আলেম লেখকদের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের হালচাল
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট, ২০২৫, ০২:১৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

|| আমিন আশরাফ ||

পুরান ঢাকার বাংলাবাজারকে বলা হয় বইয়ের রাজধানী। নানা রকম বইয়ের এক রঙিন ভুবন। সেখানকার ধূলোতেও যেন বইয়ের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে। 

বাতাসের ঝাপটায় হাজারও ইতিহাস যেন হেঁটে বেড়ায়। ইথারে ইথারে ভেসে ওঠে হাসি-কান্নার এক অজানা অধ্যায়। ইসলামি ধারার আলোচিত কয়েকজন গুণী লেখকও বই প্রকাশনায় এগিয়ে এসেছেন। বই লেখার পাশাপাশি এখন প্রকাশনা ব্যবসাতেও তারা মনোযোগ দিয়েছেন।

বাংলাদেশে ইসলামি ধারার লেখালেখির অঙ্গনে লেখক থেকে প্রকাশ হয়ে ওঠার গল্প বললে সবার আগে যাঁর নাম আসে তিনি হলেন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ.। ইসলামি সাহিত্যের এই বরপুত্র লেখক হিসেবে যেমন সফল তেমনি প্রকাশনা জগতেও রেখেছেন কৃতিত্বের ছাপ। ২০১৬ সালে চলে যাওয়া এই খ্যাতিমান মনীষীর প্রতিষ্ঠিত মদীনা পাবলিকেশন্স তাঁর ছেলেরা দেখভাল করছেন। আগের সেই জৌলুস না থাকলেও চলছে ভালোই। 

ইসলামি ধারার লেখালেখির অঙ্গনে এক অবিসংবাদিত নাম মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ। এসো আরবী শিখি ও বাংলা পত্রিকা পুষ্পের মাধ্যমে যাঁকে বাংলা মুলুকের মানুষজন চিনে ও জানে। শুরুতে তাঁর বইপত্র অন্যেরা প্রকাশ করলেও একটা পর্যায়ে তিনি নিজেই গড়ে তোলেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। সাবাআ সানাবিল ও দারুল কলম কওমি অঙ্গনে বেশ পরিচিত নাম। বর্তমানে দারুল কলমের বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। শিশুসাহিত্যের পাশাপাশি তাঁর লিখিত দরসি কিতাবাদিও কওমি মাদরাসার ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়।

কথাশিল্পী মুহাম্মাদ যাইনুল আবিদীন বহু বছর ধরে লেখালেখি করছেন। বছর-তিনেক আগে তিনি প্রকাশনা ব্যবসা খুলেছেন। প্রথমে দুটি বই দিয়ে তাঁর নিজস্ব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন করেন। নামÑমেশক প্রকাশন। শুরুতে দুটি বই বাজারে এনেছেন। তারপর ধাপে ধাপে আরও ছয়টি বই প্রকাশ করেছেন। এবারের রবিউল আউয়ালে তাঁর একাধিক বই আসার কথা। সব বইই তাঁর নিজের লেখা। আরও বেশকিছু বই প্রকাশের অপেক্ষায়। প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ভালোই চলছে বিশিষ্ট এই কথাশিল্পীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। 

বাংলাবাজারের ৬৫/১ প্যারিদাস রোডের কওমী মার্কেটের তৃতীয় তলার একই ফ্লোরে ‘কানন’ নামে আরও একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার স্বত্বাধিকারী, বিশিষ্ট অনুবাদ ও শিশু সাহিত্যিক ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী। তিনিও একজন পাঠকপ্রিয় লেখক। তিনি বেশ কয়েক বছর আগেই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান খুললেও তাতে নিয়মিত ছিলেন না। ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে কওমী মার্কেটে নিজস্ব আউটলেট কিনে তাতেই তার নিজের বইয়ে পসরা সাজিয়েছেন। সময় যত গড়াচ্ছে তাঁর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানও সমৃদ্ধ হচ্ছে। 

লেখক হওয়ার পাশাপাশি প্রকাশনাতেও সফলতা লাভ করেছেনÑ এমন একজন হলেন মাওলানা নাসীম আরাফাত। একটা সময় বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর অনূদিত উপন্যাস প্রকাশিত হতো। পাঠকরা প্রতি মাসে তাঁর লেখার অপেক্ষায় থাকতো। নিজের লিখিত অনেক পাঠকপ্রিয় বইয়ের প্রকাশকও তিনি। তাঁর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নাম-মাকতাবাতুল হুদা। তাঁর লিখিত ও অনূদিত দরসি ও গায়রে দরসি বইসমূহ জ্ঞানপিপাসু ছাত্রদের কাছে খুবই সমাদৃত।

মাওলানা মুহিউদ্দীন। নব্বইয়ের দশকে জাগো মুজাহিদের সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর লেখা ও অনুবাদ এক শ্রেণির পাঠকের কাছে তুমুল জনপ্রিয় ছিল। তিনিও একজন লেখক হওয়ার পাশাপাশি প্রকাশকও। তাঁর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নাম পরশমণি। সেখান থেকে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু বই। 

শাকের হোসাইন শিবলী। ‘আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে’ প্রামাণ্য গ্রন্থ লিখে তোলপাড় সৃষ্টি করেন এই আলেম সাংবাদিক। তিনি এখন পুরোদস্তুর একজন প্রকাশক। ‘মাহফিল’ ও ‘দিলরুবা’ নামের প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যত্ন করে বইপত্র প্রকাশের কাজেই তিনি নিজেকে পুরোপুরি সোপর্দ করে দিয়েছেন। তাঁর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক।  

তরুণ আলেম লেখকদের অনেকেই গত কয়েক বছরে প্রকাশনা ব্যবসায় এসেছেন। তাদের একজন সাবেত চৌধুরী। ‘কাতেবিন’ নামে তিনি একটি প্রকাশনী গড়ে তুলেছেন। অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রকাশক হওয়া এতোটা সহজ বিষয় নয়, পথটা অনেক কঠিন ও কন্টাকাকীর্ণ। তবে একজন লেখকের যেহেতু প্রকাশনা জগৎ সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা থাকে এজন্য অন্য যে কারও চেয়ে আমি মনে করি লেখকের প্রকাশক হয়ে ওঠা সহজ। 

লেখক থেকে প্রকাশক হয়ে ওঠার তালিকাটি দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। তবে এই প্রকাশক হয়ে ওঠার গল্পটা অনেকের ক্ষেত্রে সুখকর নয়। কেউ কেউ শখের বশে এই জগতের সঙ্গে জড়ালেও বেশির ভাগই প্রকাশকদের সঙ্গে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে নিজেই বাধ্য হয়ে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। লেখকরা শিল্পের এই জগতকে সমৃদ্ধ করতে ব্যাপক হারে প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত হোন- কিন্তু কেউ যেন বঞ্চনার শিকার হয়ে এই অঙ্গনে না আসেন-সেই প্রত্যাশা রইল। 

লেখক: তরুণ লেখক ও অনুবাদক

[লেখা ও লেখকের কথা নিয়ে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক সাময়িকী লেখকপত্রের ২৫তম সংখ্যার সৌজন্যে লেখাটি প্রকাশিত হলো]

এসএকে/