যারা আলেমদের মূর্খ ও নেশাখোর বলে তারা জ্ঞানপাপী: পীর সাহেব চরমোনাই
প্রকাশ:
২৫ জুলাই, ২০২৫, ০৮:১৪ রাত
নিউজ ডেস্ক |
![]()
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমির পীর সাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, একটি দলের নেতারা আমাদের বিরুদ্ধে বিষেদ্গার করেছে, অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেছে, এগুলো কোনো রাজনৈতিক শিষ্টাচার হতে পারে না। চাঁদাবাদি বন্ধ করতে বললে যদি গালাগাল করে তাহলে তাদের চরিত্র যে কতোটা নোংরা হয়ে গেছে, সহজেই অনুমেয়। তিনি বলেন, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে আমরা গর্বিত কারণ, তাদের চরিত্র ভোগবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর মতো নয়। ইসলামী যুব আন্দোলন বিপথগামী যুবকদেরকে দেশপ্রেম ও আদর্শ শেখায় পক্ষান্তরে অন্যান্য দলের যুবসংগঠন যুবকদেরকে খুন, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজি শেখায়। আমাদের যুব আন্দোলনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ নাই, এটা আমাদেরকে আনন্দিত করে। আজ শুক্রবার (২৫ জুলাই) বাদ জুমা বাইতুল মোকাররম উত্তর গেইটে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যুব জমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) এসব কথা বলেন। পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, একটি দলের সিনিয়র নেতারা বক্তব্যে আমাকে নিয়ে ব্যাঙ্গবিদ্রুপ করেছে, এটা তাদের প্রতিহিংসা। কারণ, আল্লাহর রহমতে আমরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছি, সংগঠনের মাধ্যমে দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। কুরআন শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে কয়েক হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দেশের মানুষের সাধারণ শিক্ষা ও ইসলামী আদর্শ শিক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা কোনোদিন মানুষের স্বার্থবিরোধী কাজ করিনি, সম্ভবত এটাই আদর্শবিবর্জিত দলগুলোর ভয়ের কারণ। পীর সাহেব চরমোনাই সকল দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অতএব আসুন, প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে, ক্ষমতার মোহ ছেড়ে আমরা দেশ প্রেমিক হই, দেশের কল্যাণে সবাই মিলে কাজ করি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ বলেন, ছাত্র ও যুবকদের বিশাল ত্যাগের মধ্যদিয়ে আমরা দোশটাকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছি, এখন চাঁদাবাদ মুক্ত করার জন্য যুবকদের আরো কোরবানী লাগবে। দেশ থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও ধর্ষক বিতাড়নের জন্য আদর্শ যুবকদের বিকল্প নেই। আগামীর বাংলাদেশকে সুখী, সমৃদ্ধ, কল্যাণরাষ্ট্র হিসেহে গড়ে তুলতে ইসলামই একমাত্র আদর্শ। সুতরাং সকল ইসলামী দলগুলো মিলে জনতার আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, জুলাই চেতনার বাস্তবায়ন, গণহত্যার বিচার, শহীদ পরিবারের পূনর্বাসন এবং বৈষম্যহীন ইনসাফভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র গড়ার দাবিতে এই যুব জমায়েত অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সুতরাং সরকারকে এই দাবিগুলো আমলে নিতে হবে। প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, সরকারের সংস্কার কমিশনের কিছু দফতর এই দেশের মানুষের বোধ ও বিশ্বাস বিরোধী প্রস্তাবনা দিয়েছে, এটা প্রত্যাশীত নয়। নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো এদেশের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। সুতরাং ঐক্যমত্য কমিশন যদি দেশের জনগণ ও অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের প্রত্যাশা পিআর পদ্ধতির বিকল্প কোনো পদ্ধতি চাপিয়ে দিতে চায়, সেই চেষ্টা ব্যর্থ হবে। মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান কোনো সাধারন ঘটনা নয়, এই অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে একটি দীর্ঘদিনের চেপে বসা ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করা হয়েছে। আওয়ামীলীগের