গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় মোল্লারা নাই কেন?
প্রকাশ:
০২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৪২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
||আরিফ আজাদ|| কিছু কিছু মানুষকে দেখছি, তারা বেশ তীর্যক বাক্যে মুসলমানদের আক্রমণ করছেন আর বলছেন—গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় মোল্লারা কেন নাই। কেন দুনিয়ার যাবতীয় বাম, যাবতীয় নাস্তিক, সেক্যুলার আর প্রগতিশীলেরাই কেবল এই সুমুদ ফ্লোটিলাতে রয়েছে। আক্রমণের ভাষা দেখে মনে হচ্ছে, গাযার মানুষেরা, শিশু আর বৃদ্ধেরা অনাহারে মারা যাওয়ার দৃশ্যটা যেন মুসলমানরা খুব উপভোগ করছে আর কেবল বাম, নাস্তিক, সেক্যুলাররাই যেন এতে কষ্ট অনুভব করছে। কেউ যদি বাস্তবতাকে সামনে রেখে দেখে, তাহলে এই ধরনের বেহুদা তুলনা, বেহুদা বিতর্ক করে সময় নষ্ট করার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকে না। গাযা কেন্দ্রিক গ্লোবাল সেক্যুলার, বাম অ্যাক্টিভিস্টদের অ্যাক্টিভিজম নতুন নয়। বহু বছর ধরে তারা নিজ নিজ দেশে, নিজ নিজ পরিমণ্ডলে গাযা তথা ফিলিস্তিনে ঘটা অন্যায়ের ব্যাপারে আওয়াজ জারি রেখে চলেছে৷ ইউরোপ আমেরিকার রাস্তায়, শহরে, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এই চর্চা হরহামেশাই দেখতে পাই যা খুব প্রশংসাযোগ্য। তো, গ্লোবাল এইসব বাম রাজনৈতিক দল, বাম অ্যাক্টিভিস্ট, সেক্যুলার লোকজন যা যা করে গাযার জন্য, অর্থাৎ তাদের নিজ নিজ শহরে, অঞ্চলে সভা, সেমিনার, সংযোগ—এইসব কি মুসলমান দেশগুলোতে হয় না? অবশ্যই হয়। আপনি যদি মরোক্কোর দিকে তাকান, জর্ডান, আজারবাইজান, মিশর, তিউনিশিউয়া ইত্যাদি দেশের খোঁজখবর রাখেন তো দেখতে পাবেন যে—এইসব দেশে গাযা ইস্যুতে ব্যাপক গণসংযোগ হয়৷ সমস্যা হলো, গাযা ইস্যুতে আমেরিকা কিংবা ইউরোপের রাস্তায় যে লম্বা মিছিলটা হয়, সেটা ফলাও করে দুনিয়ার সব মিডিয়া প্রচার করে। সবখানে সেগুলোর ভালো আবেদন তৈরি হয়৷ কিন্তু মরোক্কোতে যেটা হয়, আজারবাইজানে যেটা হয়, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক বা তিউনিশিয়াতে যেটা হয়, সেটা আপনার আমার সামনে আসে না৷ হয়ত ফিল্টারড হয়ে যায়, অথবা আমরা ধরেই নিই যে—এটা তো ওদের করারই কথা, এ আর আশ্চর্য কী! এমন ভাবনা থেকে আমাদের মস্তিষ্ক সেটাকে গুরুত্ব দেয় না সবিশেষ। কিন্তু গ্রেটা থুনবার্গ যেহেতু সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার, ভিন্ন আদর্শের, ভিন্ন সমাজের, ফলে গাযা ইস্যুতে গ্রেটার অ্যাক্টিভিজম আমাদের মুগ্ধ করে৷ আমরা বলি—ওয়াও! হাউ ব্রেইভ দে আর! আমাদের দেশের কথাই চিন্তা করুন। প্রায়ই জুমুয়াহতেই বায়তুল মুকাররমে সালাত শেষে মুসল্লিদের বিরাট একটা অংশ গাযা আর ফিলিস্তন ইস্যুতে কথা বলে, সংযোগ করে। আমাদের কয়টা মিডিয়া সেটাকে কাভারেজ দেয়? প্রথম আলো, ডেইলি স্টার কয়টা এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট ছাপায়? ছাপায় তো না। ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়ার কথা তো বাদই দিলাম। তাহলে, নিয়মিত বিরতিতে এইসব মোল্লারা এই ইস্যুতে যে সংযোগ করে যাচ্ছেন, কথা বলে যাচ্ছেন, কথা জারি রাখছেন, সেটা তো আমাদের সামনে আসছে না৷ আমরা গ্রেট থুনবার্গের গণসংযোগ দেখতে পাচ্ছি, কারণ গ্রেটার একটা হিউজ সোশ্যাল ক্যাপিটাল আছে৷ তার হাইপ আছে। দুনিয়াজোড়া সুনাম আছে। তার প্রসপেক্ট অন্য লেভেলের। গ্রেটাদের হাইলাইট করলে মিডিয়াগুলো, পত্রিকাগুলোর টিআরপি বাড়ে, ক্লিক বেড়ে যায়। কিন্তু, বায়তুল মুকাররমের সাধারণ মুসল্লিদের জনসংযোগে তো হাইপ নেই, ওদের কাভার করলে টিআরপিও বাড়বে না, ফলে তাদের অ্যাক্টিভিজম থেকে যায় দৃষ্টির অন্তরালে। গ্রেটা থুনবার্গেরা ইউরোপের রাস্তায় বসে পড়লে আমরা সেটাকে সাধুবাদ জানাই, কিন্তু মোল্লারা যদি বায়তুল মুকাররমের গেইট থেকে একটা মিছিল বের করে, আমরা সেটাকে ট্রিট করি প্যানপ্যানানি হিশেবে। ওই যে—সোশ্যাল ক্যাপিটাল, সোশ্যাল ইমেজ বলে কথা। আমাদের এখানে মার্চ ফর গাযা হলো। ইউরোপ আমেরিকায় হওয়া বড় বড় মার্চগুলোর চাইতে কোনো অংশে কম ছিল না কিন্তু। এখন দেখুন, কিছু লোকেরা বলছেন, মার্চ ফর গাযা করা লোকেরা কোথায়, তারা কেন সুমুদ ফ্লোটিলায় গেল না? গ্রেটা থুনবার্গ বা শহিদুল আলমেরা কি গতকাল এরকম মার্চ করে, আজকেই সমুদ্রে জাহাজ নিয়ে রওনা করেছে? কতো দীর্ঘ সময় ধরে তারা অ্যাক্টিভিজম, গণসংযোগ এসবে থেকেছে৷ এইবার তারা গাযা অভিমুখে রওনা করেছে। বাংলাদেশি মোল্লাদেরকে যারা সুমুদ ফ্লোটিলায় না দেখে হাপিত্যেশ করছেন, তারা কি বাস্তবতার আলোকেই করছেন নাকি স্রেফ নিন্দা করতে হবে বলেই করছেন? ধরুন যে বাংলাদেশ থেকে ১০ টা বড় জাহাজ নিয়ে মোল্লারা বঙ্গোপসাগর হয়ে রওনা করল৷ তারা গাযার দিকে যাবে। আপনি আমাকে বলুন, এই যে আপনি কম্পিউটার স্ক্রীনে সুমুদ ফ্লোটিলার ম্যাপ সামনে খুলে বসে আছেন, সেকেন্ডে সেকেন্ডে তাদের খোঁজ করছেন, খোঁজ রাখছেন, মোল্লাদের জাহাজ রওনা করলেও তা করবেন তো? আইডিএফ যদি হামলা করে ডুবিয়ে দেয় মোল্লাদের জাহাজ, অ্যাক্টিভিজম করবেন তো? আন্তর্জাতিক দরবারে তাদের হয়ে দুটো কথা বলবেন তো? বলবেন না৷ কারণ, আপনিও জানেন, একজন গ্রেটা বা একজন শহিদুল আলমের জন্য আপনার লবি যেভাবে কাজ করবে, একজন মোল্লার জন্য সেভাবে কোনোদিনও কাজ করবে না। মুসলমানেরা তাদের কাজের আবেদন তৈরি করতে পারে না, সেটা তাদের ব্যর্থতা অবশ্যই৷ তবে তারা গাযা ইস্যুতে কাজ করে না, সব কাজ বাম, সেক্যুলার, প্রগতিশীলেরাই করে—এটা নিদারুন মিথ্যাচার। লেখক: কলামিস্ট ও চিন্তক এনএইচ/ |