প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ সময়ের দাবি
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:১৮ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, আর প্রাথমিক শিক্ষা সেই মেরুদণ্ডের মূল ভিত্তি। একটি জাতি তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কী ধরনের নৈতিক ভিত্তির ওপর গড়ে তুলবে, তার ওপরই নির্ভর করে তার উন্নয়ন ও অগ্রগতি।

বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মীয় শিক্ষা সবসময় উপেক্ষিত ও অবহেলিতই থেকে গেছে। যে কারণে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম বিষয়ে পাঠ্যপুস্তক থাকলেও তা পড়ানোর জন্য কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে কোথাও কোথাও ইসলাম ধর্মের শিক্ষা দেন অন্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষক। ইসলাম শিক্ষার কী শোচনীয় অবস্থা! বিগত সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গান-বাজনা ও শরীরচর্চার শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করেছিলেন। দেশের শিশু-কিশোরদের কচিপ্রাণে ইসলামের শিক্ষা না দিয়ে একটি ধর্মহীন জাতি গড়ার দিকে ধাবিত হচ্ছিল বিগত সরকার। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তাদের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি উপেক্ষিতই থাকছে যা শুধু দুঃখজনকই নয়, উদ্বেগেরও।

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একেবারে শিশু শ্রেণি থেকে ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়ার দাবি ওঠে। দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানানো হয়। সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়। কিন্তু প্রাথমিকে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনায় দেখা যায়, সেখানে ধর্মীয় শিক্ষকের কোনো অপশন না রেখে; বরং তার পরিবর্তে সেখানে সঙ্গীত (নৃত্য-গান-বাজনা) এবং শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

আমাদের  দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলিম। এদেশের মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ অত্যন্ত গভীর। মুসলিম পরিবারের প্রতিটি অভিভাবক চান তাদের সন্তান ছোটবেলা থেকেই ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হোক। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য কোনো বিশেষায়িত শিক্ষক নেই। এই সংকটের কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদেরকে কুরআন শিক্ষা ও মৌলিক ইসলামি জ্ঞানের জন্য স্কুলের বাইরে আলাদা মক্তব বা মাদরাসায় পাঠান। অনেক অভিভাবক বাসায় আলাদা শিক্ষক রেখে সন্তানকে  কুরআন শিক্ষা ও ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করার চেষ্টা করেন। এর ফলে অভিভাবকদের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ তৈরি হয় এবং শিশুদের ওপর পড়াশোনার অতিরিক্ত বোঝা চাপে। প্রশ্ন হলো—যদি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করা যেত, তাহলে কি অভিভাবকদের এই অতিরিক্ত চাপ ও খরচ বহন করতে হতো?

মুঘল আমল থেকে ধর্মীয় শিক্ষাই ছিল প্রাথমিক শিক্ষার মূলভিত্তি। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেই শিক্ষাব্যবস্থার যবনিকাপাত ঘটেছে। ইংরেজদের হাত ধরে এসেছে নতুন শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্তু ইংরেজদের তৈরি শিক্ষাব্যবস্থা এই অঞ্চলের মুসলমানদের জীবন-যাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় মুসলমানরা তা ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। এখন সময় এসেছে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে তাদের বিশ্বাসের আলোকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়ার। আর সেই ভিত রচনা করতে হবে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই। সরকারের কর্তব্য অতি দ্রুত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে শিশু-কিশোরদের ধর্ম শিক্ষার পথ সুগম করা। আমরা আশা করি, এর মাধ্যমে শিশুরা নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবে, তাদের মধ্য থেকে কিশোর গ্যাং হওয়ার পথও রুদ্ধ হবে।

ধর্মীয় শিক্ষা কেবল ধর্মীয় জ্ঞান দান নয়; বরং ধর্মীয় শিক্ষা শিশুদের নৈতিকতা, মানবিকতা, সৎ চরিত্র ও দায়িত্ববোধ শেখায়। সমাজের বর্তমান অবক্ষয়, যেমন—সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদক, জুয়া, ইভটিজিং ও নৈতিক স্খলন রোধ করতে শিশুদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া অপরিহার্য।

দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপক্ষে একজন করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া জরুরি।   এটি অভিভাবকদের দীর্ঘদিনের দাবি। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

লেখকঃ আলেম, লেখক ও কলেজ শিক্ষক

আরএইচ/