রাখাইনে জোরালো হচ্ছে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা
প্রকাশ:
১৬ আগস্ট, ২০২৫, ১০:১৪ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ভয়াবহ খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করেছে, দ্রুত পর্যাপ্ত সহায়তা না পেলে পরিস্থিতি ‘পূর্ণাঙ্গ বিপর্যয়ে’ রূপ নিতে পারে। ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, রাখাইনে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এদের মধ্যে রয়েছে ২০১২ সালের সংঘর্ষে সর্বস্ব হারানো প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধে অর্থনীতি ধসে পড়লেও সামরিক অবরোধের কারণে রাখাইনের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খাদ্যাভাব মানুষের হতাশাকে আরও তীব্র করে তুলছে। গত এপ্রিলে সিত্তে শহরের এক আশ্রয় শিবিরে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেন এক ব্যক্তি। একইভাবে জুনে মারা যান এক রাখাইন পরিবারের পাঁচজন। সম্প্রতি অভাব সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন এক বৃদ্ধ দম্পতি। তহবিল ঘাটতিই মূল সংকট। চলতি বছর ডব্লিউএফপির বৈশ্বিক তহবিল আগের বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ কমে গেছে। ফলে মিয়ানমারে তীব্র খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের মাত্র ২০ শতাংশকে সহায়তা করা সম্ভব হচ্ছে সংস্থাটির। এ অবস্থায় মার্চ মাসে রাখাইনে সহায়তা কমাতে বাধ্য হয় ডব্লিউএফপি। ২০২৩ সালে সামরিক জান্তা সরকার আরাকান আর্মির সরবরাহ লাইন বন্ধ করতে রাখাইনের সব বাণিজ্য ও পরিবহন রুট বন্ধ করে দেয়। এখন সিত্তে শহরে পৌঁছানো যায় কেবল সমুদ্র ও আকাশপথে। স্থানীয় কৃষকরা মাঠে কাজ করতে পারছেন না, রোহিঙ্গাদের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে জনপদটির আয়ের পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এক আশ্রয় শিবিরের বাসিন্দা জানান, “বাইরে যাওয়া যায় না, কাজ নেই। জিনিসপত্রের দাম পাঁচগুণ বেড়েছে। আয় না থাকায় অনেকে সেদ্ধ কচু ও লতাপাতা খেয়ে বেঁচে আছে।” এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সামরিক বাহিনীতে জোরপূর্বক নিয়োগ। যে পরিবার কোনো পুরুষকে বাহিনীতে পাঠাচ্ছে না, তাদের অর্থদণ্ড গুনতে হচ্ছে। ডব্লিউএফপি বলছে, রাখাইনের সব সম্প্রদায়ই গভীর অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে। অনেক পরিবার ঋণ করছে, ভিক্ষা করছে, সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ করছে–এমনকি মানব পাচারের শিকারও হচ্ছে। সংস্থাটি কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের ৮৭ শতাংশ ইউএসএইড তহবিল কমানো পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলেছে। গত বছর একাই যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউএফপিকে প্রায় ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছিল। জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই রাখাইনে ‘আসন্ন দুর্ভিক্ষ’ বিষয়ে সতর্ক করেছিল। গত বছরের নভেম্বরে দেওয়া সেই সতর্কবার্তার ৯ মাস পরও তহবিল ঘাটতি পূরণ হয়নি। নতুন করে সাহায্যের আবেদন জানানো চলমান সংকটের ভয়াবহতা স্পষ্ট করছে। সূত্র: বিবিসি এসএকে/ |