ছোটকাল থেকেই বাচ্চাদের জিদ নিয়ন্ত্রণের ১০ কৌশল
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০২:১২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

|| মো. মোসাব্বির রাহমান ||

বাচ্চাদের বেড়ে ওঠার স্বাভাবিক অংশ হলো জিদ করা। নতুন কিছু চাওয়ার প্রবল ইচ্ছা বা নিজের মত প্রকাশের মাধ্যম হিসেবেই তারা অনেক সময় জেদ ধরে বসে। তবে অভিভাবকদের জন্য এই পরিস্থিতি সামলানো সহজ নয়।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, জোরাজুরি বা বকাঝকা করে জিদ কমানো যায় না বরং এতে শিশু আরও একগুঁয়ে হয়ে ওঠে। তাই ধৈর্য ধরে তার কথা শুনতে হবে। যদি জিদ যুক্তিযুক্ত হয়, যেমন খেলাধুলা করতে চাওয়া বা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে চাওয়া, তবে তা মেনে নেওয়া উচিত। আবার যদি জিদ ক্ষতিকর হয়, যেমন মোবাইল গেম দীর্ঘসময় খেলা বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জেদ, তবে শান্তভাবে না করার কারণ বুঝিয়ে বলতে হবে।

সঠিক দিকনির্দেশনা, ভালোবাসা এবং ধৈর্যের মাধ্যমে বাচ্চাদের জিদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যা তাদের চরিত্র গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

১. শান্ত থেকে কথা বলুন
কৌশল: বাচ্চা জেদ করলে চিৎকার না করে শান্তভাবে বলুন, “আমি তোমার কথা বুঝতে চাই, কিন্তু আগে একটু শান্ত হও।”
উদ্দেশ্য: এতে বাচ্চাও ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়।

২. মনোযোগ দিয়ে শুনুন
কৌশল: তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলুন, ‘তুমি কি কিছু বলতে চাও?’
উদ্দেশ্য: সে বুঝবে, তার অনুভূতি আপনি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।

৩. অন্য বিকল্প দিন:
কৌশল: সে যদি আইসক্রিম চায়, আপনি বলুন, ‘আইসক্রিম নয়, কিন্তু তুমি ফল বা দই পেতে পারো, কোনটা খাবে?’
উদ্দেশ্য: এতে বাচ্চা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সে নিজেকে সিদ্ধান্তের অংশ মনে করে।

৪. নিয়ম তৈরি করুন, শাস্তি নয়
কৌশল: আগে থেকেই বলুন, ‘টিভি দেখার সময় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত, এরপর আর নয়।’
উদ্দেশ্য: এতে সে জানবে কোন কাজ কখন করতে হবে।

৫. জেদের পেছনের কারণ বুঝুন
কৌশল: হয়ত সে ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত বা ঘুমাচ্ছে না। এমন সময় সহজেই জেদ বাড়ে।
উদ্দেশ্য: তার আবেগ ও শারীরিক অবস্থা বুঝে প্রতিক্রিয়া দিন।

৬. ভালো আচরণের প্রশংসা করুন:
কৌশল: সে শান্তভাবে খেলছে? বলুন, ‘তুমি আজ অনেক ভালো behaved করছো, খুব গর্ব হচ্ছে!’
উদ্দেশ্য: এতে ভালো আচরণ বাড়ে, জেদ কমে।

৭. ধৈর্য ধরে সময় দিন:
কৌশল: সে জেদ করলে কিছুক্ষণ একা থাকতে দিন বা বলুন, ‘আমরা পরে আবার কথা বলব।’
উদ্দেশ্য: একা থাকলে সে নিজে ঠান্ডা হতে শিখে।

৮. আদর দিয়ে বোঝান
কৌশল: বকা না দিয়ে জড়িয়ে ধরুন আর বলুন, ‘আমি তোমায় খুব ভালোবাসি, কিন্তু এইভাবে জোরে চিৎকার করা ঠিক না।’
উদ্দেশ্য: এতে সে ভালোবাসা থেকে শিখে, ভয় থেকে নয়।

৯. খেলনার মাধ্যমে শেখান
কৌশল: পুতুল বা গাড়ি দিয়ে নাটক করে শেখান: ‘এই পুতুলটা খুব জেদ করত, কিন্তু সে বুঝে গেছে কথা শুনলে কত ভালো হয়।’
উদ্দেশ্য: শিশুরা খেলতে খেলতে সবচেয়ে বেশি শিখে।

১০. নিজে ভালো উদাহরণ দিন
কৌশল: আপনি রেগে না গিয়ে ধৈর্য ধরলে, বাচ্চাও শেখে কিভাবে শান্ত থাকতে হয়।
উদ্দেশ্য: বাচ্চা সব সময় আপনাকে অনুকরণ করে।

এই কৌশলগুলো ধীরে ধীরে প্রয়োগ করলে বাচ্চার জেদ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে।

লেখক: মেন্টাল হেলথ অ্যাডভোকেট, প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী, Easfaa Meditech

এসএকে/