আজান, জবাব ও দোয়া পাঠের ফজিলত
প্রকাশ:
০৪ অক্টোবর, ২০২৫, ০৯:৩০ রাত
নিউজ ডেস্ক |
![]()
লাজ্জাস আল-হাবীব আজান হলো ইসলামে ইবাদতের অন্যতম ঘোষণা, যা মানুষকে শ্রেষ্ঠ স্তম্ভ নামাজ ও ইবাদতের দিকে আহ্বান করে। এই ঘোষণার ডাকে সাড়া দিয়ে মনোযোগ সহকারে জবাব দেওয়া এবং আজানের পর নির্দিষ্ট দোয়া পাঠ করা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। সহিহ হাদিসে এ বিষয়ে অসংখ্য ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আজান কী এবং এর গুরুত্ব আজান মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য একত্রিত করার ইসলামি পদ্ধতি। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের জন্য পাঁচবার মসজিদ থেকে আজান দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যখন নামাজের সময় হয়, তোমাদের কেউ যেন আজান দেয় এবং তোমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি যেন ইমামতি করে। [সুনানে আবু দাউদ] পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের জন্য আজান দেওয়া সুন্নাতে মুআক্কাদা কেফায়া। অর্থাৎ কোনো মহল্লার মসজিদে যদি আজান না হয়, তাহলে এলাকার সব মুসলমান সুন্নত ছেড়ে দেওয়ার গুনাহে দায়ী হবে। মসজিদ ছাড়া বাড়িতে বা অন্য কোথাও একাকী বা জামাতে নামাজ পড়লেও আজান দেওয়া মুস্তাহাব। আজান দেওয়ার ফজিলত আজান দেওয়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। মুয়াজ্জিন আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে বিবেচিত হয়। : ১/ গুনাহ মাফ ও সাক্ষ্যদাতা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনির শেষ সীমা পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করা হয়, এবং প্রত্যেক জীবিত ও জড় বস্তু তার জন্য সাক্ষ্য দেয়। [মুসনাদে আহমদ] ২/ মর্যাদা ও সম্মান: আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুয়াজ্জিনরা কেয়ামতের দিনে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ গলার অধিকারী হবে। [সহিহ মুসলিম, হাদীস: ৩৮৭] অর্থাৎ, তারা কেয়ামতের দিন সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ হবে। ৩/জান্নাত ও মুক্তি: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আজান দেয়, তার গলায় যত দূর পর্যন্ত আজানের শব্দ পৌঁছায়, সে এলাকার প্রত্যেক প্রাণী তার জন্য সাক্ষ্য দেবে। [সহিহ বুখারী, হাদীস: ৬০৯; সহিহ মুসলিম, হাদীস: ৩৮৫] : ৪/ শয়তানের পলায়ন আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন আজান দেওয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু ত্যাগ করতে করতে পালিয়ে যায়, যাতে সে আজানের শব্দ না শোনে। [সহিহ বুখারী, হাদীস: ৬০৮; সহিহ মুসলিম, হাদীস: ৩৮৯] আজানের জবাব দেওয়ার ফজিলত আজানের সময় অন্য কাজ বন্ধ রেখে মনোযোগসহকারে জবাব দেওয়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। ১/ মুয়াজ্জিনের সমান সওয়াব: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আজানের জবাব দেয়, সে মুয়াজ্জিনের সমান সওয়াব পাবে। [সহিহ মুসলিম, হাদীস: ৩৮৫] ২/ জান্নাত লাভ: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মনোযোগসহকারে আজানের জবাব দেয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [সহিহ মুসলিম, হাদীস: ৩৮৭] ৩/ গুনাহ মাফ ও দোয়া কবুল: হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আজানের পর এই দোয়া পড়বে [আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ্ দা’ওয়াতিত্ তাম্মাহ, ওস সালাতিল কায়িমাহ, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদীলাহ, ওয়াবআস্হু মাকামান মাহমূদানিল্লাজি ওয়াদ’তাহ] কেয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ পাওয়ার অধিকারী হবে। [সহিহ বুখারী, হাদীস: ৬১৪] ৪/ কেয়ামতের দিনের শাফায়াত: উক্ত দোয়া পাঠের মাধ্যমে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শাফায়াত লাভ করা যায়, যা কেয়ামতের দিনের অন্যতম বড় সৌভাগ্য। আজানের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি ১/ মুয়াজ্জিন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বললে শ্রোতাও একইভাবে বলবে। ২/ “হাইয়া ‘আলাস-সালাহ” ও “হাইয়া ‘আলাল-ফালাহ” শুনলে বলা উচিত—“লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” [সহিহ বুখারী, হাদীস: ৬১৩] ৩/ আজান শেষে উপরোক্ত দোয়া পাঠ করতে হবে। [সহিহ বুখারী, হাদীস: ৬১৪] আরএইচ/ |