কওমি শিক্ষার্থীদের আবেদনেরই সুযোগ রাখেনি রাষ্ট্র, এইটা বৈষম্য
প্রকাশ:
০৪ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:৩২ সকাল
নিউজ ডেস্ক |
![]()
|| মনযূরুল হক || কওমিপড়ুয়াদের রাষ্ট্রীয় কর্মসংস্থানের সুযোগের কথা যখনই বলি, তখন ভেতর থেকে প্রথম যে অ্যাটাকটা হয়, তা হলো, আমরা তো চাকরির জন্য পড়ি না, পড়ি আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য। আমরা কেন চাকরির সুবিধার জন্য আন্দোলন করব? সত্যিকার অর্থে এই প্রশ্নের কোনো জবাব নাই। যদিও পাল্টা অনেক কথাই বলা যায়। অথবা এটাও বলা যায়, যারা চাকরি করছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আলেমগণ যারা সরকারের বড় বড় পদে আছেন, বাংলাদেশের দুই চার-জন অধ্যাপক যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন, বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আবদুল মালেকের মতো যারা আছেন, কিংবা মুসলিম যুগে ইমাম আবু ইউসুফের মতো যারা বিচারকের পদ অলঙ্কৃত করেছেন, আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন যে, তারা আল্লাহর রেজামন্দির জন্য পড়েন নাই? তারা খালেস নিয়তে পড়েও যদি পরবর্তী সময়ে সরকারের বেতন-ভাতা নিতে পারেন, আপনি কেন এটাকে সমস্যার মনে করছেন? নাকি ভাবছেন দুনিয়া আপনার মুখের সামনে এসে বসে থাকবে? এতটা পরহেজগারিতা কি সত্যিই আমাদের আছে? তৃতীয়ত, আধুনিক যুগে সরকারি-বেসরকারি চাকরি করা মানে গোলামি করা না। যদিও আমাদের শিক্ষকরা মাদরাসার বাইরে কোথাও চাকরি করি শুনলে বলতেন, চাপরাশি হয়েছো? মাদরাসায় পড়ানোটা তাদের ভাষায় খেদমত। মসজিদের ইমাম হওয়াটাও তা-ই। আমি তাদের বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, বেশির ভাগ মাদরাসা ও মসজিদের ‘খেদমত’র পরিস্থিতি সরকারি-বেসরকারি চাকরির তুলনায় কম ভয়াবহ নয়। ইমামগণ থাকেন কোথাও কোথাও ছাপোষা কর্মচারীর মতো, মাস শেষের মাইনে দ্বারে দ্বারে গিয়ে করুণ স্বরে তুলতে হয়। মাদরাসার প্রিন্সিপালরা বহু ক্ষেত্রে গার্মেন্টসের ফ্লোরম্যানদের চেয়েও কর্তৃত্ব খাটান। তা ছাড়া, সরকারি চাকরি মানে দেশসেবায় অংশ নেওয়া বটে। নাগরিকদের তাদের রাষ্ট্রীয় সুবিধা পৌঁছে দেওয়া, নিত্যদিনের জীবন যন্ত্রণা লাঘব করা, জনমানুষের প্রবলেম সলভ করা—এসব কি খেদমতের চেয়ে কম কিছু? এই সেক্টরে নৈতিক বলে বলীয়ান কর্মীর অভাব রয়েছে, তা তো সবাই স্বীকার করি। অন্তত সেই দিকে বিবেচনায় করেও কি ‘স্বস্বীকৃতি দুর্নীতিমুক্ত’ জনগোষ্ঠী হিসেবে আলেম সমাজকে এগিয়ে আসা উচিত না? আমার ছাত্রজীবনে কাকা প্রায়ই বলতেন, এইসব পড়ে কী করবি, চাকরি-বাকরি তো পাবি না। আমি গর্ব করে বলতাম, চাকরি তো চাই না, কারণ, চাকরির জন্য পড়ি না। কাকা বলতেন, চাইলেও কি কেউ দেবে তোমাকে?হ্যাঁ, উত্তরটা আসলে এখানেই। অর্থাৎ, কে চাকরির জন্য পড়ে, কে পড়ে না, সেটা তো রাষ্ট্রের দেখার বিষয় না। সুযোগ কেন থাকবে না? একটা জনগোষ্ঠী স্বাধীনতার অর্ধশতক ধরে এই দেশে একটা নির্দিষ্ট শিক্ষাধারায় পড়ালেখা করছে, অন্যদের চেয়ে মোটেও কম পড়ছে না? তাদের কেন রাষ্ট্রীয় বিপুল কর্মসংস্থানের কোথাও কোনো আবেদন করারও সুযোগ থাকবে না? এই ক্ষমতা রাষ্ট্রকে কে দিয়েছে? এইটা চরম বৈষম্য। রাষ্ট্রের কোনো ক্রাইটেরিয়াতেই তাদের আটকে রাখা যায় না, এটা অমানবিক। এই আধুনিক সময়ে রাষ্ট্রীয় নিয়ম-কানুন কেন যোগ্যতার বা মেরিটের ভিত্তিতে না হয়ে সার্টিফিকেট-সর্বস্ব হবে? তাহলে চাকরির আগে পরীক্ষা কেন নেন? পরীক্ষাই যেহেতু নিচ্ছেন, তাহলে আবেদন করার সুযোগ কেন সবার নাই? যে পরীক্ষায় টিকবে সে পাবে, যে টিকবে না, সে বাদ। কিন্তু এই রাষ্ট্র কওমি শিক্ষার্থীদের কোথাও কোনো চাকরিতে আবেদন করারই সুযোগ রাখছে না? এইটা বৈষম্য না? জাস্ট এই এইটার জন্য চাকরির সুবিধার কথা বলি, জাস্ট এই বৈষম্য ঘোচানোর জন্য। সুযোগ কেন থাকবে না? দ্যাট’স ইট। লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও চিন্তক এমএম/ |