ঋতুরাজ শরৎ: মানুষ ও প্রকৃতির উচ্ছ্বাস
প্রকাশ: ২২ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:০৩ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

|| মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন ||

ঋতুরাজ শরৎ মানুষ ও প্রকৃতির মননে উচ্ছ্বাস বোনা এক আরাধ্য ঋতু। ঋতু যায়, ঋতু আসে সময়ের ভেলায় ভেসে। মহাকালের পদক্ষিণে প্রতিটি ঋতু ফিরে আসে এক বৈচিত্রময় নতুনত্বের আমেজ নিয়ে, নিবেদন করে লাস্যময়ী প্রকৃতির লালসার জঠরে।

বাংলাদেশসহ বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে বছরের ছয় ঋতুর গভীর গুরুত্ব রয়েছে। জীবনের ব্যস্ততা, কর্মব্যস্ততার মধ্যে মানুষ প্রায় অজান্তে প্রকৃতির ছন্দের সাথে মিলেমিশে যায়। ছয় ঋতু মানুষের জীবনাচার, রুচি, ভাবনা, দর্শন ও মানসিকতায় প্রভাব ফেলে। অর্থনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি—সব ক্ষেত্রেই ঋতুর গুরুত্ব অপরিসীম।

বর্ষার বিদায়ী রিমঝিম শেষে শরৎরানী—শরৎ—মানুষ ও সৃষ্টির মননে শান্ত, প্রাণবন্ত আমেজ নিয়ে অবতরণ করে। বর্ষার ক্লান্তি ও বৃষ্টির বিদায়ের সঙ্গে ভাদ্র-আশ্বিন ঋতু মানুষের অন্তরে এক নবোদ্যমের সঞ্চার করে।

শরতের প্রতিটি ভোর নতুন রূপে আসে। কখনো কুয়াশার চোখ মণিমুক্তার মতো চকচক করে, কখনো ঝিরঝির বাতাসের ফাঁকে শান্ত বৃষ্টির ধারা নামে। পল্লবিত পত্রশাখা, কুসুমিত বাহারি ফুল—সবই শরতের সৌন্দর্যকে প্রকাশ করে। হিমশীতল বাতাসে গাছের পাতাবাহার দুলে, পাখির জিকির ভোরের শান্তি আনে। শিউলি ফুলের সাদা গালিচা পথচলায় নবোদ্যম ও কর্মস্পৃহা জাগায়। ফসলের মাঠ সবুজাভ মানচিত্রের মতো দৃশ্যায়ন হয়, দিনের রোদ ও রাতের হিমশীতল বাতাস মানুষের মনের প্রশান্তি সৃষ্টি করে।

শরতের সৌন্দর্যে শিউলি, শাপলা, জারুল, জুঁই, জবা, কামিনী, মালতী ও কাশফুলের সুবাস মিশে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ গড়ে তোলে। নদীর বিলে কাশফুলের দোল, নির্মল আকাশের নীলিমা বা মেঘের সাদা চাদর—সবই শরতের আবহমান সৌন্দর্যকে তুলে ধরে। কৃষকের ধানের ফসল পেকে ওঠে, তীর্থের কাকের মতো তাকানো কৃষকের মন ফিরে পায় স্বস্তি।

শরৎ মানুষের মনে নবোদ্যম সঞ্চার করে, প্রকৃতির সমস্ত প্রাণে উচ্ছ্বাস বোনে। তাই ঋতুরাজ শরৎ শুধু একটি ঋতু নয়—এটি মানুষের অন্তরে এবং প্রকৃতির ছন্দে আনন্দ ও প্রাণবন্ততার প্রতীক।

লেখক: কবি ও লেখক

এসএকে/