ক্ষুদ্র ডিএনএ-তে লুকানো বিশাল রহস্য: একেকটি কোষ যেন একেকটি গ্রন্থাগার
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:১০ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান

আমাদের শরীরে যে ক্ষুদ্র কণাগুলো গঠনের মূল ভিত্তি, সেগুলোর ভেতরেই লুকিয়ে আছে অবিশ্বাস্য এক বিস্ময়। মানবদেহের প্রতিটি কোষে থাকা DNA (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) শুধু জীবনের যাবতীয় তথ্য ধারণ করে না, বরং তার দৈর্ঘ্যও চমকে দেওয়ার মতো।

একটি কোষের DNA যদি সরলভাবে টেনে মেলে ধরা যায়, তাহলে তার দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২ মিটার। আর যদি দেহের প্রায় ৩৭ ট্রিলিয়ন কোষের প্রতিটি DNA মিলে একটানা রাখা হয়, তবে সেই দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১০০ বিলিয়ন কিলোমিটার, যা দিয়ে পৃথিবী থেকে সূর্য পর্যন্ত প্রায় ৬০০ বার আসা-যাওয়া করা সম্ভব!

এই পরিসংখ্যান কেবল সংখ্যার খেলা নয়—এটি একটি মহাবিস্ময়ের চিত্র। যেই DNA খালি চোখে দেখা যায় না, সেটির ভেতরে রয়েছে আমাদের গায়ের রং, চোখের গঠন, উচ্চতা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের রূপ পর্যন্ত গচ্ছিত। এটি যেন একটি মহাগ্রন্থ, যা প্রতিটি কোষে লিপিবদ্ধ।

নিঃসন্দেহে, মানব DNA-র এই বিস্ময়কর গঠন ও গূঢ় জটিলতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—এ বিশ্ব কোনো কাকতালীয় বা অরাজকতার ফল নয়। বরং প্রতিটি অনু-পরমাণু, প্রতিটি জিন, প্রতিটি কোডের পেছনে রয়েছে এক সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার নিখুঁত পরিকল্পনা।

একটি কোষে থাকা ক্ষুদ্র DNA-তে যদি এত সুসংবদ্ধভাবে জীবনযাত্রার সম্পূর্ণ নির্দেশনা লিপিবদ্ধ থাকে, তবে ভাবুন তো, কে সেই লেখক? কে এমন করে জীবনের প্রতিটি ধাপ পূর্ব নির্ধারিত করে দিয়েছেন?

বিজ্ঞান হয়তো তার কাঠামো বিশ্লেষণ করতে পারে, কিন্তু এর সৃষ্টির উদ্দেশ্য, সৌন্দর্য ও গভীরতা অনুভব করা যায় একমাত্র বিশ্বাসের আলোয়। 

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন:“তিনিই সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন সবকিছু এবং তা সুচারুভাবে নির্ধারণ করেছেন।”— (সূরা আল-ফুরকান, ২৫:২)

DNA-র প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি কোড যেন সেই অলেখা স্রষ্টার এক জীবন্ত স্বাক্ষর—যিনি ক্ষুদ্র কণার ভেতরেও রেখেছেন অসীমের ইশারা।

DNA-কে বলা হয় জীবনের ‘ব্লুপ্রিন্ট’—যার প্রতিটি অনুচ্ছেদ, প্রতিটি অণু নির্ধারণ করে আমাদের জীবনচক্রের দিকনির্দেশনা। আধুনিক জীববিজ্ঞান গবেষণা, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ক্রিস্পার প্রযুক্তি—সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই DNA।

বিজ্ঞান আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে, কেবল বিশাল কোনো গ্রহ, নক্ষত্র বা গ্যালাক্সিতেই বিস্ময় নেই—ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার ভেতরেও রয়েছে মহাবিশ্বের মতোই বিস্ময়, গঠন, রহস্য ও সৌন্দর্য।

এ যেন এক অলৌকিক ভারসাম্য—ক্ষুদ্রের ভেতরে অসীমের অস্তিত্ব!

আরএইচ/