
| 	
        
			
							
			
			  আমাদের নবীজী: নবীপ্রেমের প্রথম পাঠ  
			
			
	
			
										প্রকাশ:
										২৮ আগস্ট, ২০২৫,  ০১:১৩ দুপুর
					 
			
			
			
			নিউজ ডেস্ক  | 
		
			
			
			
			
			 
	   
	      
 সাবের চৌধুরী ঢাকার মেশক প্রকাশন থেকে শ্রদ্ধেয় লেখক মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন-এর সদ্য প্রকাশিত ‘আমাদের নবীজি’বইটির তিনটি কপি অত্যন্ত আগ্রহের সাথে সংগ্রহ করি। আগ্রহের প্রধান কারণ দুটো: ১. এটি কিশোর উপযোগী একটি সীরাতগ্রন্থ। অনেক দিন ধরে এমন একটি সীরাতগ্রন্থের সন্ধানে ছিলাম, যেটি আট থেকে ষোলো বছর বয়সী কিশোর তরুণদের উপযোগী, পূর্ণাঙ্গ সীরাতের বিবরণ সম্বলিত, যেটি লিখবেন সমকালের কোনো বিজ্ঞ আলেম, সীরাত বিশেষজ্ঞ এবং একই সাথে গদ্য শিল্পীও। আমাদের নবীজি মূলত এমনই একটি সীরাতগ্রন্থ। ২. দ্বিতীয় কারণটি হলো, বইটি যিনি লিখেছেন, তিনি আমার উস্তায। অনেকগুলো বছর আমি তার ইলমি দস্তরখানে বসে ইলম অর্জন করেছি। দীক্ষা নিয়েছি। ফলে আমি জানি, তিনি শুধু সীরাত গবেষক নন; গভীরতর একজন নবীপ্রেমিক মানুষ। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা তার অস্থি মজ্জায় মিশে আছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম মুবারকে জবানে আসলে শ্রদ্ধায় আবেগে ভালোবাসায় তার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়, চোখ কাঁপতে থাকে এবং গলার স্বর রুদ্ধ হয়ে আসে। গভীর ইলম, দীর্ঘ সাধনা ও সাহিত্য সংবেদনা—এ তিনটির সমন্বয় ঘটলে একটি সুন্দর ফুল ফুটে। ইলম সীরাতের বিশুদ্ধ বিবরণকে নিশ্চিত করে। সীরাতের স্পর্শকাতরতার দাবি অক্ষুণ্ণ রাখে। বিবরণ ও বিশ্লেষণে শরীয়তের মেজাজ ও দৃষ্টিভঙ্গির লাজ রক্ষা করে। দীর্ঘ সাধনা বিশুদ্ধতাকে রক্ষার পাশাপাশি কিশোরদের বয়স উপযোগী করে ঘটনা, বিষয় ও বিবরণ চয়নের বিষয়টিতে সুন্দর একটি পরিমিতি ও সুসঙ্গতি দান করে। আর, সাহিত্য সংবেদনা শব্দ ও বাক্যকে ঐশ্বর্যশীল করে। কিশোরদের মনস্তত্ত্ব অনুযায়ী গাল্পিক ভঙ্গিতে সত্য ভাষণ নির্মাণে পারঙ্গমতা দেয়। এর সাথে এসে যখন মিলিত হয় গভীরতর নবীপ্রেম, তখন এ থেকে ওঠে আসা শব্দ বাক্যগুলো ভাষার সাধারণ সীমানা পেরিয়ে হয়ে ওঠে জীবন্ত, শক্তিশালী ও প্রভাব বিস্তারকারী। এমন বিবরণ থেকে একটি কিশোর যেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আধ্যাত্মিক সাহচর্য লাভ করে। নবীজির ভালোবাসার তার হৃদয় জমিনে সবুজ সতেজ সুগন্ধি ঘাসের মতো অংকুরিত হয়। মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন লিখিত আমাদের নবীজি ঠিক তেমনই একটি গ্রন্থ। বইটির পৃষ্ঠাসংখ্যা ৩৭২. নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম থেকে ওফাত পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ সীরাত। ধারণা করি, বইটিতে লেখকের মূল উদ্দেশ্য ছিল সহজ ভাষায় একসাথে পূর্ণ সীরাতের সাথে কিশোরদেরকে সহজভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। এ কাজটি করতে হলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে ঘটে যাওয়া অজস্র ঘটনা থেকে অত্যন্ত পরিমিতির সাথে মৌলিক বিষয়গুলো বাছাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বইয়ে সে কাজটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিবরণ সাবলীল ও গতিশীল। দৃশ্যগুলো ধারাবাহিক। প্রলম্বিত গভীর ও গম্ভীর বিশ্লেষণ দিয়ে ভারী করা হয়নি। কিন্তু কোনো জায়গা, ঘটনা বা বিষয়কে তাদের বোধগম্যতার আওতায় আনার জন্য এবং কিশোরদের স্বাভাবিক কৌতুহল নিবারণ করে বিষয়টিকে একদম কাছ থেকে অবলোকনের জন্য সহজ ও পরিমিত বিশ্লেষণ রয়েছে, অল্প করে ভূমিকা টানা হয়েছে, কিন্তু সহনীয় ভঙ্গিতে, গল্পসুলভ শব্দ ও বাক্যে। কিশোর রচনার ক্ষেত্রে সাহিত্যের স্বাভাবিকতা নষ্ট করে যে বিষয়গুলো, এর মধ্যে অন্যতম বোধ করি সম্বোধনের প্রাচুর্য, ভাষার অতি মিষ্টতা, অতি আদুরে আবেগের প্রকাশ, ঘন ঘন উপদেশ প্রদান এবং নিতান্ত শিশুদের উপযোগী শব্দ ও বাক্যের ব্যবহার। ‘আমাদের নবীজি’ এ সমস্ত ত্রুটি থেকে মুক্ত থেকে এটি হয়ে ওঠেছে কিশোরদের জন্য একটি অবাধ ও সহজ বিচরণক্ষেত্র, আনন্দময় মুক্তাঞ্চল। এখানে শিক্ষাগুলো সুন্দর করে পরিবেশন করা হয়েছে, কিন্তু অনাগ্রহ তৈরীকারী শেখানোর সেই প্রবণতাটি নেই। এর ভাষা সহজ সাবলীল। রচনার স্বাভাবিকতা, গল্পের আমেজ, প্রাত্যহিক জীবন যাপনে ব্যবহৃত সহজ কথামালা আবার সাহিত্যের সুবাস—সব একত্র হয়ে অদ্ভুত সুন্দর একটি ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছে। বাক্য ছোট ছোট, স্বাভাবিক। সব কিছু ছাড়িয়ে যে জিনিসটি বিশেষভাবে নজরকাড়ে, তাহলো পুরো বইয়ের শরীরজুড়ে যেন একটা সহজ সুন্দর আলো ছড়িয়ে আছে। এটি পাঠকমনে সামগ্রিক যে বোধটি নির্মাণ করে তা হলো, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন মানে ইতিবাচকতা, আশাময়তা, নির্মাণ, পবিত্র আবেগ নিয়ে মানবিকতার দিকে এগিয়ে যাওয়া এবং পার্থিব সকল কিছুর উর্ধ্বে ওঠে আল্লাহর ভালোবাসায় নিজেকে সমর্পন করা। লেখক: কথাশিল্পী, চিন্তক ও মাদরাসা শিক্ষক আরএইচ/  |