পাঁচ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে ইবনে শাইখুল হাদিস, কর্মসূচি ঘোষণা
প্রকাশ:
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:৪৭ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
জুলাই সনদের কার্যকর বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ও ইবনে শাইখুল হাদিস মাওলানা মামুনুল হক। লিখিত বক্তব্যে তিনি পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন এবং এসব দাবি বাস্তবায়নে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে মাওলানা মামুনুল হক বলেন-সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি—শাপলা গণহত্যা, জুলাই–আগস্ট বিপ্লব এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ডে সকল শহীদ ভাইদের। তাদের অসম সাহসিকতা, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীনতা, মানবিকতা ও ন্যায়পরায়ণতার কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি। সাংবাদিক বন্ধুগণ, আজকের সংবাদ সম্মেলনে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে আপনাদের মাধ্যমে আমরা পাঁচ দফা দাবি জানাতে চাই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—আমাদের এই দাবিগুলো কেবল রাজনৈতিক অংশগ্রহণের জন্য নয়; এগুলো দেশের জনগণের অধিকার এবং ন্যায়পরায়ণতার নিশ্চয়তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। আমরা চাই জনগণ যেন নির্ভরযোগ্য, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। পাঁচ দফা দাবি দেশের ভবিষ্যতের জন্য ন্যায়, স্বচ্ছতা এবং প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা আশা করি, সরকার জনগণের এ দাবিগুলোকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে এবং এগুলোর বাস্তবায়নের জন্য সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসবে। এই পাঁচ দফা বাস্তবায়নে আজকের সংবাদ সম্মেলনে কিছু সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ঘোষণা করবো। আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি হবে—দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, এবং ২৪-এর বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের আন্দোলনের অংশ। প্রথম দাবি: জুলাই সনদের অবিলম্বে বাস্তবায়ন। শাপলা চত্বরের রক্তের স্রোত থেকেই ২৪-এর চেতনার ধারা শুরু হয়েছে। ইতিপূর্বে ঘোষিত “জুলাই ঘোষণাপত্রে” শাপলা গণহত্যার উল্লেখ না থাকায় এর ঐতিহাসিক দায় ড. ইউনুস সাহেব এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উভয়কেই আজীবন বহন করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো জুলাই সনদকেও কাগুজে, অকার্যকর লেখায় পরিণত করা যাবে না। যেকোনো মূল্যে জুলাই সনদকে কার্যকর করতে হবে। এটি আগামী সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, ক্ষমতায় গিয়ে সবাই ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থার প্রতিশ্রুতি ভুলে যায়—৭২-এর বিশেষ ক্ষমতা আইন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। সুতরাং জুলাই সনদ অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য অধ্যাদেশ, রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ঘোষণা কিংবা অন্য যেকোনো কার্যকর প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে। সংবিধান-সংক্রান্ত আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাম্প্রতিক বৈঠকে আমরা স্পষ্ট করেছি—বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ‘জুলাই সনদ’-কে কেন্দ্রীয় ভূমিকা দিতে চায়। সনদে প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো অবিলম্বে ও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতীয় সংস্কার যদি কেবল কাগজে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তা অর্থহীন হবে এবং দেশের রাজনৈতিক সংকট ও অনৈতিক প্রভাব অব্যাহত থাকবে। তাই জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারী ২০২৬ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবী জানাচ্ছি। দ্বিতীয় দাবি: আওয়ামী লীগের দোসর ও আধিপত্যবাদী ভারতের এদেশীয় এজেন্ট—জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ। জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল হলো এদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদের এজেন্ট এবং আওয়ামী লীগের দোসর। এরা বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যেই গণমাধ্যমে ভারতের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে অনীহার কথা জানিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৬ বছর এরা ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে স্বৈরাচারী হাসিনার সঙ্গ দিয়েছে। খুন, গুম, দুর্নীতিতে নিজেদের শামিল রেখেছে। এখন আবার এদের ঘাড়ে ভর করে পলাতক আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত শুরু হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের স্বার্থে এই দলটিকে রাজনৈতিক মাঠে রাখা যৌক্তিক নয়। আমরা পুনর্ব্যক্ত করছি—জাতীয় পার্টি সহ ১৪ দলের রাজনীতি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে। তৃতীয় দাবি: আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার ক্ষেত্রে একটি দলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এটি লেভেল প্লেইং ফিল্ডকে নস্যাৎ করতে পারে। আমরা মনে করি—যা হওয়ার হয়েছে; আগামী দিনের সরকারের কোনো কার্যক্রমে যেন কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রকাশ না পায়। চতূর্থ দাবি: জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা। পঞ্চম দাবি: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন। সংস্কার প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি—বিদ্যমান নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন ঘটে না। এজন্য আমরা পূর্বেই সংসদের নিম্নকক্ষে এমএমপি (মিক্সড-PR) এবং উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ঐকমত্য কমিশনে আমরা লক্ষ্য করেছি, এ বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। মতভিন্নতা কমানোর জন্য নিম্নকক্ষে MMP বাস্তবায়নের দাবি আপাতত ছাড় দিচ্ছি। বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় নিম্নকক্ষ গঠিত হতে পারে। কিন্তু উচ্চকক্ষ কোনোভাবেই পিআর ছাড়া গঠন করা যাবে না। PR পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠিত হলে সংসদীয় রাজনীতিতে কার্যকর রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ বাড়বে, জনমতের মূল্যায়ন নিশ্চিত হবে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। আমরা বারবার বলেছি—পিআর ছাড়া উচ্চকক্ষ গঠিত হলে তা কেবল ‘বেকার পুনর্বাসনের উচ্চকক্ষ’ হবে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস দৃঢ়ভাবে মনে করে—সকল দলের অংশগ্রহণ ও সম্মিলিত মতামতের প্রতিফলন নিশ্চিত করাই সরকারের প্রকৃত লক্ষ্য হওয়া উচিত। কর্মসূচি এসএকে/ |