খেলাফত মজলিসের ৬ দফা করণীয় ঘোষণা
প্রকাশ: ২৬ জুলাই, ২০২৫, ০৫:৪৭ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

ফ্যাসিস্ট ও সহযোগীদের বিচার ত্বরান্বিতকরণ, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠাসহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ছয় দফা করণীয় ঘোষণা করেছে খেলাফত মজলিস। 

শনিবার (২৬ জুলাই) এক ব্রিফিংয়ে দলটির মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের এসব করণীয় ঘোষণা করেন। 

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সেমিনার হলে দুপুর সাড়ে ১২টায় অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সভাপতিত্ব করেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ। 

লিখিত বক্তব্য পেশ করেন মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা অধিবেশনের বিরতিতে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক সিরাজুল হক, মাওলানা সাইয়্যেদ ফেরদাউস বিন ইসহাক, মুফতি আবদুল হামিদ, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, এবিএম সিরাজুল মামুন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মো. আবদুল জলিল, ডা. এ এ তাওসিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম, অধ্যাপক ড. আহমদ আসলাম, মাওলানা সামছুজ্জামান চৌধুরী, মাস্টার আবদুল মজিদ, অধ্যাপক মাওলানা এ এস এম খুরশীদ আলম, মাওলানা শেখ সালাহউদ্দিন, অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব আলম, বায়তুলমাল সম্পাদক আবু সালেহীন, সমাজকল্যাণ ও শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান ফিরোজ, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমিন সাদী, প্রচার ও তথ্য সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক প্রভাষক আবদুল করিম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রিফাত হোসেন মালিক, দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মুফতি শিহাবুদ্দীন, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাফেজ মাওলানা শায়খুল ইসলাম, উলামা বিষয়ক সম্পাদক মুফতি আলী হাসান উসামা, যুব বিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ ড. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ রায়হান আলী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পষিদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্যবৃন্দ।
খেলাফত মজলিস মহাসচিব লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আবেগ-উচ্ছ্বাস ও প্রবল প্রত্যাশা ছিল। একই সাথে জনমানসে অস্বস্তি, অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ ও হতাশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মতানৈক্য ও বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য রাজনৈতিক সৌন্দর্য। রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্কলহ, ঝগড়া-বিবাদ জনমনে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে সংশয়-শংকা সৃষ্টি হয়েছে। মব-এর ঘটনা সরকার ও রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর উস্কানীমূলক বক্তব্য ও আশালীন ভাষা ব্যবহার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পুরোনো ধারার প্রতিচ্ছবি বয়ে বেড়াচ্ছে। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। নতুন রাষ্ট্রকাঠামোর ব্যাপক সংস্কার করার চেষ্টায় নিজস্ব দর্শন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলের সংলাপ অব্যাহত রাখলেও মৌলিক সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগারে লিপ্ত রয়েছে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে, যে কোনো সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, ষড়যন্ত্রের সংশয় ট্রমা থেকে জাতি এখনো বের হতে পারেনি। ফ্যাসিস্ট পতিত শক্তির নানামুখী ষড়যন্ত্র প্রতিনিয়ত চলছে। ফ্যাসিস্ট বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থন থাকার পরও সরকার বিচারকে যেমন দৃশ্যমান করতে পারেনি, তেমনি প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ফ্যাসিস্ট দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে পারেনি। প্রতিবেশী দেশ অনৈতিকভাবে কেবল খুনি শেখ হাসিনা ও তার দলবলকে আশ্রয় দেয়নি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও নানা ষড়যন্ত্রের প্রত্যক্ষ মদদ যোগাচ্ছে। আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও দলের নেতা-কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির উপর হামলা করেছে এবং নানা ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক এই পরিস্থিতিতে খেলাফত মজলিস মনে করে:

১। আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে।
২। ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল খুন, গুম, গণহত্যা ও অপর্কমের দ্রত বিচার করতে হবে।
৩। দ্রততম সময়ের মধ্যে মৌলিক প্রয়োজনী সংস্কার সম্পন্ন করে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। অবাধ-নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৪। বাংলাদেশের জনগণ পতিত স্বৈরাচারী শক্তির পুনরুত্থান চায় না। সে ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে খেলাফত মজলিস মনে করে রাজনৈতিক ভিন্নমত, সমালোচনা ও প্রতিযোগিতা সৃজনশীল রাজনীতির অংশ। তবে বিভাজন, বিভেদ, প্রতিহিংসা ও পারস্পরিক অশোভন ভাষায় আক্রমন সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতি নয় বরং জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের কারণ হতে পারে।
৫। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামি শক্তির শক্তিশালী ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে ইসলামি দল ও মসলক সমূহের ঐক্যের উপর সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনের বিপরীতে একজনমাত্র প্রার্থী দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করছে।
৬। খেলাফত মজলিস এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগস্ট মাসের মধ্যে ৩০০ আসনে পর্যায়ক্রমে প্রার্থী ঘোষণার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইতোমধ্যে ১০০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

এমএইচ/