ফেনীতে টানা পাঁচ দিনের উচ্ছেদ অভিযান: ফুটপাত দখলমুক্ত, স্বস্তি ফিরছে শহরে
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:৫৮ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

ফেনী শহরে টানা চার দিন ধরে অব্যাহত উচ্ছেদ অভিযানে ফুটপাত ও সড়কের অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। শহরের প্রধান সড়ক ট্রাংক রোড, শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক, মহিপাল, কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড, কলেজ রোড, মিজান রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা দোকানপাট, ভাসমান হকার এবং অবৈধভাবে পার্ক করা যানবাহন সরিয়ে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও পৌরসভার সম্মিলিত এই উদ্যোগে শহরে পথচারী ও সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে।

সোমবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান শুক্রবার পর্যন্ত চলে। প্রথম দিনের অভিযানে নেতৃত্ব দেন ফেনী জেলা পুলিশ সুপার মোঃ হাবিবুর রহমান। ফেনী মডেল থানার সামনে থেকে বড় মসজিদ পর্যন্ত এবং ট্রাংক রোড জিরো পয়েন্ট থেকে ইসলামপুর রাস্তার মাথা পর্যন্ত এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়।

এ সময় ফুটপাত ও সড়কের পাশে বসানো অস্থায়ী দোকান, সাইনবোর্ড ও অবৈধ পার্কিং সরিয়ে দেওয়া হয়। পথচারীদের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের নিয়মিত তদারকির নির্দেশ প্রদান করেন।

উচ্ছেদ অভিযানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) নিশাত তাবাসসুম, ফেনী মডেল থানার ওসি মোঃ আলমগীর হোসেন, পৌর প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা।

দিনের বেলায় অভিযান চললেও সন্ধ্যার পর পুনরায় ফুটপাত ও পার্কিং এলাকা দখলের অভিযোগ ওঠে। এ পরিস্থিতিতে সোমবার রাতেই পুলিশ আবার অভিযান চালায়। এতে ট্রাংক রোডসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে একাধিক গাড়ি সরিয়ে দেওয়া হয় এবং হকারদের উচ্ছেদ করা হয়।

পরদিন মঙ্গলবার সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম এর নেতৃত্বে ফের অভিযান পরিচালিত হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলা এই অভিযানে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দখলমুক্ত কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, যানজটমুক্ত ও নিরাপদ শহর গঠনে এই কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চলবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, “ফেনী শহরকে যানজটমুক্ত ও চলাচল উপযোগী রাখতে আমরা নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছি। জনগণের সহযোগিতা পেলে শহরকে দখলমুক্ত রাখা সম্ভব।”

শহর ব্যবসায়ী সমিতির এডহক কমিটির সদস্য ও ফেনী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এ কে এম আব্দুর রহীম বলেন,

“শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। প্রশাসন অভিযান চালালেও কিছু সময় পর আবার ফুটপাত দখল হয়ে যায়। কারণ, কিছু দোকানদার এসব হকারদের কাছ থেকে ভাড়া নেয়। এই চক্র না থামালে দখলমুক্ত শহর সম্ভব নয়। দোকানদারদের জরিমানা করা একমাত্র সমাধান হতে পারে।”

পৌরসভার প্রশাসক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন বলেন,

“উচ্ছেদ কার্যক্রমকে আরও বেগবান করার জন্য আমরা কাজ করছি। পুলিশ প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে। তবে নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। সবার সদিচ্ছা থাকলে ফেনী শহরকে দখলমুক্ত রাখা সম্ভব।”

এক পথচারী জাহিদুল ইসলাম সোহান বলেন,

“আগে ফুটপাত দিয়ে হাঁটা যেত না। দোকান আর হকারদের কারণে রাস্তায় নামতে হতো। এখন কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছি। আশা করি প্রশাসন নিয়মিত নজরদারি রাখবে।”

সেচ্ছাসেবী সংগঠন “সানরাইজ ফাউন্ডেশন”-এর সভাপতি এম শরীফ ভূঞা বলেন,

“প্রশাসনের এমন পদক্ষেপে আমরা আনন্দিত। তবে দীর্ঘমেয়াদে এর ফল পেতে হলে জনগণের মানসিকতা পরিবর্তন জরুরি। ফুটপাত সবার, কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়—এটা সবার বুঝতে হবে।”

বীকন মডেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস. এম. মাছুম বিল্লাহ বলেন,

“শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন কলেজে আসতে গিয়ে যানজটে ভোগে। প্রশাসনের এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জন্যও বড় স্বস্তি। আমরা আশা করি এ কার্যক্রম নিয়মিত চলবে।”

অভিযান শেষে স্থানীয়রা জানান, টানা পাঁচ দিনের কঠোর তদারকির ফলে শহরে অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরেছে। সড়ক ও ফুটপাত এখন তুলনামূলকভাবে চলাচলযোগ্য, যা শহরবাসীর জন্য এক বড় স্বস্তি।

ফেনী শহরকে দখলমুক্ত, যানজটমুক্ত ও সুন্দর নগরীতে পরিণত করতে প্রশাসন, নাগরিক ও ব্যবসায়ী—সবার সম্মিলিত উদ্যোগই পারে স্থায়ী সমাধান আনতে।

এলএইস/