গাজার সংবাদ কাভার করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন সাংবাদিক সালেহ
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:৫৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজা নগরীতে সংবাদ কাভার করতে গিয়ে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন সাংবাদিক সালেহ আলজাফারাওয়ি। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কয়েক দিনের মধ্যেই এই সংঘর্ষে নিহত হন ২৮ বছর বয়সী এই সাংবাদিক। তিনি হামাস ও গাজার স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান উত্তেজনা কভার করছিলেন।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, রোববার গাজা নগরীর সাবরা এলাকায় হামাসের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে প্রভাবশালী দুগমুশ গোত্রের সশস্ত্র সদস্যদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়। সেই সময় সংবাদ সংগ্রহে সেখানে ছিলেন সালেহ। সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে তার মরদেহ স্থানীয় একটি হাসপাতালের কাছে পাওয়া যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাংবাদিক পরিচয়পত্র ও ‘সংবাদমাধ্যম’ লেখা জ্যাকেট পরা অবস্থায়ই সালেহের মরদেহ একটি ট্রাকের পেছনে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানায়, দুগমুশ গোত্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে যে তারা হামাসের প্রশাসনের বাইরে থেকে গাজায় নিজেদের মতো করে সশস্ত্র কার্যক্রম চালায়। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি গাজা শহরে ফিরে আসা বাস্তুচ্যুত মানুষদের ওপর হামলায় এই গোষ্ঠীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পর অভিযান শুরু করে হামাস।

এই অভিযানের মধ্যেই সংঘর্ষ শুরু হয়, যা ছড়িয়ে পড়ে গাজা নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। হামাস দাবি করেছে, তারা গাজায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে এবং প্রতিরোধ আন্দোলনের বাইরে কেউ অস্ত্র ধরলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় সরাসরি কিছু না বললেও, ভেতরে ভেতরে বড় ধরনের বিভাজন ও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সালেহ আলজাফারাওয়ি ছিলেন গাজার একজন পরিচিত মুখ। তিনি গাজা উপত্যকার বিভিন্ন সংঘর্ষ, মানবিক সংকট ও ইসরায়েলি হামলার দৃশ্য ভিডিও আকারে তুলে ধরতেন। তার বেশ কিছু কাজ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও প্রচারিত হয়েছে। মাত্র কয়েক মাস আগে আল–জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি নিজেই একজন বাস্তুচ্যুত। গাজার উত্তরে বাড়িঘর হারিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি গাজার ভেতরের বাস্তবতা ক্যামেরায় তুলে ধরেন।

ওই সাক্ষাৎকারে সালেহ বলেছিলেন, ৪৬৭ দিন ধরে চলা যুদ্ধের যত দৃশ্য আমি দেখেছি, যত যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গিয়েছি, তা কোনোদিন ভুলতে পারব না। আমি প্রতিটি সেকেন্ডে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতাম, কিন্তু জানতাম না পরের মুহূর্তটা কেমন হবে।

তিনি জানান, তার কাজের কারণে ইসরায়েলি বাহিনীর কাছ থেকে একাধিকবার হুমকি পেয়েছেন। তবে তাতে থেমে যাননি। বরং আরও সাহস নিয়ে গাজার বাস্তবতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২৭০ জনের বেশি সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ের সাংবাদিক, যারা মাটির কাছ থেকে মানুষের কণ্ঠ তুলে ধরছিলেন। সালেহ ছিলেন তাদেরই একজন।

এনএইচ/