সেপ্টেম্বরে ৫০৪ সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০২ জনের মৃত্যু, আহত ৯৬৪
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:৩৯ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

গেল সেপ্টেম্বরে দেশের গণমাধ্যমে ৫০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০২ জন নিহত এবং ৯৬৪ জন আহতের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে রেলপথে ৫০টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত ও তিনজন আহতের খবর গণমাধ্যমে এসেছে।

তথ্যমতে, নৌপথে ১৩টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জন, আহত ১৫ জন এবং তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৫৬৭টি দুর্ঘটনায় ৫৬৫ জন নিহত এবং ৯৮২ জন আহত হয়েছে। এই সময়ে ১৯১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৯৯ জন নিহত ও ১৮৮ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৭.৮৯ শতাংশ এবং নিহতের ৩৯.৬৪ শতাংশ ও আহতের ১৯.৫০ শতাংশ।

সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে ১২৬টি। এতে ১২২ জন নিহত ও ২১৬ জন আহত হয়েছে। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বরিশাল বিভাগে ২২টি। এসব ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ৪৭ জন আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এই প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

সংগঠনটি বলছেন, বর্তমান সরকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়ার উদ্যোগের পরিকল্পনায় গলদ থাকায় এই যানকে নিবন্ধন দেওয়া হলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা দিগুন হবে। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ৯ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৩৩ জন চালক, ১০৬ জন পথচারী, ২৬ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৫ জন শিক্ষার্থী, ৮ জন শিক্ষক, ৮৮ জন নারী, ৫৪ জন শিশু, দুজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন আইনজীবী, একজন সাংবাদিক, চিকিৎসক একজন এবং ১২ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।

এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন- পাঁচজন পুলিশ সদস্য, একজন সেনা সদস্য, একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন আইনজীবী, একজন চিকিৎসক, ১২৬ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ১০২ জন পথচারী, ৬৭ জন নারী, ৪৯ জন শিশু, ৫৬ জন শিক্ষার্থী, আটজন পরিবহন শ্রমিক, আটজন শিক্ষক ও সাতজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৭৭২টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৯.০১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২.০২ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৬.৫৮ শতাংশ বাস, ১২.১৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৭.৩৮ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৭.২৫ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫.৫৬ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস।

সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪৮.৮০ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৮.৫৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৭.৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৩.৭৬ শতাংশ বিবিধ কারণে, চাকায় ওড়না পেছিয়ে ০.৩৯ শতাংশ, এবং ০.৫৯ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটেছে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪৫.০৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৫.৩৯ শতাংশ ফিডার রোডে হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩.৯৬ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.৯৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৫৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।

সেপ্টেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলো

১. বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশের সড়কের মাঝে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি, এসব গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে।

২. সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, নসিমন-করিমন অবাধে চলাচল।

৩. জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা।

৪. সড়কে মিডিয়ান বা রোড ডিভাইডার না থাকা, সড়কে গাছপালায় অন্ধবাঁকের সৃষ্টি।

৫. মহাসড়কের নির্মাণ ক্রটি, যানবাহনের ক্রটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।

৬. উল্টোপথে যানবাহন, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন।

৭. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রীবহন।

৮. বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশগুলো

১. বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের সড়ক-মহাসড়ক জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা।

২. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।

৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান।

৪. গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কে ফুটপাতসহ সার্ভিস লেইনের ব্যবস্থা করা।

৫. সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা।

৬. মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা।

৭. সড়ক পরিবহন আইন উন্নত বিশ্বের আদলে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে প্রয়োগ করা।

৮. সারাদেশে উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওর্য়াক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

৯. মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা।

১০. মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন যাবত ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া।

১১. ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী চালকের উপর চাপিয়ে দেওয়া ভ্যাট ও আয়কর অব্যাহতি দেওয়া।

১২. মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা আমদানি ও নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ করা।

এলএইস/