মানবাধিকার কার্যালয়ের নামে সমকামিতা ও পশ্চিমা সংস্কৃতি বাস্তবায়ন করতে চায় জাতিসংঘ
প্রকাশ:
২৫ জুলাই, ২০২৫, ০৪:৩৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
বাংলাদেশে মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হিসেবে মন্তব্য করেছেন জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম। শুক্রবার (২৫ জুলাই) দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এসময় মাওলানা মনজুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন কোনো দরদ নয়, আন্তরিকতা নয়। এটা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলেন, অন্তবর্তী সরকারের কাজ ছিলো ফ্যাসিস্টের সহযোগিদের বিচার করা। কিন্তু সেটা না করে পশ্চিমাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে খেলা শুরু করেছে। অতীতে বৃটিশরা ২০০ বছর শাসন করেও আমাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। ইউনুসের ওপর ভর করে যদি আবার আমেরিকা চেপে বসতে চায় প্রয়োজনে জীবন দেবো কিন্তু স্বাধীনতা বিসর্জন হতে দেবো না। তারা আরও বলেন, আমাদের পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, মিয়ানমারসহ কোনো দেশে মানবাধিকার অফিস নেই। কেনো বাংলাদেশে মানবাধিকার অফিস স্থাপন করতে যাচ্ছে। দেশে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিতেই এই অফিস স্থাপন করতে যাচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী কোন চুক্তি আমরা মানতে পারিনা। দেশের জনগণ এ রকম চুক্তি করার কোন ম্যাণ্ডেট অন্তর্বর্তী সরকারকে দেয়নি। আমাদের পূর্বপুরুষেরা যে ভাবে বৃটিশকে তাড়িয়েছিল,আমরাও সে ভাবেই পশ্চিমা আধিপত্যবাদকে রুখে দিব ইনশাআল্লাহ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহারুদ্দিন জাকারিয়া বলেন, বাংলাদেশে কি এমন ঘটেছে যে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস স্থাপন করতে হবে। এ দেশে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা এই অফিসের কার্যক্রম মেনে নেবে না। গাজায় যখন বোমা মেরে শিশুদের হত্যা করা হয় তখন জাতিসংঘ কোথায় থাকে, হাসপাতাল, স্কুলে বোমা মেরে শিশু ও নারীদের হত্যা করা হয়, ভারতের কাশ্মিরে যখন মুসলিমদের হত্যা করা হয়, গরু রাখার অপবাদে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় তখন জাতিসংঘ কোথায় থাকে, মিয়ানমারে নিরীহ মুসলিমদের বাস্তুচ্যুত করা হয়, হাজার হাজার মানুষকে গণহত্যা করা হয় তখন তারা কোথায় ছিলো। তিনি আরও বলেন, সরকারকে বলতে চাই রক্তের বিনিময়ে আপনারা ক্ষমতায় বসেছেন। আপনাদের মাঝেই বৈষম্য দেখা যাচ্ছে। দুদিন আগে মাঝ রাতে চারটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই নাটক বন্ধ করেন। আমরা দেখেছি অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পরের দিন চিহ্নিত দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু আমরা কি অপরাধ করলাম। আমরা রক্ত দিয়েছি, গুলি খেয়েছি। আমাদের নেতারা শহিদ হয়েছে। কিন্তু আমাদের ডাকা হয় নি। মানবাধিকারের নামে কোনো করিডোর দেওয়া যাবে না। নারী কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সেই প্রতিবেদন বাতিল করতে হবে। না হলে আরেকটি সংঘর্ষ অনিবার্য। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম স্বাধীনতা যুদ্ধে দলটির অবদান তুলে ধরে বলেন, ২১ সালে মোদি বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় আমাদের এক ডজনেরও বেশি নেতা ফ্যাসিবাদী হাসিনার রোষানলে পড়ে কারাগারে গেছে। ২৪ এর জুলাইয়ে শুরুতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলো। তাই আধিপত্য ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সুদৃঢ়। দেশে অন্তবর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে। এই অস্থায়ী সরকার রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করে দেশ বিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এই সরকারকে প্রশ্ন করতে চাই, ড. ইউনুসের কাছে জানতে চাই, জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস গাজায় আছে। কিন্তু সেখানে ইসরায়েলের হায়নারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে, হাসপাতাল-মসজিদ গুড়িয়ে দেয় তখন নামকাওয়াস্তে বিবৃতি দিয়ে বসে থাকেন। সেখানে আপনারা বর্বরতা বন্ধ করতে পারেন নাই। গণহত্যা বন্ধ করতে পারেন নাই। এই মানবাধিকার কমিশনের ইতিহাস পক্ষপাতের ইতিহাস, পশ্চিমাদের কথিত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। কলম্বিয়ায় মানবাধিকারের কার্যালয়ে রয়েছে, সেখানেও পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে। ১৪০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর যুগের পর যুগ নির্যাতন চলছে সেখানে মানবাধিকারের কার্যালয় নেই, চীনের ইউঘুরে কার্যালয় নেই। রাশিয়া ইউক্রেনকে গুড়িয়ে দিচ্ছে সেখানে কার্যালয় নেই। কিন্তু বাংলাদেশে কার্যালয় স্থাপনের এতো দরদ উৎলে পরলো কেনো? ইসলামি দলটির এই নেতা আরও বলেন, এটা দরদ নয়, আন্তরিকতা নয়। এটা স্বাধীনত ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। জাতিসংঘের মূল দর্শন হলো তারা সমকামিতাকে, তারা ট্রান্সজেন্ডারকে মানবাধিকার বলে প্রচার করে। তারা ধর্মীয় অনুভূতিকে বাকস্বাধীনতার নামে প্রমোট করে। আমরা এগুলোকে মানবাধিকার বলি না। |