১ কোটি ৩০ লাখ টাকা নিয়ে নিখোঁজ জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর, ২০২৫, ০৪:৩৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

জনতা ব্যাংকের পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) খালেদ সাইফুল্লাহ দুই দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। তার সঙ্গে ব্যাংকের ১ কোটি ৩০ লাখ নগদ টাকা ছিল।

রোববার (৫ অক্টোবর) দুপুরে ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ নিয়ে বের হওয়ার পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর ব্যাংক কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় রাতে ঈশ্বরদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। জনতা ব্যাংক ঈশ্বরদী কর্পোরেট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মোহছানাতুল হক এই জিডি করেন।

থানায় দায়ের করা জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাকশী শাখার ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহ ক্যাশ রেমিটেন্সের জন্য ঈশ্বরদী কর্পোরেট শাখায় আসেন। আগের দিন শনিবার তিনি টেলিফোনে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার প্রয়োজনের কথা জানান। তবে আমাদের শাখায় নগদ সংকট থাকায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা দেওয়া সম্ভব বললে তিনি রাজি হননি। পরদিন সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে আবার ফোন করে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকার চাহিদা জানান।

সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মোহছানাতুল হক আরও বলেন, সেদিন বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে খালেদ সাইফুল্লাহ জনতা ব্যাংকের দাশুড়িয়া বাজার শাখা থেকে ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। পরে ঈশ্বরদী কর্পোরেট শাখায় এসে বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে পাকশী শাখা থেকে আরও ১ কোটি টাকা নগদ অর্থ গ্রহণ করেন। টাকা হস্তান্তরের সময় আনসার সদস্য মাহবুব তার সঙ্গে ছিলেন।

প্রয়োজনীয় ভাউচার ও রেজিস্টার বইয়ে স্বাক্ষর সম্পন্ন করার পর বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে খালেদ সাইফুল্লাহ এবং আনসার সদস্য মাহবুব ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা নিয়ে পাকশী শাখার উদ্দেশ্যে প্রাইভেট কারে রওনা দেন। গাড়িটির চালক ছিলেন মো. ইসমাইল হোসেন। শাখায় পৌঁছে টাকা জমা দেওয়ার কথা জানালেও এরপর থেকে খালেদ সাইফুল্লাহর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে পাকশী শাখার সহকারী ম্যানেজারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা যায়, খালেদ সাইফুল্লাহ তখনও শাখায় পৌঁছাননি। এ অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে যোগাযোগ করেন। পরে ফাঁড়ির পরামর্শে ঈশ্বরদী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

জনতা ব্যাংকের দাশুড়িয়া শাখার ব্যবস্থাপক শাহিনুর রহমান বলেন, বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে পাকশী শাখার ম্যানেজার খালেদ সাইফুল্লাহ আমাদের শাখা থেকে ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী টাকা হস্তান্তর করা হয়।

সঙ্গে থাকা আনসার সদস্য মাহবুব বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঈশ্বরদী ব্রাক ব্যাংকের সামনে এসে তিনি আমাকে প্রাইভেটকার থেকে নামিয়ে দেন। আমি তার কথামতো গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। তিনি এরপর গাড়ি নিয়ে চলে যান।

নিখোঁজ ম্যানেজার খালেদ সাইফুল্লাহর স্ত্রী দিলরুবা বেগম বলেন, প্রতিদিনের মতো আজও সকালে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে ব্যাংকে যান। বিকেলে ঈশ্বরদী কর্পোরেট শাখার কর্মকর্তারা বাসায় এসে তার নিখোঁজ হওয়ার খবর জানান। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি স্বেচ্ছায় কোথাও গেছেন, নাকি কেউ তাকে গুম করেছে—তা আমরা নিশ্চিত নই।

জনতা ব্যাংক রাজশাহী জোনাল শাখার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, ঘটনাটি আমরা মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি। পাকশী শাখায় গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করছি, এখনো তদন্ত চলছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, বিষয়টি খুবই গুরুতর। ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিলের প্রস্তুতি চলছে।

ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আব্দুন নূর বলেন, ব্যাংকের টাকা উত্তোলনের বিষয়টি আমরা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানা যায় একটি জিডি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরএইচ/