প্রস্তাবিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে ইসলামি দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
প্রকাশ:
২৭ জুলাই, ২০২৫, ০৯:৩৮ রাত
নিউজ ডেস্ক |
![]()
|| মোহাম্মাদ হুজাইফা || রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সংশোধনে ঐকমত্য কমিশনের সাম্প্রতিক প্রস্তাবনা—‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’—নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষত ধর্মীয় ও বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বামপন্থী চারটি দল এই প্রস্তাবনাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেও কয়েকটি ইসলামি দল তাদের ভিন্নমত এবং পর্যালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে। এ নিয়ে কয়েকটি ইসলামী রাজতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছে আওয়ার ইসলাম। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত মূলনীতিগুলো মোটামুটি ঠিক আছে। এর মধ্যে আমি কোনো সমস্যা দেখি না। তবে পূর্বের চারটি মূলনীতি ছিল অন্য দেশ থেকে ধার করা এবং তার মধ্যে 'ধর্মনিরপেক্ষতা' ছিল। এটি ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই সেটি বাতিল করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ (৯২% মুসলমান), তাই সংবিধানের মূলনীতিতে ইসলামী ভাবধারাই প্রতিফলিত হওয়া উচিত। তিনি এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক সম্ভাবনার ইঙ্গিত বলেও উল্লেখ করেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফন্দী বলেন, ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের দলীয় প্রস্তাব হলো সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা থাকতে পারবে না। এখানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বাল করতে হবে। এই প্রস্তাব দেওয়ার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন স্পষ্ট ভাবে বলেছে, সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা বাতিল ও ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল’ এগুলো নির্বাচিত সংসদ করবে। এগুলো নিয়ে আজ আলোচনা হবে না। তবে আজ কমিশন যে প্রস্তাবনা গুলো দিয়েছে এগুলোর সাথে জমিয়ত একমত পোষণ করেছে। জমিয়ত মহাসচিব বলেছেন, তবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে এই রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসাবে নির্ধারণ করা উচিত, আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস। তবে ভিন্ন ধর্মালম্বীদের যেন অমর্যাদা না হয়, এবং তারা যেন স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারে এজন্য সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি যুক্ত করা যেতে পারে। খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, নতুন প্রস্তাবিত বিষয়গুলোর মধ্যে বড় কোনো সমস্যা নেই। ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলো যদি এগুলোকে গ্রহণযোগ্য মনে করে, তাহলে তা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা ইসলামী দল হিসেবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা চাই। কিন্তু দিন প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিই আপাতত আমাদের কার্যকর সিঁড়ি। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লা আমিন বলেন, কমিশনের প্রস্তাবিত বিষয়গুলো ঘুরেফিরে আগের চারটি মূলনীতির মতোই। তাই আমরা চাই পুরনো মূলনীতিতেই ফিরে যাওয়া হোক, তবে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে তার স্থানে 'আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' যুক্ত হোক। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া মোটামুটি ইতিবাচক হলেও তারা স্পষ্টভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বিষয়টিকে গ্রহণযোগ্য বলে মানছে না। তাদের দাবি, এই শব্দটি ইসলাম-বিরোধী এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের বাস্তবতা বিবেচনায় তা বাতিল করতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে গুরুত্বপূর্ণ এক বিতর্ক চলছে। ইসলামী দলগুলোর অবস্থান প্রমাণ করে, তারা ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ চায় এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এমএইচ/ |