উপর মানুষের বিরক্তির কারণ ছিল, তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছিল, বৈষম্য কায়েম করেছিল, চাঁদাবাজি ও ধর্ষণ করেছিল। অভ্যুত্থানের পর আবার একটি দল পতিত ফ্যাসিবাদের পথে হাঁটছে। চাঁদাবাদি, খুন, ধর্ষণ শুরু করেছে। তাদের প্রতিবাদ করার কারণে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বাজে কথা বলছে, আমাদেরকে নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। কিন্তু তাদের এই হুমকি ধমকিতে ইসলামী আন্দোলনের মতো আদর্শিক দল ভয় পায়না। এদেশের রাজনীতিতে আমাদের কোনো দুর্বলতা নাই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এদেশের শান্তিকামী মানুষের প্রিয় রাজনৈতিক দল। তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, একটি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিজেদের দেড় শতাধিক মানুষ খুন হয়েছে। তাদেরকে এদেশের মানুষ নিরাপদ মনে করে না। তারা অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি, নিজেদের চরিত্রের সংস্কার করতে ব্যার্থ হয়েছে। নেতাকর্মীরা তাদের নেতাদের কথা শোনে না। লন্ডন থেকে হুকুম দিয়ে, বহিষ্কার করেও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে ব্যার্থ হয়েছেন। অতএব, আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সকল শ্রেণী পেশার মানুষ ইসলামপন্থী দলগুলোকে বেছে নেবে ইনশাআল্লাহ। অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, একটি রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আমরা জনপ্রত্যাশার যে সরকার চেয়েছিলাম তা পাইনি। এই সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় খোলার অনুমতি দিয়ে দেশের মানুষের সার্বভৌমত্বের সাথে উপহাস করেছে। জাতিসংঘ একটি ব্যর্থ সংগঠন, তারা কোনো দেশে শান্তি কায়েম করতে পারেনি, বরং যে দেশেই তারা ঢুকেছে সেই দেশের স্বাধীনতার উপরে আঘাত করেছে। যুব জমায়েতে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল মুফতী মানসুর আহমদ সাকী ও জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল মুফতী রহমাতুল্লাহ বিন হাবীবের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আহমদ আবদুল কাইউম, কে এম আতিকুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, অধ্যাপক নাছির উদ্দিন খান, মুফতী রেজাউল করীম আবরার। যুবনেতা ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুহাম্মাদ মারুফ, প্রভাষক মাওলানা আল-আমীন, মাওলানা ইলিয়াস হাসান, মুফতী আবু বকর সিদ্দীক, মাওলানা আরিফ বিন মেহের উদ্দিন প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্যে আতিকুর রহমান মুজাহিদ বলেন, দেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় যারাই ক্ষমতায় ছিল, তারা পরিবারতন্ত্র ও আধিপত্যবাদের রাজনীতি করেছে, দেশের মানুষের জন্য কেউ রাজনীতি করেনি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশই ইসলাম, দেশ ও মানবতার জন্য কাজ করে। জুলাই আন্দোলনে ফ্যাসিবাদের পতনে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নেতাকর্মীরা অসামান্য কোরবানী করেছিল, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনেও আমরা অংশগ্রহন করেছি। চাঁদাবাজ, ধর্ষক ও রুখে দিতে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। ব্যাবসায়ীদের জানমালের নিরাপত্তা ও মা-বোনদের ইজ্জত আব্রুর নিরাপত্তার জন্য পাশে দাঁড়িয়েছে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ। সভাপতি তার বক্তব্যে যেসকল দলের নেতাকর্মীরা পীর সাহেব চরমোনাই ও ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে বিষোদ্গার করে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, শিষ্টাচার বহির্ভূত রাজনীতি ৫ই আগষ্টে শেষ হয়ে গেছে, এখন যদি কেউ রাদনীতির নামে নোংরা খেলায় মেতে ওঠে, তাদেরকে রাজপথে দেখে নেয়া হবে। তিনি বলেন, যদি প্রশাসন ব্যর্থ হয় তাহলে দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে চাঁদাবাজ, খুনী ও ধর্ষকদের উচিত শিক্ষা দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। আইএইচ/ |