ্যাল মিডিয়ায় “আই লাভ মুহাম্মদ” লেখা বা প্রকাশ করা।

উত্তরপ্রদেশের কানপুরে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মদিন উপলক্ষে ঈদ-ই-মিলাদ-উন-নবীর শোভাযাত্রার সময় একটি ব্যানারে “আই লাভ মুহাম্মদ” লেখা থাকায় আপত্তি জানানো হয়। এরপর অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য এফআইআর দায়ের করা হয় এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ১৫৩এ সহ অন্যান্য ধারায় গ্রেফতার ও বাড়িঘর ভাঙার অভিযোগ উঠে।

অলাভজনক সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস (এপিসিআর) জানিয়েছে, ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিজেপি-শাসিত একাধিক রাজ্যে ১,৩০০ জনের বেশি মুসলিমের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ২১টি এফআইআর নথিভুক্ত হয়েছে এবং কমপক্ষে ৩৮ জন গ্রেফতার হয়েছে। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশে ১৬টি এফআইআর এবং একাধিক জেলায় ১,০০০ জনেরও বেশি লোক অভিযুক্ত হয়েছেন।

এপিসিআরের জাতীয় সম্পাদক নাদিম খান বলেন, নবীর প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রকাশের জন্য মানুষকে লক্ষ্য করা মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন। শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় অভিব্যক্তি কখনোই অপরাধ নয়।

উত্তর প্রদেশের বরেলিতে “আই লাভ মুহাম্মদ” স্লোগান প্রদর্শনের পর কিছু মুসলিমদের সম্পর্কিত ভবন বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা এটিকে “রুটিন, আইনি প্রক্রিয়ার অংশ” বলে দাবি করলেও পরিবারগুলো বলছেন, এটি ইচ্ছাকৃত।

গুজরাটের বাহিরিয়ালে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের পর ১৮৬টি কাঠামো “অবৈধ” ঘোষণা করা হয়েছে, এর মধ্যে ১৭৮টি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পূর্ব নোটিশ বা আদালতের অনুমোদন ছাড়া এই ভাঙা হয়েছে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে, তাৎক্ষণিক ভাঙা বা “বুলডোজার বিচার” সংখ্যালঘুদের ওপর প্রভাব ফেলে। ২০২২ সালে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ভাঙার আগে পূর্ব নোটিশ ও কার্যক্রমের ভিডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক।

আইনজীবী প্রসুক জৈন বলেন, আই লাভ মুহাম্মদ’ স্লোগান শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় অভিব্যক্তি। তা শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারী পদক্ষেপ অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সংবিধানের ১৯(১)(এ) ও ২৫ অনুচ্ছেদের অধীনে উলঙ্গ।

সমালোচকরা বলছেন, এসব ভাঙার পদ্ধতি মুসলিম পরিচয় ও শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় অভিব্যক্তিকে অপরাধী করার প্রবণতা বৃদ্ধি করছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার বোর্ড চেয়ার আকার প্যাটেল বলেন, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ বলার জন্য মানুষকে লক্ষ্য করা হাস্যকর। এটি শান্তিপূর্ণ এবং কোনো উসকানি বা হুমকি নয়।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই দমনপীড়ন শুধু ব্যক্তির ধর্মীয় অভিব্যক্তিকে শাস্তি দিচ্ছে না, বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর স্থায়ী প্রভাব ফেলে এবং ‘বুলডোজার’ এখন প্রশাসনিক প্রতিশোধের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এনএইচ/